এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় কে বা কারা দায়ী তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এজন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন আদালত।
সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক, সিলেট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা জজ (সাধারণ) সমন্বয়ে এ কমিটি করা হয়েছে।
কমিটিকে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটিকে ঘটনার শিকার গৃহবধূ, মামলার বাদী, এমসি কলেজের অধ্যক্ষ, হোস্টেল সুপার, এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী (যদি খুঁজে পাওয়া যায়) ও এই কমিটি যাদের প্রয়োজন মনে করবে, তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত বলেছেন, সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে এ ধরনের ঘটনায় সর্বোচ্চ আদালত নির্লিপ্ত থাকতে পারে না।
তদন্তকাজে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরঞ্জাম সরবরাহ করতে সিলেটের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কমিটির সদস্যদের নিরাপত্তা দিতে সিলেট পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেছেন আদালত। রুলে নিরাপরাধ গৃহবধূর নিরাপত্তা দিতে অবহেলা ও ব্যর্থতা এবং কলেজ ক্যাম্পাসে অছাত্রদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ ও হল সুপারের নীরবতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
শিক্ষা, আইন ও স্বরাষ্ট্র সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য, এমসি কলেজের অধ্যক্ষ, সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার, হল সুপারসহ ৯ জনকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া আদালত আগামী ১৮ অক্টোবর পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে এনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানানোর পর আদালত এ আদেশ দেন।
আবেদনের ওপর শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ চৌধুরী।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে এমসি কলেজে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার হন গৃহবধূ। স্বামীকে বেঁধে মারধর করে ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে ধর্ষণ করে।
খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। এরপর ওইদিন রাতেই শাহপরাণ থানায় মামলা করেন নির্যাতিতার স্বামী। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখ এবং আরো অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনকে আসামি করা হয়।
আসামিরা হলো- এম. সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসামিদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র।
২৬ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান আনোয়ার হোসেনকে আহ্বায়ক, হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জীবন কৃষ্ণ ভট্টাচার্যকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এরই মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় কোনো ঘাটতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।