গভীর রাতে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে আটক ও পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হলে প্রত্যাহার হতে পারেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীন।
এ ঘটনার পর রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার কে. এম. তারিকুল ইসলাম এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্তে ডিসি দোষী প্রমাণিত হলে দুই এক দিনের মধ্যে প্রত্যাহার হতে পারেন বলে তদন্ত সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করতে বলেন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, জোর করে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দিতে পারেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসন আইনের অপব্যবহার করে মোবাইল কোর্টকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন।
শনিবার (১৪ মার্চ) বিকেলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) মো. মাসুদ রানার নেতৃত্বে কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে সাংবাদিক রিগ্যানের বউ, শ্বশুর মোহাম্মদ আলী, মামা নজরুল ইসলাম ও নুর ইসলাম নুরু, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমাসহ সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
রিগ্যানের মামা কুড়িগ্রাম পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, কারো প্ররোচণায় সম্পূর্ণ নির্দোষ রিগ্যানকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে কোনো সাক্ষ্য না নিয়ে অবৈধভাবে রিগ্যানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। অপর মামা নুর ইসলাম নুরু অভিযোগ করেন, বাড়ির গেট ও দরজা ভেঙে রিগ্যানকে আটক করে নিয়ে আসা হয়।
শ্বশুর মোহাম্মদ আলী বলেন, যে ছেলে একটা সিগারেট খায়না, তার বিরুদ্ধে মাদক মামলা দেওয়া দুঃখজনক।কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন এ বিষয়ে বলেন, টাস্কফোর্সের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিধিবিধান অনুসরণ করে সাজা দেওয়া হয়েছে।
মোবাইল কোর্ট পরিচালনা পদ্ধতি সম্পর্কে আইনের ৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সংক্ষিব্ধ অভিযোগ লিখিতভাবে গঠন করিয়া উহা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পাঠ ও ব্যাখ্যা করিয়া শুনাইবেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগ স্বীকার করিলে তাহার স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করবেন। অভিযোগ অস্বীকার করিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন সন্তোষজনক হইলে অব্যাহতি প্রদান করবেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থন সন্তোষজনক না হলে নির্বাহী ম্যাজিট্রেস্ট তাকে বিচারিক আদালতে পাঠাবেন। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের কোনো বিধান না মেনে তাকে শাস্তি দিয়েছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাম্প্রতিক’কে বলেন, বাসা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দিতে পারে না। গাঁজা-মদ যদি ঘরে থেকেও থাকে তবে তা নজরদারিতে রাখবে। মাদকদ্রব্য যদি কেউ লুকিয়ে রাখে তাহলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, ডিসির সম্পর্কে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশের পর এমন ঘটনা ঘটলে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে। এতে সন্দেহের অবকাশ নেই।