গত ১০ সেপ্টেম্বর’২০ তারিখে কানাডার মন্ট্রিল ভিত্তিক অন লাইন সংস্থা ” ফেস দ্যা পিপল” পাবনা-৪ উপ- নির্বাচনে দুই প্রার্থীকে মুখোমুখী করার অনুষ্ঠানের(ভার্চুয়াল) আয়োজন করেছিলেন। সেখানে শুধুমাত্র একজন প্রার্থী, তথা হাবিব ভাই উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অামাকে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়া হয় কিন্তু প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবে আমি সংযুক্ত হয়েও কথা বলতে ব্যর্থ হই। তবে অন্য দুইজন পর্যবেক্ষক উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানটিকে মোটামুটি প্রাণবন্ত করেছিলেন। তাঁদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন।
হাবিবুর রহমান হাবিব ভাই বয়সে আমার অনেক সিনিয়র এবং প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ এবং নিঃসন্দেহে ঝানু রাজনীতিক। তাঁর কর্মকান্ড বিশেষ করে ৯০’এর গণ-আন্দোলনে তাঁর ভুমিকা তাঁকে উচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে। সুতরাং তাঁর মতো ব্যাক্তিকে রাজনৈতিক জ্ঞান, পরামর্শ বা উপদেশ দেওয়ার প্রচেষ্টা আমার মত মানুষের জন্য ধৃষ্টতা এবং ঔদ্ধত্য প্রকাশের সামিল ; বিধায় আমি তা না করে শুধু মাত্র আমার অভিব্যাক্তি প্রকাশ করতে চেয়েছি।
রাজনীতির বিজ্ঞানে নির্বাচনকে তিনটা কাজে ব্যবহারের কথা বলেছে। এক)নির্বাচনে জয়লাভ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা; দুই) নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসাবে গ্রহণ করা এবং তিন) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সংগঠনকে দৃঢ় ভিত্তির উপর দাড়ানোর কাজে লাগানো।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রথম দুইটা কর্মসুচীর কার্যকারিতা আছে বলে মনে হয় না। কারণ একটা উপ-নির্বাচনে জয়লাভ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ নেই ( যদি না ডাঃ আলাউদ্দিন কিংবা হাসিবুর রহমান স্বপনের ন্যায় চরিত্র ধারণ করা যায়)। বড় জোর সংসদে যেয়ে হারুন অর রশিদ কিংবা রুমিন ফারহানার ন্যায় ভুমিকা পালন করা যেতে পারে, তবে তাতে দেশের রাজনীতির গুণগত কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। আবার একটি উপ-নির্বাচনে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে আন্দোলন সৃষ্টির বাস্তবতাও নাই। সুতরাং চলমান উপ-নির্বাচন সাংগাঠনিক ভিত্তিকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচনে বিজয়ের প্রচেষ্টা ব্যাতিরেকে অন্য কোন কাজে লাগানোর সুযোগ নাই। অথচ সেই জায়গায় অনেক ঘাটতি রয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে।
এ কথা অনস্বীকার্য্য যে, শুধু ঈশ্বরদী- আটঘরিয়া নয় সারা বাংলাদেশের কোথাও বিএনপির কর্মী, সমর্থক কিংবা শুভাকাংখীর আকাল নাই, আকাল শুধু ঐক্যের। গত নির্বাচন থেকে গতকালের অনুষ্ঠান পর্যন্ত বিভক্ত বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করার কোন উদাত্ত আহবান এ পর্যন্ত কানে আসে নাই। নেতা হিসাবে চালকের আসনে বিধায় এ দায়িত্ব হাবিব ভাইয়ের। নির্বাচন সমাগত কিন্তু ঈশ্বরদী পৌরসভায় কোন কমিটি নাই। অথচ একটা নির্বাচনে শুধু ওয়ার্ড কমিটি নয় কেন্দ্র কমিটির প্রয়োজন হয়। কমিটি ছাড়া কর্মী সমর্থকগণ কোন ছত্রছায়ায় দাঁড়িয়ে প্রচার প্রোপাকান্ডা চালাবেন বা নির্বাচনের দিনে ভুমিকা রাখবেন। যদিও বক্তব্য দিলেই ঐক্য হয় না, এর জন্য কিছু সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপন্থা আছে- তা অবশ্যই অনুসরণ করতে হয়। তবে সবার আগে প্রয়োজন সদিচ্ছা। অন্যদিকে পার্টির সকল পর্যায়ের নেতা কর্মির উচিত পার্টির সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন করা। শুধু বিরোধীতার কারনেই বিরোধীতা করা নিঃসন্দেহে একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত।
একজন নেতার ঢাকায় দুই চারজনকে ডাক্তারের সিরিয়াল নিয়ে দিলেই দায়িত্ব পালন হয় না। প্রয়োজন এলাকার সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য সেবার হাল অবস্থা আমলে নেওয়া। ঈশ্বরদী হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবার অবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়া, সামাজিক অপরাধ, মাদকের বিস্তার প্রতিরোধ, রুপপুর মোড়ের ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীদের ক্ষতিপুরনের এবং পাকশী রক্ষার আন্দোলন ইত্যাদি সমস্যার সমাধানে সরাসরি অংশ গ্রহণ করতে না পারলেও স্থানীয় বা জাতীয় পত্রিকায় বিবৃতি কিংবা টক’শো অগত্যা গতকালের অনুষ্ঠানে বিষয় সমুহ নিয়ে আলোচনা করে সমস্যা সমুহের সমাধান কিংবা ক্ষতিপুরনের দাবী করা খুব কঠিন কাজ ছিল না। এতে সমস্যার সমাধান হয়ে যেত না, তবে এলাকার জনগনের প্রতি সহমর্মিতা, দায়বদ্ধতা এবং কর্তব্যনিষ্ঠার প্রকাশ পেত এবং জনগন হয়ত বা আস্থায় নিতেন।
বিএনপির রাজনীতির সংস্কৃতি হচ্ছে কোন রকমে একটা ইউনিটের শীর্ষ পদ হাসিল করতে পারলেই তিনি হয়ে যান লর্ড। কারন বিএনপির পতাকা হাতে থাকলেই তাঁর কর্মী বা সমর্থকের অভাব থাকে না। তিনি যা মনে করবেন তাই হবে, কারও সংগে কোন আলোচনার প্রয়োজন হয় না, আবার জবাবদিহিতার বালাইও নাই। এ ভাবে স্বেচ্ছাচারিতা বা একনায়ক সুলভ মনোভাব নিয়ে দল পরিচালনা করলে একটি দল বিকশিতও হতে পারে না বিধায় কাংখিত লক্ষ্যেও পৌঁছাতে পারে না
( লেখক শমিত জামান সাংবাদিক কলামিস্ট)