ইসলাম ধর্মে বিদায়ের সময় অনেকেই আল্লাহ হাফেজ ও খোদা হাফেজ শব্দবন্ধ দুটি ব্যবহার করে থাকেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রীতিনীতির রকমফেরে একেক দেশে একেকভাবে জানানো হয় সম্ভাষণ। মুসলিমদের মধ্যে বিদায়ের সময় ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলার রীতি শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই আছে।
এখান থেকেই হয়তো তা এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে থাকতে পারে। বাংলাদেশে ১৯৮০’র দশকে প্রথম ‘আল্লাহ হাফেজ’ কথাটি শোনা যেতে থাকে। এর আগে বাঙালি মুসলমানরা প্রায় সর্বজনীনভাবেই বিদায়ের সময় খোদা হাফেজ বলতেন।‘আল্লাহ হাফেজ’ কথাটির উৎপত্তি নিয়ে অনেক লেখক-গবেষকই বিভিন্ন সময় লিখেছেন।
পাকিস্তান ও মধ্যএশিয়া বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক সৈয়দ হামাদ আলি ২০১২ সালে ব্রিটিশ দৈনিক দি গার্ডিয়ানে এক নিবন্ধে লিখেছেন, পাকিস্তানে ১৯৯০-এর দশকেও অধিকাংশ লোকই বিদায় নেওয়ার সময় ‘খুদা হাফিজ’ বলতেন, কিন্তু এখন সবাই- ধর্মীয় নেতা থেকে শুরু করে ফ্যাশন মডেল বা টিভির উপস্থাপক পর্যন্ত- সবাই ‘আল্লাহ হাফিজ’ বলছেন।
তিনি মন্তব্য করেন, এ পরিবর্তন পাকিস্তানের উদারপন্থিদের অস্বস্তির কারণ হয়েছে, তাদের মতে এটা পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে একটা পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। সৈয়দ হামাদ আলি বলছেন, ‘আল্লাহ হাফিজ’ কথাটা প্রথম ব্যবহার শুরু হয় পাকিস্তানে ১৯৮০’র দশকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের শাসনকালে।
তার মতে, ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল পিটিভিতে একজন সুপরিচিত উপস্থাপক প্রথম ‘আল্লাহ হাফিজ’ কথাটা ব্যবহার করেন। তবে জনসাধারণের মধ্যে এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে আরও অনেক পরে।মি. আলি লিখেছেন, এর পেছনে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, ফারসি শব্দ ‘খোদা’র অর্থ ‘ঈশ্বর’ যা যে কোনও ধর্মের ঈশ্বর বোঝাতে পারে, তাই আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করা উচিত যা শুধু মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনে উক্ত সৃষ্টিকর্তার নাম।তবে তিনি আরও লেখেন, মধ্যপ্রাচ্যের এক কোটি আরবিভাষী খ্রিস্টানও ঈশ্বর বোঝাতে ‘আল্লাহ’ শব্দটিই ব্যবহার করেন এবং আরবরা কখনোই পরস্পরকে বিদায় জানানোর সময় ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলেন না।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মুসলিম রীতিতে সম্ভাষণের নানা রকমফের। মরক্কো থেকে ইরাক পর্যন্ত বিশ্বের যে বিস্তীর্ণ ভুখণ্ডে আরবি ভাষাভাষীরা বাস করেন- তারা একে অপরের সঙ্গে দেখা হলে ‘আসসালামু আলাইকুম’, এবং বিদায় নেওয়ার সময় ‘মা’সালামা’ বলেন, তবে অঞ্চলভেদে কিছু স্থানীয় রীতিও আছে।ফারসি-ভাষায় ইরানে সাক্ষাতের সময় পরস্পরকে ‘সালাম’ এবং বিদায় নেওয়ার সময় ‘খোদা হাফেজ’ বলা হয়