রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোতে বাড়ছে বন্যার পানি। ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে রাজধানীর চারপাশ। আশুলিয়া, ধামসোনা, শিমুলিয়ার, পাথালিয়া, ইয়ারপুর, সাভার সদর, তেতুঁলঝড়া, বনগাও, আমিনবাজার, ভার্কুতা, বিরুলিয়ার, কাউন্দিয়া, নিচু এলাকায় বেশিরভাগ ঘরের ভিতরে বন্যার পানি ঢুকে গেছে। কিছু এলাকায় ঘরের ভিতর পানি না ঢুকলেও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বাসিন্দারা। এবার রাজধানীর অনেক এলাকাই প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, উত্তরায় বেড়িবাঁধ থাকলেও ধামসোনা, শিমুলিয়ার, পাথালিয়া, ইয়ারপুর, তেতুঁলঝড়া, বনগাও, আমিনবাজার, ভার্কুতা, বিরুলিয়ার, কাউন্দিয়া এলাকায় কোন বেড়িবাঁধ নেই। প্লাবিত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নদীর পার্শ্ববর্তী এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল বর্ষাকালে সবসময়ই প্লাবিত হয়ে থাকে। তবে এবার বন্যার পানি অনেক বেশি। দিন দিন বেড়েই চলছে।
শিমুলিয়ার ব্রিজ থেকে আমতলার দিকে খালের পানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ২নং ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে গলা পানি পেরিয়ে বলিভদ্র নতুন নগর দিকে যেতেই দেখা যায় রাস্তার দুইপাশ পুরো প্লাবিত। মূল সড়ক বাদে বেশিরভাগ সড়কই বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। আশুলিয়ার ধামসোনা মধুপুর স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্যবার বন্যার পানি আসলেও বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে না। কিন্তু এবার ঘরে পানি ঢুকে গেছে।
এদিকে কন্ডা এলাকার অনেক ঘরেই এখন বন্যার পানি। ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, আশপাশে কোনো পানি ছিল না। এই এলাকায় বন্যার পানিও আসতো না। কিন্তু এখন প্রতিদিনই পানি বাড়তাছে। পানি বেড়ে এখন ঘরে পর্যন্ত ঢুকে গেছে। সামনে কি হয় কে জানে!
মধুপুর বাজারেরও বিভিন্ন দোকানপাট, বাড়ি ও ভবনে বন্যার পানি ঢুকে গেছে। মধুপুর নতুন ঢালাই করা রাস্তা দিয়ে অল্প সামনে এগোলে দেখা যায়, ওই এলাকার সব ভবন, দোকানপাট ও বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। অনেকে যাতায়াত করছেন নৌকায়।
আশুলিয়া বেড়িবাঁধের দিকে নদীর পানি অনেক বেড়েছে। আশুলিয়ার দুইপাশের সবকিছুই প্লাবিত। পানি বাড়লে উত্তরা, তুরাগ, মিরপুর, রুপনগর পুরো এলাকাই প্লাবিত হতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না। আশুলিয়ার মাছ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, ৯৮’র বন্যা ছাড়া এতো পানি আর দেখি নাই।
এদিকে বনগাও ভার্কুতা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্রতিবছরই বন্যার পানিতে ডুবে যায়। কিন্তু এবার বাড়িঘরেও পানি ঢুকেছে। বনগাও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, নিচু জায়গাগুলো প্রতিবছরই বন্যার পানিতে ডুবে যায়। কিন্তু এবার পানি অনেক বেশি। উঠান পর্যন্ত পানি চলে আসছে, কয়েকদিনে হয়তো তা ডুবে যাবে।
ভার্কুতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ১৯৯৮ সালের পর ঢাকায় এমন বন্যা হয়নি। অনেক বাড়িঘরে পানি ঢুকে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে, ১০ দিনের বেশি হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও সপ্তাহখানেক হলো বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার অনেক জায়গায় বাড়িঘরে পানি প্রবেশ না করলেও আশপাশে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এই বন্যা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের ভাড়া করা কাঁচা কিংবা আধা-কাঁচা ঘরগুলোই বেশি তলিয়েছে বন্যার পানিতে। বন্যায় ভোগান্তির শিকার এসব মানুষের অভিযোগ, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করা হচ্ছে না। এমনকি তাদের খোঁজ-খবরও নেয়া হচ্ছে না।
জানা যায়, সাভার সদর, সাভার পৌরসভা, তেতুঁলঝোড়া, কাউন্দিয়া এবং এসব এলাকার পার্শ্ববর্তী জায়গা ডুবে গেছে। শিমুলিযার ৩৭টি গ্রাম ডুবে গেছে। বড় রাঙ্গামাটিয়া সেতুর উভয়পাশে অনেক পাকা ও কাঁচা বাড়ি বন্যার পানিতে অর্ধেক ডুবে গেছে। বন্যা বিশেষজ্ঞদের মতে, পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে রাজধানীর মূল অংশে অল্প সময়ের মধ্যে বন্যার পানি প্রবেশ করবে। এবার হয়তো সরকার তেমন কিছু করতে পারবে না, তবে আগামীতে রাজধানীর চারপাশ বেড়িবাঁধ দিয়ে সুরক্ষিত করতে হবে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এক পূর্বাভাসে বলেছে, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে প্রধান নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করতে পারে। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোর বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আশুলিয়ার, ধামসোনা , শিমুলিয়ার, পাথালিয়া, ইয়ারপুর, সাভার সদর, তেতুঁলঝড়া, বনগাও, আমিনবাজার, ভার্কুতা, বিরুলিয়ার, কাউন্দিয়া- এসব অঞ্চলগুলোর যে নিচু এলাকা আছে, সেখানে পানি উঠেছে। এগুলোতে মূলত বালু নদী ও বংশী নদী, তুরাগ নদী, ধলেশ্বরী নদীর পানি প্রবেশ করেছে।