খুলনার স্থানীয় এক সাংবাদিককে ঝর্ণার সাবেক স্বামী হাফেজ শহীদুল জানান, বর্তমানে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার গোবরচাকা এলাকার শাহীনুর মসজিদের সামনে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। আর চাকরি করেন খুলনার খানজাহান আলী এলাকায় তালিমুল মিল্লাত মাদ্রাসার অন্তর্ভুক্ত জরিনা বেগম হাফেজী মাদ্রাসার প্রধান হাফেজ বা প্রধান শিক্ষক হিসেবে।
তিন বছর আগে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার কামারগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালিউর রহমান ওরফে ওলি মিয়ার মেয়ে জান্নাত আরা ঝর্ণার সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তিনি (হাফেজ শহীদ) দ্বিতীয় বিয়ে করেন বাগেরহাটের চিতলমারী থানা এলাকায়। ওই স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকেন খুলনার গোবরচাকা এলাকায়। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তার এক বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। প্রথম স্ত্রীর দুই ছেলে।
হাফেজ শহীদ বলেন, ‘প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সুখেই সংসার চলছিল। আল্লামা মামুনুল হকের মামার বাড়ি আর আমার বাড়ি একই উপজেলায়। সেই সুবাদে তার সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় হয়। সেই পরিচয় আরো গাঢ় ও ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয় রাজনীতি করতে গিয়ে। আমি খেলাফত মজলিশ করি।
মামুনুল খেলাফত মজলিশের মহাসচিব। তিনি খুলনা অঞ্চলে সফরে এলে আমি তার সঙ্গে থাকতাম। তিনি বহুবার একা বা সপরিবারে আমার বাসায় অতিথি হয়ে এসেছেন। আমি নিজেও সপরিবারে তার বাসায় বহুবার গিয়েছি। আমাদের বন্ধুত্ব অত্যন্ত গভীর। যাতায়াতের সুযোগে আমার স্ত্রী সন্তানদেরও তিনি চেনেন জানেন।’
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টের দ্বিতীয় স্ত্রীসহ অবরুদ্ধের পর থেকে আলোচনায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক। এবার বন্ধুত্ব ও বিয়ে ভাঙা নিয়ে কথা বলেছেন তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রথম স্বামী হাফেজ শহীদুল ইসলাম। মামুনুলের সঙ্গে তার প্রথম স্ত্রী জান্নাত আরার বিয়ে সম্পর্কে তার জানা ছিলো না। তাই শনিবারের ঘটনার আগ পর্যন্ত মামুনুলের সঙ্গে তার সম্পর্ক অটুট ছিলো।
মামুনুল নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে স্বীকার করেন একজন অসহায় নারী হিসেবে বন্ধু হাফেজ শহীদুলের স্ত্রী তার সহযোগিতা চান। তিনি ‘মানবিক কারণে’ তার অভিভাকত্ব গ্রহণ করেন।
হাফেজ শহীদুল জানান, তালাক দেওয়ার পর একজন নারী তার প্রথম স্বামীর জন্য ‘বেগানা নারী’ হিসেবে পরবর্তীকালে আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেননি। তবে শুনেছেন প্রবাসী যে ছেলে তার প্রথম স্ত্রীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়েছিল ওই ছেলে দেশে এসে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। এরপর শুনেছেন তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ঢাকায় থাকেন। মামুনুলের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি তার জানা ছিলো না।
এদিকে হাফেজ শহীদুলের বড় ছেলে হাফেজ আবদুর রহমান জানান, শনিবার মামুনুল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আটক হওয়ার পর দিন রোববার সকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর একটি দল সাদা পোশাকে তাদের খুলনার বাসায় যায়। সেখান থেকে আবদুর রহমান ও তার বাবাকে গাড়িতে করে ঢাকায় নিয়ে আসে।
তাদের সেখানে রেখে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওই লোকজনই তাকে সোমবার ভোরে খুলনার সোনাডাঙ্গা পৌঁছে দেয়। এর কিছু সময় পর তার বাবাকে মাওয়া ঘাটে পৌঁছে দেয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন। ফলে তারা অজানা আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন।
তাদের পুরো পরিবার এখনো পুলিশের নজরদারিতে আছে বলে দাবি করেন আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর মামুনুল সাহেব খুব খুশি ছিলেন। তিনি কুবুদ্ধি দিয়ে আমাদের সংসার ধ্বংস করেছেন। খারাপ হলেও তিনি আমার মা। আমি তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারি না।’