অর্থপাচারের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার কুয়েতের আদালতে বিচার শুরু হয়েছে।
ফৌজদারি ওই মামলার বিচারে দুই বছরের বেশি সাজা হলেই পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল হতে পারে। তবে কুয়েতের আদালতের রায়ের সত্যায়িত কপি যথাযথ প্রক্রিয়ায় স্পিকারের কাছে পৌঁছাতে হবে।
এরপর স্পিকার সেই রায়ের আলোকে সিদ্ধান্ত নেবেন। আর সংসদ অধিবেশনে অনুপস্থিতির কারণে তাঁর সদস্য পদ বাতিল হতে দেড় বছরের বেশি সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
টানা অনুপস্থিতির কারণে পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল নিয়ে আলোচনার সময় এখনো আসেনি। আর পাপুল স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।
তবে তাঁর সদস্য পদ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে তখন, যখন তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কারণে কুয়েতের আদালতে কমপক্ষে দুই বছর সাজাপ্রাপ্ত হবেন।
তিনি আরো বলেন, সংসদ তখনই পাপুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে, যখন তাঁর বিরুদ্ধে একটা বিচারের রায়ের কপি সংসদের কাছে পৌঁছবে।
তবে সেটা ওই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সরকারের কাছে পাঠাতে হবে। অবশ্য আদালতের রায়ের সার্টিফায়েড কপিসহ স্পিকারের কাছে কেউ আবেদন করলে তা তিনি বিবেচনা করতে পারেন।
৬৭(১)-ক অনুযায়ী নির্বাচনের পর প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ না করলে এবং ৬৭(১)-খ অনুযায়ী বিনা অনুমতিতে একটানা ৯০ বৈঠক দিবস অনুপস্থিত থাকলে তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে।
কিন্তু সংসদ সদস্য পাপুলের অনুপস্থিতি মাত্র ১৭ দিন হয়েছে। তিনি পর পর তিনটি অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকলেও চলতি বছরের প্রথম অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন।
গত দুই বছরে সংসদের কার্যদিবস ছিল ১০৪টি। এ অবস্থায় সংসদে পাপুলের টানা অনুপস্থিতি ৯০ কার্যদিবস হতে দেড় বছরের বেশি সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অনুপস্থিতি ছাড়াও সংবিধান অনুযায়ী একজনের সংসদ সদস্য পদ বাতিল হতে পারে, কোনো উপযুক্ত আদালত যদি তাঁকে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করেন; তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর যদি দায় থেকে অব্যাহতি লাভ না করেন; তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন; তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন; তিনি যদি প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন এবং সংবিধানের বহুল আলোচিত ৭০ অনুচ্ছেদের আলোকে তিনি যদি তাঁর দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোট দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর তথ্য মতে, ফৌজদারি অপরাধে কুয়েতে আটক হয়েছেন এমপি পাপুল। এরই মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বিচারকাজ শুরু হয়েছে। গত ৭ জুন কুয়েত ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট তাঁকে আটক করে। তাঁর বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছেন প্রসিকিউশন।