আমি প্রতিদিন যে বাসে উঠি তার ড্রাইভার হেল্পার আমার ভাই, আমারে পিছনে বসিয়ে ঘাম ঝড়ানো রিকশাওয়ালা আমার ভাই। কাল যে ভ্যান গাড়িতে অফিস শেষে বাসায় ফিরলাম তার হাড় বের হয়ে যাওয়া বৃদ্ধ একভ্যানে ৫জন তুলেও আরেকজনের জন্য ৫মিনিট ধরে ডাকছিল কারন আরেকজন মানে ২০টাকা। এই ২০টাকা ছাড়া দিন চালাতে সমস্যা হয় যার সেও আমার ভাই।
আপনার টাকা আছে লকডাউন করে ১মাস ঘর থেকে বের না হতেই পারেন। এই শহরের কত শতাংশ মানুষ “দিন আনে দিন খায়” সেই হিসেব আপনার আছে? আপনি তো লকডাউন শেষে বা তার মাঝেই মাসের বেতন একাউন্টে পেয়ে যাবেন। এই মানুষ গুলার ব্যাংকে তো টাকা নাই। খাবে কি?
লকডাউন কিভাবে উপভোগ করবেন সেই প্লান কি করেছেন? অফিস যাবেন না এইটাই আপনাদের #লকডাউন নাকি বাসা থেকেই বের হবেন না? সেক্ষেত্রে ১৫দিন বা ১মাসের বাজার কি বাসায় ঢুকার আগেই কিনবেন নাকি ডেইলি ডেইলি বাজারে গিয়ে করবেন?
ডেইলি বাজারে গেলে অফিসেও যেতে পারবেন, দুইটাতে একই রিস্ক। আর একসাথে সারা মাসের বাজার কিনে নিজে বাঁচার চিন্তা করলে সেই বাজারে আমার ভাইদের জন্য কি ব্যবস্থা করবেন তা জানার অধিকার আমার আছে।
আমি সরকারি লক ডাউন ততক্ষন পর্যন্ত মানবো না যতক্ষন না আপনারা এই মানুষগুলার পেটের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। ইভেন সরকারি লকডাউনের কোন প্রয়োজনই নেই। আপনার অফিসের যেসব কাজ ঘরে বসে করা যায় তাদের ঘরে বসে করার সুযোগ দিন। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বা অন্য কোন এই ধরনের প্রতিষ্ঠান যদি চায় নিজেরা ফ্যাক্টরি বন্ধ রাখবে সেক্ষেত্রে কর্মচারীদের মাসের বেতন হাতে দিয়ে তারপর ছুটি দিন। সরকার ঘোষনা দিয়ে লকডাউনে গেলে এইসব প্রতিষ্ঠানের এসি রুমে বসাদের সমস্যা হবে না কিন্তু শ্রমিক গুলা খালি হাতে এই শহরে কিভাবে টিকবে?
এলিটদের বাঁচাতে গিয়ে এই মানুষগুলাকে কষ্ট দিয়েন না। এলিটের লকডাউন একধরনের পিকনিক যেটা আপনারা বাচ্চাদের স্কুল ছুটির সময়েই দেখেছেন। গরীবের লকডাউন শুধু তার ভাঙা ঘরের দরজাতেই পরবে না, তার পেটেও পরবে।
আবারো বলছি বাহিরের দেশের সাথে ২কোটি মানুষের শহরের তুলনা কইরেন না। করোনাতে না মরলেও মানুষগুলা না খেয়ে মরবে। এদের কথাও ভাবেন।
লকডাউন শেষে যখন দেখবেন আপনার ড্রাইভার নাই, আপনার কাজের সহকারি মেয়েটা নাই, ময়লা পরিষ্কার করা ছেলেটা নাই, রিকশাওয়ালা নাই, হকার নাই, লাশের শহরে শুধু কোট টাই পড়া এলিটদের নিয়ে কতদিন সার্ভাইভ করবেন? আপনার এলাকার ডাস্টবিনে হাতে করে নিয়ে ময়লা ফেলেছেন শেষ কবে?
আমি স্বার্থপরের দলে কোনদিনই ছিলাম না। বাঁচলে যত বেশি জনকে পারি সাথে নিয়ে বাঁচবো।
তাই ইউরোপ স্টাইলের লকডাউন চাই না, আমি এমন কিছু চাই যেখানে এই মানুষগুলার কথাও ভাবা হবে।