স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটিতে যাওয়ার জন্য আকুল ছিলেন শেখ হাসিনা। সেই আকুলতা থেকেই এই দিনে সরকারের কাছে বাড়িটি খুলে দেওয়ার জন্য এবং উত্তরাধিকার হিসেবে বাড়ির মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
অবশ্য দেশে ফেরার পরদিনই ১৮মে শেখ হাসিনা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে যান। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে থাকা সরকারি লোকজন তাকে এবং আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়নি (সূত্র: দৈনিক সংবাদ ১৯ মে)। এরপর শেখ হাসিনা ৩২ নম্বরের মূল ফটকের সামনে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন এবং মিলাদ মাহফিল করেন।
এসময়ও পুলিশ কর্মী সমর্থকদের প্রবেশ করতে দেয়নি। এখান থেকে ৭৬ জনকে আটক করে পুলিশ (সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক)। ১৯ মে শেখ হাসিনা আবেগরূদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘যে বাড়িতে আমি বড় হয়েছি, যে বাড়িতে আমার পিতাকে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে আমাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না, এ কেমন বিচার?’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘একদিন নিশ্চয়ই এসব অন্যায়ের বিচার হবে।’
২০ মে শেখ হাসিনার পক্ষে তার পৈত্রিক বাড়ি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয়। ঐ আবেদনে ৭৫ এর ১৫ আগস্টের নারকীয়তার বর্ণনা দিয়ে, এই বাড়িটি একমাত্র উত্তরাধিকার হিসেবে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার নাম উল্লেখ করা হয়। কিন্তু জিয়াউর রহমান জীবিত থাকা অবস্থায়, আওয়ামী লীগ সভাপতিকে বাড়িটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ৩০ মে জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দলিলপত্রে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতির আবেদনটি, সিদ্ধান্তের জন্য তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছিল। জিয়া ঐ ফাইলে লিখেছিলেন ‘নো’। জিয়ার মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সাংবিধানিকভাবে অযোগ্য ছিলেন। তাকে নির্বাচনে যোগ্য করতে বিএনপি সংবিধান সংশোধন করে। এসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করতে সাত্তার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের পবিত্র বাড়িটির মালিকানা জাতির পিতার কন্যাকে বুঝিয়ে দেন।
আজ যখন রাজনীতিতে প্রতিহিংসার বিষবাষ্প। অনেকেই বলেন, বেগম জিয়ার প্রতি কেন এতো রুষ্ট শেখ হাসিনা? কেন খালেদা জিয়ার প্রতি কোন সহানুভূতি নেই? তখন দৃশ্যপটে ভেসে আসে ৩৮ বছর আগের এই ঘটনা। শেখ হাসিনা যেদিন স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন, সেই দিন আওয়ামী লীগের হিসেব অনুযায়ী ৭৭ হাজার নেতাকর্মী কারাগারে ছিলেন।
৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সময় পর্যন্ত দেড় লাখ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। এখন যারা মানবতার জন্য আর্তনাদ করেন, তখন কি তাঁরা ঘুমিয়ে ছিলেন?