ইস্তিগফার শব্দটি আরবি হলেও এর অর্থ সবার কাছে পরিচিত। বান্দা তার কৃত অপরাধের জন্য যেকোনো সময় যেকোনো অবস্থায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়াকে ইস্তিগফার বলা হয়। মহান আল্লাহ বেশি পরিমাণ ইস্তিগফারকারীদের ভালোবাসেন। প্রিয় নবী (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার তাওবা ও ইস্তিগফার করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তিগফার ও তাওবা করে থাকি।’
ইস্তিগফার শুধু ফরজ নামাজের পর করণীয় আমল নয়। বরং সারা দিন বিভিন্ন সময়ে ইস্তিগফার করতেন রাসুল (সা.)।
প্রকৃতির কার্য শেষে তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। এ প্রসঙ্গে আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যখন শৌচাগার থেকে বের হতেন, তখন বলতেন, ‘গুফরানাকা’। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩০)
ঘুম থেকে উঠে ইস্তিগফার
উবাদাহ বিন সামিত (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে জাগার পর এই দোয়া পাঠ করে—‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু, লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির, আলহামদুলিল্লাহ ওয়া সুবহানাল্লাহ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লা হাওলা ওয়া কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।’
অর্থ : এক আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজ্য তাঁরই। যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই। তিনিই সব কিছুর ওপর শক্তিমান। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ তাআলা পবিত্র, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান, গুনাহ থেকে বাঁচার এবং নেক কাজ করার কোনো শক্তি নেই আল্লাহর তাওফিক ছাড়া।’ অতঃপর বলে, ‘আল্লাহুম্মা ইগফিরলি—হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন।’ বা অন্য কোনো দোয়া করে, তাহলে তার দোয়া কবুল হয়। অতঃপর অজু করে নামাজ আদায় করলে তার নামাজ কবুল হয়। (বুখারি, হাদিস : ১১৫৪)
বয়োবৃদ্ধ অবস্থায় ইস্তিগফার
আয়েশা (রা.) নবীজির ইন্তেকালের আগের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, নবীজি (সা.) ইন্তেকালের আগে এই দোয়াটি খুব বেশি বেশি পাঠ করতেন, ‘সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা আসতাগফিরুকা ওয়াআতুবু ইলাইক।’
অর্থাৎ ‘পবিত্র মহান আল্লাহ এবং সব প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য, আমি তোমার কাছে সব পাপের জন্য ক্ষমা চাই ও তাওবা করি।’
(মুসলিম, হাদিস : ৯৭৩)
বৈঠক শেষে ইস্তিগফার
বৈঠক শেষে নবীজির আমলের কথা সাহাবি আবু বারজাহ আল আসলামি (রা.) এভাবে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো বৈঠক শেষ করে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন বলতেন, ‘সুবাহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।’ এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এখন আপনি যে বাক্য পাঠ করলেন তা তো ইতোপূর্বে আপনি পাঠ করেননি? তিনি বলেন, মজলিসে যা কিছু (ভুলত্রুটি) হয়ে থাকে এ কথাগুলো তার কাফফারা হিসেবে গণ্য হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৫৯)
মৃত্যুশয্যায় ইস্তিগফার
আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের আগে যখন তাঁর পিঠ আমার ওপর হেলান দেওয়া অবস্থায় ছিল, তখন আমি কান ঝুঁকিয়ে নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ারহামনি, ওয়া আলহিকনি বির রফিকি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার ওপর দয়া করুন এবং মহান বন্ধুর সঙ্গে আমাকে মিলিত করুন। (বুখারি, হাদিস : ৪৪৪০)
মহান আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি ইস্তিগফার করার তাওফিক দান করুন।