খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে, এ সময়ে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
সোমবার (১৫ মার্চ) একটি গণামধ্যকে মন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা আরো ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতও প্রস্তাবের সঙ্গে পাঠানো হয়েছিল।
গত ৮ মার্চ খালেদা জিয়ার শাস্তি স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানোর বিষয়ে মতামত দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আগের শর্তগুলো বহাল রাখার বিষয়ে তাদের মতামতের কথাও জানায় আইন মন্ত্রণালয়।
আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় দফায় ৬ মাসের মুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৪ মার্চ।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার উপধারা ১-এ খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে দেশের অভ্যন্তরে বিশেষায়িত চিকিৎসা নেওয়ার শর্তে এ মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
গত ২ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে দেখা করে এ-সংক্রান্ত আবেদন করেন।
জানা গেছে, শামীম এস্কান্দারের আবেদনে বলা হয়েছে, করোনাকালে খালেদা জিয়ার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এই সময়ে তাঁর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাও সম্ভব হয়নি।
তাই চিকিৎসার সুবিধার্থে তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতিও চাওয়া হয় আবেদনে। পরে ওই আবেদন মতামতের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সোমবার (০৮ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সাজা স্থগিতের সময়সীমা বাড়ানো এবং বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য পরিবারের যে আবেদন, সেটি আমাদের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছিল।
আমরা আগের মতো সাজা স্থগিত আরো ছয় মাস বাড়ানোর জন্য মতামত দিয়েছি। যে শর্তগুলো আগে ছিল—তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন, সেই শর্ত সাপেক্ষে এটিকে বাড়ানো হয়েছে।
আবেদনে তাঁরা একটি কথা লিখেছিলেন বিশেষায়িত চিকিৎসার ব্যাপারে, মতামতে বলা হয়েছে দেশের ভেতরে তিনি যদি বিশেষায়িত চিকিৎসা নেন, সরকারের তাতে কোনো আপত্তি নেই।’ তিনি বলেন, তবে তাঁর চিকিৎসার জন্য কোনো হাসপাতাল নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। তিনি স্পেশালিস্ট কাকে রাখবেন সেই স্বাধীনতা তাঁর রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিশ্চয়ই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য যাবে। কারণ আগেও এভাবেই হয়েছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দু-এক দিনের মধ্যে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ বাড়িয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত।
রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এ মামলায় আপিলে তার আরো পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত।
রায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।