সেনাসর্দার জিয়া কোন রাজনৈতিক দল নয়, কিছু আওয়ামী বিরোধীকে একত্রিত (জাগদল) করেছিলেন মাত্র, তাও মুলত সামরিক একনায়কের লাগামহীন ক্ষমতার বলকে পূঁজি করে, জনগনের সমর্থনে নয়। তার দুঃখজনক মৃত্যুর পর, এরশাদ বিরোধী সংগ্রামে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই আজকের বিনপির ভিত তৈরী হয়। অর্থাৎ মহামতি বেগম জিয়া প্রমাণ করে দেন যে রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস ক্ষমতার শীর্ষস্থান নয়, বরং জনগণের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা।
বিনপি এখন রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। আজকের বাঙলাদেশে হেফাজত এমনকি নিসচার (নিরাপদ সড়ক চাই) যেই রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, বিনপির তার গুরুতর অভাব। বেগম এখন বয়োবৃদ্ধা, ৮০র দশকের সেই “আপোষহীন নেত্রী” এখন একেবারেই দূর অতীতের বিষয়।
সেক্ষেত্রে কিভাবে জাতীয়তাবাদী দলের হাল ধরছেন পুত্র ও উত্তরসূরী তারেক জিয়া? জনগনের কাতারে আসতে পেরেছেন কি? বেগম জিয়া যেভাবে রক্তপিপাসু একনায়ক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক সরকারের হত্যা, কারাগার, মামলা স্বত্বেও হার না মানা প্রবল আন্দোলন দাঁড় করিয়েছিলেন, তারেকও সেই একই পথ অনুসরণ করছেন কি?
২০০১এ দলীয় গঠনতন্ত্র ডিঙিয়ে একলাফে বনেছিলেন দলের সহসভাপতি, তারপর থেকে রাজকীয় ভাবমূর্তি আর ছাড়তে পারেননি কখনো। প্রথমেই দলের জ্যেষ্ঠ নেতৃত্ব যথাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মান্নান ভূঁইয়া, অলি আহমদ, মওদুদ আহমেদ, নাজমুল হুদার মতো পূরানো ও রাজপথের পরীক্ষিত নেতা, যারা বাস্তবিকপক্ষে দলকে তৈরী ও ধরে রেখেছিলেন, সবাই একে একে বিদায় নিতে বাধ্য হন, বদলে দলে জায়গা করে ন্যায় হাওয়াভবনের আশীর্বাদপুষ্ঠ সুবিধালোভীরা, যাদের না আছে আন্দোলনের জোর না আছে সাংগঠনিক দক্ষতা। ফলাফল যা হবার তাই, আজকের বিনপি হরতাল দূরে থাক, একটা মিছিল বের করারও সামর্থ্য রাখেনা।
এদেশে আন্দোলন থেমে নেই, নিরাপদ সড়কের দাবী হোক বা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমনের বিরোধিতা, মানুষ ঠিকই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে, তফাৎ শুধু এই যে সেসব আন্দোলনে বিনপি তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেছে। অর্থাৎ বাঙলার মানুষ এখন বিনপিকে ছাড়াই সরকারকে প্রশ্ন করতে বা তার কোন পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম।
তদুপরি তারেক জিয়ার হঠাৎ করে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রেক্ষিতে তার সহসা দেশে ফিরে রাজনীতির হাল ধরার সম্ভাবনা আপাতত ক্ষীণ প্রতীয়মান হচ্ছে, এমন কোন ইঙ্গিত কোথাও নেই যে বিনপির এই ভবিষ্যৎ পুরোধাঃ রাজনৈতিক সাফল্যের জন্য জনগনের সাথে একাত্মতার গুরুত্ব আজো অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন।
তাছাড়া বাস্তব সত্য হচ্ছে যে তারেকেরও এখন বয়স হচ্ছে, ৫২ বছর বয়সী একজন অনভিজ্ঞ রাজনীতিক যে আজপর্যন্ত এমনকি একটা সংসদ নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জেতেননি বা জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে একটা প্রশ্নের জবাব দেননি।
লান্ডানে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের রাজনীতিতে বাঙলার ক্ষমতার পট পরিবর্তন হবেনা। এই দেশে জেলজুলুমের ভয় করে কেউ কখনো জননেতা হতে পারেনি। প্রায় দেড়যুগ ক্ষমতার বাইরে থেকেও আজো বিনপির সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েনি বা বৃহৎ আকারের কোন দলভাগের ঘটনা ঘটেনি কিন্তু বিনপির সেই প্রানপ্রদীপ টিকে আছে শুধুমাত্র বেগম জিয়ার ওপর নির্ভর করে। দল ও দেশের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে তারেক সেই জায়গাটা তৈরী করে নিতে কতোটা সময় নেন, সেটাই এখন দেখবার বিষয়।