বিভাগ রাজনীতি

জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়ার কাছাকাছি গিয়েও হঠাৎ করে আটকে গেছে বিএনপি

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রায় কাছাকাছি গিয়েও হঠাৎ করে আটকে গেছে বিএনপি। কিন্তু কী কারণে এটি ঘটল তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না দলটির স্থায়ী কমিটির প্রায় সব নেতাই।

ফলে গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ওই প্রশ্নে দলটির মধ্যে চলছিল নানা আলোচনা ও গুঞ্জন। শেষ পর্যন্ত অনুসন্ধানে জানা গেল, বিএনপির এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে জামায়াত ওই উদ্যোগ থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়।

করণীয় নির্ধারণে মতামত বা পরামর্শের অংশ হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সব নেতার বক্তব্যের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর শনিবার বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।

কিন্তু এরপর আরো তিন শনিবার বৈঠক হলেও ফখরুল আর বক্তব্য দেননি। বিষয়টি নিয়ে বিএনপিতে কানাঘুষা এখনো চলছে।

এমন পরিস্থিতিতেই জানা গেল, জামায়াত তাদের জোট থেকে বের না করার অনুরোধমূলক বার্তাটি বিএনপির এক শীর্ষ নেতার কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে।

এরপর বিএনপির ওই শীর্ষ নেতা জামায়াত প্রশ্নে দলটির স্থায়ী কমিটিকে ‘ধীরে চলো নীতি’ গ্রহণের নির্দেশনা দেন। এতে জামায়াত নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্নে দলটির স্থায়ী কমিটির তৎপরতা থেমে যায়।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার দাবি করেন, তাঁরা কোনো বার্তা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে পৌঁছাননি এবং তাঁদের দলের মধ্যে এ নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোট অটুট আছে এবং শরিক দল হিসেবে জামায়াতও ওই জোটে আছে।

জামায়াতের তৎপরতার কারণেই উদ্যোগটি থামানোর নির্দেশনা আসে। তাঁরা বলেন, বার্তাবাহকের পরিচয়ও তাঁরা জানেন; যিনি এখন বিএনপির রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েও আবার শীর্ষ নেতাদের আনুকূল্য পাওয়ার জন্য চেষ্টা-তদবির করছেন।

জামায়াতকে জোট থেকে বের করার পক্ষে তৎপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে কালের কণ্ঠকে বলেন, চেষ্টা যতই হোক; আমরা প্রায় গুছিয়ে এনেছি। জোট থেকে জামায়াতকে বিদায় করবই। আলোচনা সাময়িক ঝুলে গেলেও উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে’—বলেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নেতা।

সূত্রগুলো আরো জানায়, বিএনপির ওই শীর্ষ নেতা সম্প্রতি দলের এক নীতিনির্ধারক নেতাকে ডেকে জামায়াত সম্পর্কে নির্দেশনা দেন। কিন্তু এতে দলটির জামায়াতবিরোধী নেতারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বৈশ্বিক ও জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কৌশলগত কারণে জামায়াতকে আপাতত দূরে রাখা উচিত।

তাঁদের মতে, ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতের মূল্য আছে ঠিকই। কিন্তু আগে সুষ্ঠু ভোট তো হতে হবে। আর এ জন্যে সবার আগে দরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন। কিন্তু শরিক জামায়াতকে জড়িয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না।

পাশাপাশি সুধীসমাজসহ দেশের মধ্যে ‘ক্ষমতার বিকল্প বিভিন্ন কেন্দ্র’ বলে পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলোও বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আছে। আর এ কারণেই জামায়াত প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আলোচনা বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আনা হয়েছে।

এর আগে পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা জামায়াত সাক্ষাৎ চাইছে বলে খালেদা জিয়াকে জানান। কিন্তু ওই সময় উপস্থিত অন্য নেতাদের আপত্তির কারণে খালেদা জিয়া জামায়াত নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হননি বলে জানা যায়। সূত্র মতে, ওই সময় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, জামায়াত প্রশ্নে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।

এরপর বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে জামায়াত প্রশ্নে আলোচনা আরো জোরদার হয় এবং প্রায় সব নেতা একমত হন যে কৌশলগত কারণে হলেও জামায়াতকে ২০ দলীয় জোটের বাইরে রাখতে হবে। অন্য সব নেতার পর সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিএনপির রাজনীতিকে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করার পাশাপাশি কী কী কারণে জামায়াতকে ত্যাগ করা উচিত সে বিষয়ে স্থায়ী কমিটিতে দুই ঘণ্টা বক্তৃতা করেন।

এর পরের শনিবার ২৫ আগস্ট আগের বৈঠকের মুলতবি বক্তৃতা শেষ করতে খসরুর আরো ১৫ মিনিট লাগে। এরপর অনেক শনিবার নানা ধরনের আলোচ্যসূচির কারণে ফখরুলের বক্তৃতা করা হয়নি। ফলে কিছুদিন ইস্যুটি চাপা পড়ে থাকে।

তবে গত ২৯ আগস্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর কথার সূত্র ধরে জামায়াতের ইস্যুটি নতুন করে আলোচনায় গতি পায়। ওই দিন টুকু বলেন, দলের কর্মকৌশল নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা আবার শুরু করা দরকার।

এরপর বৈঠকের সভাপতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিদ্ধান্ত দেন, ৫ সেপ্টেম্বর পরবর্তী বৈঠকে মহাসচিব বক্তৃতা করবেন। কিন্তু ফখরুল আর বক্তৃতা করেননি।

জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনৈতিক ইস্যু আলোচনা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চলে। ফলে শুধু জামায়াত ইস্যু এখনই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—এমন কোনো কথা নেই।

তিনি জানান, গুরুত্বপূর্ণ নানা ইস্যু আলোচনায় আসায় তাঁর বক্তৃতা করা হয়নি। সময় হলেই তিনি বক্তৃতা করবেন।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জামায়াতের নাম উল্লেখ না করে বলেন, রাজনীতি কোনো স্থিতিশীল বিষয় নয়। পরিবেশ পরিস্থিতি বা সময়ের দাবি বিশ্লেষণ করেই রাজনীতির পথ চলতে হয়। ফলে সময়ই বলে দেবে কোন ইস্যু কখন নিষ্পত্তি হবে।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার…

January 6, 2024
Sponsored