বিভাগ রাজনীতি

প্রতিক্রিয়াশীল ধারা থেকে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে দেশকে বঙ্গবন্ধুই বের করে আনেন

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ব্যক্তিত্বটাই এমন ছিল যে তিনি মানুষকে কাছে টানতে পারতেন। তাঁর বৈশিষ্ট্য হলো সব মানুষকেই তিনি সম্মান এবং গুরুত্ব দিতেন। সেই তরুণ বয়সে দেখতাম, সব মানুষের কথা তিনি আগ্রহভরে শুনে বোঝার চেষ্টা করতেন এবং সম্ভব হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সেটাকে তিনি কাজে লাগাতেন। বঙ্গবন্ধু সবার সঙ্গে খুব সহজে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারতেন। তিনি অনেক বড় নেতা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর পাশের লোককে কখনো সেটা অনুভব করতে দিতেন না।’

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৫৯ সালে। এর কয়েক বছর আগে বার-অ্যাট-ল শেষ করে আমি বিলাত থেকে দেশে ফিরেছিলাম। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সাহেবের বাসায় তিনি যেতেন। সেখানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবও যেতেন। বিমানবন্দরে সোহরাওয়ার্দী সাহেব এলে সেখানেও মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হতো। একসঙ্গে ওখান থেকে আবার মানিক মিয়া সাহেবের বাসায় যেতাম। এভাবেই আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ শুরু হলো।’

‘সেখানে মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে অনেক কথা হতো। ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে তাঁর ইমেজ তৈরি হয়ে গেছে। একদিন মুজিব ভাইকে বললাম, ‘আপনার কথা দেশে-বিদেশে অনেক শুনেছি। আপনি বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন সাহসের সঙ্গে করছেন।’ এভাবে যেতে যেতে একসময় সম্পর্ক তৈরি হলো। আমি ছিলাম সোহরাওয়ার্দী সাহেবের ভক্ত আর বঙ্গবন্ধু তাঁর কর্মী ছিলেন। এভাবেই ভক্ত আর কর্মীর মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হলো। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম গুণ ছিল তাঁর অদম্য সাহস। বাঙালির অধিকার আদায়ের ব্যাপারে তিনি বলতেন শক্তভাবে এবং প্রচণ্ড ঝুঁকিও নিতেন।’

‘তাঁর সমান সাংগঠনিক দক্ষতা আজকের রাজনৈতিক ইতিহাসেও বিরল। তাঁকে কারাগারে নেওয়া হতো। কিন্তু কারাগার থেকে বের হয়ে তিনি কখনো বাসায় বসে থাকতেন না। পরের দিন আবার রাস্তায় বেরিয়ে যেতেন। আইনজীবী হিসেবে আমি তখন তত সিনিয়র ছিলাম না। তবে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা দু-একটি মামলায় সম্ভবত কিছুটা ভূমিকা রাখার সৌভাগ্য হয়েছিল। মানুষ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ছিলেন এককথায় অসাধারণ। পরকে আপন করার ওই রকম গুণাবলি আজ পর্যন্ত কারো মধ্যে দেখিনি। কর্মী বা পরিচিতজনদের সঙ্গে তিনি কথা বলতেন আত্মীয়ের মতো। সম্পর্ক তিনি এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতেন যে তাঁর জন্য অনেক লোক জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল।’

‘জনগণের ওপর আস্থা রেখেই তিনি চলতেন। টাকা-পয়সা কিংবা ধর্মকে ব্যবহার করে তিনি মানুষকে কাছে টানতেন না। প্রতিক্রিয়াশীল ধারা থেকে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে এ দেশকে তিনিই বের করে আনেন। আওয়ামী লীগে আনুষ্ঠানিক যোগদানের সময়টা হুবহু আমার মনে নেই। তবে অবশ্যই ১৯৫৯ সালের পরে প্রাথমিক সদস্য পদ পেয়েছি, এটা বলা যায়। বিশ্বনেতার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর নাম চির অম্লান থাকবে। তাঁর সমান উচ্চতার নেতা বিশ্বে এখন তো বিরল বটেই, এমনকি তাঁর সমকালীন বিশ্বে হয়তো বা দু-একজন ছিলেন।’

