ওবায়দুল কাদেরের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন দলের নোয়াখালী জেলা সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী।
টেলিভিশনের এক টকশোতে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, ওবায়দুল কাদের ভাই ও নোয়াখালীবাসীর কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। রাগ করে কাদের ভাইকে কটাক্ষ করে কিছু কথা বলেছিলাম।
টেলিভিশনের এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে কাদের ভাইয়ের কাছে এবং নোয়াখালীবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
এটা নিয়ে কেউ অপরাজনীতি করার চেষ্টা করবেন না। অপরাজনীতি করে কেউ নোয়াখালীতে পার পাবেন না। বাংলাদেশের কোথায়ও পার পাবেন না।
কারণ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এখন প্রত্যেক জায়গায় শক্তিশালী। সহযোগী সংগঠন অনেক শক্তিশালী। তিনি বলেন, কোম্পানীগঞ্জের লোকজন আমাকে ভুল বুঝবেন না।
আমি কাদের ভাইয়ের ছোট ভাই না, ছোট ভাইয়ের চেয়ে বেশি। নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা এক সময় বিএনপির ঘাঁটি ছিল। আমি, রাহান, রুমি সবাই মিলে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি করেছি।
একরামুল করিম চৌধুরী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার নামোল্লেখ না করে তার উদ্দেশে বলেন, আপনি যে ভাষায় কথা বলেন, কবিরহাটের মানুষের গায়ে লাগে। কটাক্ষ করার কারণে কবিরহাটের মানুষ ক্ষিপ্ত হচ্ছে। ওবায়দুল কাদের আমাদের নেতা।
আপনাকে বিনীত অনুরোধ করব, নেতার বিরুদ্ধে কোনো অবস্থায় বিরূপ মন্তব্য করবেন না। তিনি বলেন, আমি নোয়াখালীকে উন্নয়নের যে শিখরে নিয়ে গেছি তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে।
এখানে শিল্পাঞ্চল, চার লেন সড়ক, বিমানবন্দর হয়েছে। তিনি বলেন, কাদের ভাইয়ের কাছে কোনো আবদার করলেই সঙ্গে সঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বলে দেন। ওই ভদ্র লোককে (মির্জা কাদের) বলব, উনি (ওবায়দুল কাদের) আপনার বড় ভাই। উনাকে আর বিব্রত করবেন না।
টকশোয় একরামুল করিম চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হয়, একটি নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থী ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলেন- তখন বিএনপির কথাগুলো সত্য হয় কিনা? এতে আওয়ামী লীগের ক্ষতি হয় কিনা? আবার জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব পড়বে কিনা? জবাবে একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, উনি (মির্জা কাদের) এমন কোনো ব্যক্তি না যে এগুলো প্রভাব পড়বে।
উনাকে নিয়ে কমেন্ট করার মতো কিছু নেই। চট্টগ্রাম সিটিতে ভোট হচ্ছে, সেখানে নৌকা বিজয়ী হবে। ভোট কারচুপি করার দরকার নেই। জনগণ উন্নয়নের জন্য ভোট নৌকায় দেবে।
আমি আগেই বলে রাখলাম। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আপনিসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও এমপিদের নিয়ে যে তির্যক মন্তব্য করা হয়েছে তার জন্য মির্জা কাদেরের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন কিনা জানাতে চাইলে একরাম বলেন, আমরা তো বয়কট করবই। জেলা পর্যায়ের সব নেতা বয়কট করবেন। সবাইকে বলব, প্লিজ বয়কট করবেন। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন করা হলেই রেজাল্ট দেখতে পারবেন।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা চাচ্ছেন উনাকে (মির্জা কাদের) কমিটি থেকে বাদ দিয়ে দিতে। উনার অসংলগ্ম কথাবার্তা কেন্দ্রীয় নেতাদের বিব্রত করে।
উনি দলের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না। কাদের মির্জাকে দলীয় ফোরামে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসেন, আমার দোষ থাকলে দলীয় ফোরামে কথা বলুন। ফোরামে যদি দোষ দেখাতে পারেন, তাহলে প্রয়োজনে কাদের ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে দল থেকে সরে যাব।
সঞ্চালকের অপর এক প্রশ্নের জবাবে একরাম চৌধুরী বলেন, আমার পরামর্শ থাকবে উনাকে (মির্জা কাদের) চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। এই মির্জা ভাই, ওই মির্জা ভাই ছিলেন না। উনি ভদ্রলোক ছিলেন।
এখন তার চিকিৎসা হওয়া দরকার। তিনি বলেন, আমাদের দলের ভিতরে কিছু মতভিন্নতা থাকবেই। তবে এটা ৫ শতাংশও না। নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ এখন অনেক বেশি শক্তিশালী।
শেখ হাসিনা যতদিন থাকবেন, ওবায়দুল কাদের যতদিন থাকবেন আমাদের নোয়াখালীতে দল আরও শক্তিশালী হবে। কেউ যদি অতি উৎসাহী হয়ে নোয়াখালীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চান তাহলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ কেউ ছেড়ে দেবে না।
তিনি বলেন, আমরা অস্ত্রের রাজনীতি করি না। এখানে আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী আছে। ওই ভদ্রলোককে (মির্জা কাদের) বলব, নোয়াখালী শান্তির শহর। অশান্তি করবেন না।
নোয়াখালী ভালো না লাগলে আমেরিকা চলে যান। কারণ আপনার আমেরিকা যাওয়ার অনেক কল্পকাহিনি শুনছি। প্রমাণসাপেক্ষে সেগুলো বলব।