ইহুদীবাদী দখলদার ইসরাইলী ও ভারতের বিমান ধ্বংসকারী দুনিয়া কাঁপানো গ্রুপ ক্যাপ্টেন, পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনের বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল আজম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
রবিবার (১৪ জুন) সকালে বার্ধক্য জনিত কারণে ঢাকাস্থ নিজ বাস ভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ এক কন্যা ও এক ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন।
করোনা ভাইরাসে পরিস্থিতিতে স্বাস্থবিধি মেনে তাকে পাবনায় আনা হচ্ছে না। তাকে রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
সাইফুল আজম বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজমের ভাই। ফখরুল আজমও পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
সারা বিশ্বের কাছে সাহসী, দক্ষ ও চৌকস এয়ারফাইটার সাইফুল আজম ১৯৪১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) পাবনা জেলার খগড়বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পর ১৯৫৬ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান যান। ১৯৬০ সালে তিনি জিডি পাইলট ব্রাঞ্চের একজন পাইলট হন।
সাইফুল আজম একমাত্র সামরিক পাইলট যিনি যুদ্ধে ৪টি বিমান বাহিনীর (বাংলাদেশ, জর্ডান, ইরাক ও পাকিস্তান) জন্য কাজ করেছেন। সেই সঙ্গে দুইটি ভিন্ন প্রতিপক্ষের (ভারত ও ইসরায়েল) বিরুদ্ধে লড়াই করার অনন্য কৃতিত্ব তার রয়েছে। ২০১২ সালে পাকিস্তান সরকারের মতে যেকোনো পাইলটের চেয়ে বেশি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করার রেকর্ড তার রয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ২০০০ সালে তাকে সম্মানিত করে এবং তিনি “পৃথিবীর বাইশজন “জীবিত ঈগলের” অন্যতম”।
পাবনার এই কৃতিবীরকে ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে জর্ডানের বিমান বাহিনীতে ডেপুটেশনে পাঠানো হয়। ডেপুটেশনে পাঠানো দুজন পাকিস্তানি অফিসারের মধ্যে তিনি একজন ছিলেন। অন্যজন ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম. সরোয়ার শাদ। ১৯৬৭ সালে ছয়দিনের যুদ্ধ শুরু হলে তিনি হকার হান্টার নিয়ে জর্ডানের বিমান বাহিনীর পক্ষে উড্ডয়ন করেন। দুই দিনের ব্যপ্তিতে তিনি দুইটি ভিন্ন স্থানে আক্রমণ পরিচালনা করেন। এজন্য তাকে জর্ডানের অর্ডার অব ইসতিকলাল ও ইরাকি সাহসিকতা পদক নুত আল শুজাত প্রদান করা হয়।
১৯৬৭ সালের ৫ জুন ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলা থেকে জর্ডানের মূল বেস মাফরাকের প্রতিরক্ষার জন্য তাকে ডাকা হয়। চারটির মধ্যে একটি বিমান পাকিস্তানিরা উড্ডয়ন করে। সাইফুল আজম একটি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করেন এবং আরেকটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ১৯৬৭ সালের ৬ জুন তাকে ইরাকি বিমান বাহিনীতে বদলি করা হয়। বিমানঘাঁটি আক্রমণের সময় তিনি পশ্চিম ইরাকে ছিলেন। ইসরায়েলি পাইলট ক্যাপ্টেন গিডিওন ড্রোর সাইফুল আজমের উইংমেনসহ দুজন ইরাকি যোদ্ধাকে গুলি করতে সক্ষম হন, কিন্তু তিনি গুলি করে তাকে ভূপাতিত করেন। তিনি ক্যাপ্টেন গোলানের বোমারু বিমানকেও ভূপাতিত করেন। তাদের দুজনকেই যুদ্ধবন্দি হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়।