‘স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে সংবিধান কমিটির চেয়ারম্যান করার কথা বঙ্গবন্ধুই ডেকে আমাকে বললেন। তবে ফরেন মিনিস্টার করবেন—এ কথা আমায় খোলাখুলি আগে বলেননি। তবে আমি বুঝতে পারছিলাম, তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন, সহজে মুক্তি দেবেন না। অবশ্য সংবিধান প্রণয়নের পর মনে করলাম, আমার কাজ শেষ। এখন আমি মুক্ত। তখন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ হেসে বললেন, আপনি তো মুক্ত হবেন না! আওয়ামী লীগের তৎকালীন সিনিয়র নেতাদের দু-একজন আমার কাছে জানতে চাইলেন, আমি কোন মন্ত্রণালয় চাই। আমি বললাম, আমি তো কোনোটাই হতে চাই না।’

‘কিন্তু মন্ত্রিসভা গঠনের পর তাজউদ্দীন ভাই বেরিয়ে প্রথমে আমাকে অভিনন্দন জানালেন। বললেন, ‘কনগ্রাচুলেশনস ফরেন মিনিস্টার।’ পরে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তোমাকে দায়িত্ব দিলাম। সদ্যঃস্বাধীন দেশ গড়তে সবাইকে আত্মনিয়োগ করতে হবে।’ তখন প্রায় সবার চেয়ে আমি জুনিয়র ছিলাম। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে আমাকে ফরেন মিনিস্টার করলেন বঙ্গবন্ধু। তখন বুঝতে পারলাম, বঙ্গবন্ধু আমাকে অনেক স্নেহ করেন। এটা অবশ্যই আমার ভাগ্যের ব্যাপার। অথচ আমি বঙ্গবন্ধুর খুব বেশিদিনের নয়, অল্প কয়েক দিনের কর্মী ছিলাম। তার পরও তিনি ভালো কাজের মূল্যায়ন করলেন। সম্ভবত সংবিধান প্রণয়নের ঘটনায় বঙ্গবন্ধু খুশি হয়েছিলেন। অবশ্য কাজটাও আমি বেশ গুছিয়ে করেছিলাম।বঙ্গবন্ধু সব সময় বলতেন, বাঙালিরা দলাদলি করলে পাকিস্তানিরা সুযোগ নেবে।’

‘একদিন একান্তে তিনি বলেন, ‘পশ্চিমারা মনে করে, আমরা বাঙালিরা কোনো দিন দাঁড়াতে পারব না। কারণ আমরা খুব দলাদলি পছন্দ করি এবং একে অন্যকে সহ্য করি না।’ উনি তাই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার বিষয়ে সব সময় মনোযোগী ছিলেন। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে অসম্ভবকে তিনি সম্ভব করেছিলেন। এটা একদিন আমি তাঁকে বলেছিলাম। ফরেন মিনিস্টার হিসেবে একসঙ্গে বহুবার বিদেশে ভ্রমণ করেছি; সেটা আমার জীবনের অনেক আনন্দের বিষয়। মন্ত্রিসভায় অপেক্ষাকৃত তরুণ হওয়ার পরও তিনি আমায় সব সময় কাছে ডেকে নিতেন। মিটিং বা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বক্তৃতার সময় আইনের বিষয় থাকলে বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘তুমি আমার কাছে থাকো।’

‘বঙ্গবন্ধু সঠিক লোককে সঠিক মূল্যায়ন করে সঠিক জায়গায় বসাতে পারতেন বলেই বিশ্বনেতা হতে পেরেছিলেন। অনেক কম বয়সে সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব এবং ফরেন মিনিস্টারের দায়িত্ব তিনি আমায় দিয়েছিলেন।দুঃখের কথা, আমাদের হাতে আমরা বঙ্গবন্ধুকে ধ্বংস করলাম। ১৫ আগস্টের বিয়োগান্ত ঘটনার সময় আমি সম্ভবত যুগোস্লাভিয়ায় ছিলাম। খবর শুনে মনে হলো, পৃথিবীটা ধ্বংস হয়ে গেল! আমাদের সব রাজনীতি ধ্বংস হয়ে গেল! তাঁর নেতৃত্বের শূন্যতা আজও পূরণ হয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঙালি জাতির জন্য আর কেউ রাস্তায় নামবেন না। এখনকার বিশ্বে ওই উচ্চতার নেতা কল্পনাও করা যায় না।’

‘বঙ্গবন্ধু সব সময় বলতেন, ‘দেখো, আমি বিশ্বাস করি, মানুষের মৃত্যু নির্দিষ্ট কোন দিনে, সেটি লেখা থাকে। এর এক দিন আগেও হবে না, এক দিন পরেও হবে না।’ সে কারণে তিনি ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে যেতেন। সম্ভবত এ কারণেই যুদ্ধ শুরু হলেও তিনি দেশ ছেড়ে যাননি।’

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024
Sponsored