আমরা অল্পতেই হতাশ হয়ে যাই। সামান্য বিপদে দিশেহারা হয়ে পড়ি। রোগ, অসুস্থতা, অর্থনৈতিক সমস্যা, পরিবারিক বিরোধ এটি মানুষের জীবনের একটি স্বাভাবিক সমস্যা। কিন্তু এসব সমস্যা যখন খুব বেশি প্রখর হয়ে ওঠে আমরা অনেকেই ধৈর্য্য হারা হয়ে পড়ি। অথচ মহান আল্লাহ তাআলা এ সময়ে ধৈর্য্য ধারণ করতে বলেছেন।
যে কোন মহামারী থেকে বাঁচতে পড়ুন- “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উস্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সমস্ত দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।”
প্রার্থনা যে শুধু মুসলিমদের জন্য, তা কিন্তু নয়, সমগ্র মানবজাতি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইতে পারেন একাগ্রচিত্তে। তিনি চাইলে যেকোন মানুষকেই মুক্তি দিতে পারেন। তাই আসুন বিপদে ধৈর্য্য হারা না হয়ে, প্রার্থনা করি একাগ্রচিত্তে নিজের সৃষ্টিকর্তার কাছে।
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের মতে মানবজাতির গোনাহের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারী হয়। আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধ লঙ্ঘনের শাস্তিস্বরূপ পৃথিবীতে জীবনবিনাশী শাস্তি ও ধ্বংসাত্মক তান্ডব বর্ষণ হয়। কুরআনে বলা হয়েছে, “মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও জলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।”(সুরা রূম: ৪১)
নির্দিষ্ট দুএক প্রকার গোনাহের কারণে শাস্তি হয়, বিষয়টি এমন না, বরং জীবন ধারণের শাখাগত অন্যান্য বিষয়েও আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধাচরণ হলে বিপর্যয় ঘটে। যেমন, আমাদের খাদ্য তালিকায় জীব জন্তুর অনেক বড় দখল। সে ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ হল, “তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শুকরের গোশত,… এবং সেসব পশু যাতে আল্লাহর নাম ব্যতীত অন্য কারো নাম উচ্চারিত হয়েছে।”(সুরা মায়িদা: ৩)
আল্লাহ তায়ালা হালাল হারাম জন্তু সম্পর্কিত মাসয়ালা বর্ণনা করেছেন। যেসব জন্তুর মাংস মানুষের জন্য শারীরিক দিক দিয়ে ক্ষতিকর, যেমন দেহে রোগ সৃষ্টি হতে পারে, অথবা আধ্যাত্মিক দিকে দিয়ে ক্ষতিকর, যেমন চরিত্র বিনষ্ট হতে পারে, কুরআন সেগুলোকে অশুচি আখ্যা দিয়ে হারাম করেছে। পক্ষান্তরে যেসব জন্তুর মাংসে শারীরিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষতি নাই সেগুলোকে হালাল করেছে। (মাআরিফুল কুরআন: ৩০৭)
আমরা যদি উক্ত নির্দেশের বিপরীত করি, তাহলে যেকোনো ধরণের ক্ষতি ও শাস্তি আমাদের উপর নেমে আসতে পারে। সম্প্রতি করোনাভাইরাসসহ আরো যেসব ভাইরাসের কথা শোনা যাচ্ছে, তার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে; শুকর, কুকুর, সাপ, বাদুড়, ইঁদুর ইত্যাদি ভক্ষণ। ফলে দেখা যাচ্ছে, কুরআনের জন্তুভক্ষণ নীতি না মানার কারণে এসব নিত্য মহামারী সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে। কুরআনের আদেশ মান্য করার মাধ্যমে আমরা সহজে জীবনহন্তারক এসব মহামারী থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।
অন্য একটি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, “এতদসম্পর্কে (কুরআন) যদি তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকে, যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সুরা রচনা করে নিয়ে এসো। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকেও সাথে নাও, এক আল্লাহ ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।”(সুরা বাকারা: ২৩)
এই আয়াতে প্রমাণ দেয়া হচ্ছে, কুরআন আল্লাহ তায়ালার সত্য গ্রন্থ। যারা কুরআনকে আল্লাহ তায়ালার কালাম ও নবি করিম সা. এর উপর অবতীর্ণ সত্য গ্রন্থ বলে বিশ্বাস করতে চায় না, কুরআন সংস্কার করতে চায়, নিজেদের মতবাদ কুরআনে সংযোজন করতে চায়, তাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা নিজেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই চ্যালেঞ্জে পরাজিত হলে পরিণতি শুভ হয় না। অতীতে কুরআনের প্রতি ঔদ্ধত্যের শাস্তি হয়েছে ভয়ংকর। অতিসম্প্রতি মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, চীনের রাষ্ট্রীয় সংস্থা কর্তৃক কুরআন সংস্কারের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে! এটা মহাশক্তিধর আল্লাহর সাথে ভয়াবহ রকমের ঔদ্ধত্য। এর শাাস্তিস্বরূপ শুধু করোনা ভাইরাস কেন, এর চেয়ে ভয়াবহ আজাবও যদি নেমে আসে, আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। পৃথিবীর যেখানেই এমন অপরাধ সংঘটিত হবে, সেখানেই মহাদুর্যোগ আঘাত হানতে পারে। একথা যত তাড়াতাড়ি আমরা বুঝবো, ততই মানবজাতির মঙ্গল হবে।
ফলে আমাদের আত্মউপলব্ধি করার সময় এসেছে যে, আল্লাহ প্রদত্ত আদেশ নিষেধের তোয়াক্কা না করে আমরা কি ইচ্ছামত মাদক, বেপর্দা, ফরজ বিধান লঙ্ঘন, অশ্লীলতা, গানবাজনা ইত্যাদি জঘণ্য গোনাহের ভেতরে ডুবে থাকবো, নাকি বর্জন করবো? যদি এসব অপকর্মে লিপ্ত থাকি, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই আসমান থেকে বর্ষিত জীবনবিনাশী বিভিন্ন আজাব, দুর্যোগ ও মহামারীতে আক্রান্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যদি আজাব মোকাবেলার সাহস ও সক্ষমতা আমাদের না থাকে, তাহলে সর্বপ্রকার গোনাহ ও নাফরমানি বর্জন করে আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করাই হবে মানবজাতির জন্য সত্যিকার বুদ্ধিমান ও কল্যাণকর কাজ।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান,সাংবাদিক ও কলামিস্ট।