মোঃইয়াসিন,সাভার প্রতিনিধি:
ঢাকার অদুরে সাভারের এক মায়ের চুল বিক্রি করে বাচ্চার দুধ কেনার মর্মান্তিক ঘটনার সংবাদ প্রকাশের নেপথ্যে বেরিয়ে এসেছে আসল তথ্য।
করোনার কারণে নয়, মূলত: স্বাভাবিক কারণে প্রায় দেড় মাস আগে তিনি ন্যাড়া হয়ে হকারদের কাছে মাথার চুল বিক্রি করেন।
এ ঘটনার ভূল তথ্য দিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস এবং সংবাদ পরিবেশিত হওয়ায় দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে যায়। সংবাদ পরিবেশনের পর থেকে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন অনেকেই।
এরপর বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সচেতন মহল সকলেই সাহায্য করতে গিয়ে জানেন অন্য কিছু।
একটি ফেসবুক আইডিতে দেখা যায়, সাভারের ব্যাংক কলোনী এলাকায এক ভাড়া বাসায় এক মা দুই. একদিন আগে করোনায় অভাবগ্রস্থ হয়ে চুল কেটে তা বিক্রি করে সন্তানের দুধ ক্রয় করেন। ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং এ নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে।
এরপর থেকে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন পুলিশ, র্যাব, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক বৃন্দসহ সর্বস্তরের লোকজন। খুঁজে বের করা হয় ব্যাংক কলোনীর সেই বাড়ি।
সেখানে ভাড়া বাসায় সাথী আক্তার (২২) থাকেন। তিনি দুই সন্তানের জননী, বড় ছেলে জুনায়েদ (৫) ও ছোট ছেলে জুবায়ের (২) স্বামীর নাম মানিক (২৫)। এরা কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন কাজের জন্য। রাজধানীর মিরপুরে বসবাস করেন এক বস্তিতে। সেখানে কাজ কর্ম না থাকায় সাভারের ব্যাংক কলোনীতে চলে আসেন গত দুই মাস আগে।
সাথী ও তাঁর স্বামী মানিক জানান, ব্যাংক কলোনীতে আসার পর তারা অপরিচিত বিধায় কারো কাছে কিছু না বলে কিছুদিন কষ্টে দিন যাপন করেন। প্রায় দেড় মাস আগে সাথী স্থানীয় হকারদের কাছে মাথার চুল বিক্রি করে পান এক’শ আশি টাকা। সাথীর মাথায় চুল না থাকার কারণটি প্রথম তাঁর প্রতিবেশী এক মহিলা জানান পাশ্ববর্তী একটি বাড়িতে। সেই বাড়ির লোকদের মাধ্যমে ফেসবুক পোষ্ট দিলে ঘটনা সকলে জানতে পারেন। ফেসবুকের পোষ্ট দেখে সকলে মনে করেন যে, করোনায় অভাবগ্রস্থ হয়ে সাথী তার মাথার চুল বিক্রি করে দিয়েছেন। এভাবে ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং সকলে মানবিক সাহায্য নিয়ে আসেন সাথীর বাসায়। সাথী বলেন, যখন চুল বিক্রি করেছি তখন করোনার কোন প্রভাব সংসারে পড়েনি। তবে, করোনায় এখন অভাবগ্রস্থ হয়ে পরেছেন তাঁরা।
ফেসবুকের পোষ্ট ও টেলিভিশন সংবাদ দেখে সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজিব, সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজুর রহমান জুম্মন, সহকারী কমিশনার (ভূমি)আবদুল্লাহ আল মাহফুজ, সাভার পৌর মেয়র হাজী আব্দুল গণি, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাসুদ চৌধুরী, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিন ঘটনাস্থলে যান। এছাড়াও র্যাব-৪ এর কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পুলিশের অনেক সদস্য এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ছুঁটে যান সাথীর বাসায়। এগিয়ে আসেন মানবিক সাহায্য নিয়ে।
সঠিক তথ্য উদঘাটন হলো যে ভাবে :
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার( ২১ এপ্রিল) বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত মাথার চুল বিক্রয় করে বাচ্চার দুধ কিনলেন মা; শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিজস্ব পদ্ধতিতে তদন্ত শুরু করি।
উপজেলা প্রশাসনের নিকট সর্বপ্রথম সংবাদকর্মীর ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি, তাৎক্ষণিকভাবে তাকে অনুরোধ জানানো হয় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন ও জনগণের জন্য বিরূপ প্রভাব সৃষ্টিকারী সংবাদ তুলে না ধরার জন্য এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে সহকারী কমিশনার ভূমি ত্রাণ সামগ্রী ও তার ব্যক্তিগত পক্ষ হতে অর্থ প্রদান করেন ।
আজ বুধবার (২২ এপ্রিল) সকালে উক্ত মহিলার নিকট হতে তথ্যে জানা যায়, যে প্রায় দেড় মাস পূর্বে তিনি তার মাথার চুল বিক্রয় করেছেন এবং সাভার এলাকায় এসেছেন প্রায় দু মাস পূর্বে। তৎপ্রেক্ষিতে এটা স্পষ্ট যে করোনা কালীন দুর্যোগের জন্য অর্থকষ্টে তিনি চুল বিক্রয় করেননি। দেড় মাস পূর্বে সে চুল বিক্রয় করেছে স্বাভাবিকভাবেই।
এভাবেই বেড়িয়ে আসে সঠিক তথ্য।
তিতি আরও বলেন, চুল বিক্রয় করে দুধ কেনার ঘটনা সম্পূর্ণ সাজানো এবং এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন বিভ্রান্তিমূলক । দেশের এই ক্রান্তিকালে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার যে অপচেষ্টা চলছে তা থেকে বিরত থেকে, সঠিক তথ্য নিয়ে গণমাধ্যমকে আরোও দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করার আহবান জানান তিনি।