এগিয়ে আসা প্রথম ‘মানুষ’ স্বপ্না ভৌমিক। তিনি আশাবাদী করলেন, স্বপ্ন দেখালেন এই ভয়াবহ দুর্যোগ রুখে দেবার ও দাঁড়াবার।
সেই রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রকে ভিক্ষে চাইতে হয়েছিল অক্সিজেন,কফিন সহ আরও অনেক কিছুই। আপামর মানুষ এগিয়ে এসেছিলেন অনাত্মীয় (তবুও আত্মীয়ের চাইতে বেশি) মানুষগুলোকে উদ্ধারে। সেইসব মানুষগুলো নীরবে চলে গেলেন কাজ শেষে।
গত বছর ২ সপ্তাহের ব্যবধানে চুড়িহাট্টা ও বনানী অগ্নিকান্ড শেষে, শহরে বসেনি একটি হাইড্রেন্ট। শহরে এরপরেও আগুন লেগেছে, মানুষ মরে গেছে বেশ কিছু। ‘গলাবাজি’ থামেনি।
বৈশ্বিক মহামারী হয়ে আবির্ভূত করোনার বিপর্যয় বাংলাদেশে ছোবল হানার আগে অন্তত ত্রিশদিন সময় ছিল নুন্যতম প্রস্তুতি নেবার। রাষ্ট্রের গলাবাজ’রা সে অমূল্য সুযোগ নেননি।
পরিনাম, আজ প্রয়োজনের মুহূর্তে Personal Protective Equipment (PPE) নেই। গ্লাভস নেই, মাস্ক নেই কিছু নেই। ঢাকা’র ফ্লাইওভার মানেই বাগেরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উন্নতি নয় মাননীয়রা। নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়া নার্স ও ডাক্তারসহ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত মানুষগুলোকে হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে কুমিরের সাথে লড়তে বলা হচ্ছে আজ!
আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে আজ। সেই নিরাপত্তা নিশ্চিতের মতো মহত্তম কাজে এগিয়ে এলেন প্রথম মানুষ স্বপ্না ভৌমিক। তিনি মার্ক্স অ্যাণ্ড স্পেন্সারের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর।
আজ থেকে মার্ক্স অ্যাণ্ড স্পেন্সারের Garments Products সরবরাহের সাথে যুক্ত কারখানাগুলো Personal Protective Equipment (PPE) বানানো শুরু করেছে। আগামী এক পক্ষকালের আগেই নুন্যতম ৪ লাখ PPE বিনামূল্যে সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে এটি। পোশাকের নকশা করে দিয়েছে BUET ALUMNI.
আজ পুনর্বার প্রমাণিত, দিনশেষে আপামর মানুষের প্রয়োজনে মানুষই এগিয়ে আসে। মাত্র একুশ দিন পূর্বে এই অসামান্য মানুষটির শ্রদ্ধেয় মা স্বর্গীয় সাধনা ভৌমিক পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন কিডনির অসুখে আক্রান্ত ছিলেন।
স্বপ্না ভৌমিকের নেয়া সাহসী পদক্ষেপ, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতে আমাদের কল্পনার অতীত সাহস যোগাবে সন্দেহ নেই। ৪ লাখ Personal Protective Equipment (PPE) রুখে দেবে অন্তত ২ লাখ সম্ভাব্য সংক্রমণ।
দিনশেষে একজন স্বপ্না ভৌমিক পার্থক্য গড়ে দিলেন। তাঁর এই উদ্যোগের জন্য তাঁর প্রতি নতজানু শ্রদ্ধা ও হৃদয় গভীরের ভালোবাসা। একইসাথে BUET ALUMNI’- এর সবাইকে কৃতজ্ঞতা। PPE বানাবার প্রতিটি পদক্ষেপে যুক্ত শ্রমিক, ফেব্রিক সরবরাহকারী সবার প্রতি আমাদের নতজানু শ্রদ্ধা।
করোনা’র মতো মহামারী ইতোপূর্বে আমরা দেখিনি।
আসুন আমরা নিজেদের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখি। এ এমন এক সময় যখন কোন ভুলের সুযোগ নেই। একটি সামান্য অবহেলা অথবা ভুলে চরম পরিণতি ডেকে আনবে।
বিবেক, নৈতিকতা এবং মানবিকতার চূড়ান্ত প্রমাণ এখন আমাদের রাখতে হবে। জন্মভূমি ও পৃথিবীর তথা মানুষের এমন ক্রান্তিলগ্নে, সবটুকু বিভেদ পাশে সরিয়ে এই দুঃস্বপ্নের কাল সম্মিলিতভাবে অতিক্রম করতে হবে আমাদেরকেই।
আমরা স্পষ্ট ও উদাত্ত আহবানই জানাচ্ছি।
এ শুধু জনস্বাস্থ্যের হুমকি নয়, জীবন ও মৃত্যুর এই সন্ধিক্ষন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের প্রতিটি খাত’কে স্থবির করার সক্ষমতা রাখে। করোনা’র বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ শুধুমাত্র রাষ্ট্র অথবা রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের নয়। এই যুদ্ধ বৈশ্বিক এবং প্রতিটি পৃথিবীবাসীর।
প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান, সামান্য ভুলের কারণে অগণিত মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলবার অধিকার কারও নেই। জন্মভুমি ও পৃথিবীর ক্রান্তিকালে আমরা ঐক্যে অটল থাকবো। আমাদের সম্মিলিত চেষ্টাই পরাজিত করবে এমন দুর্যোগ।
সাম্প্রতিক / সম