বাংলায় আমরা যেটাকে বলি পিচ সেটাই আসলে বিটুমিন। দেশের রাস্তা নির্মাণ বা মেরামতের জন্য এই বিটুমিন লাগে। এই হাইড্রো কার্বন মুলত টিনের ড্রামে করে বিদেশ থেকে আমদানি করে সেটাকে পাথরের চিপস এর সাথে জ্বালিয়ে এরপর রাস্তা তৈরি করা হয়। অনেকেই হয়ত দেখেছেন রাস্তার পাশে কালো এই পিচ জ্বালানো হচ্ছে। শ্রমিকরা পিচের ভেতর পাথর দিয়ে নাড়ছে।
সড়ক ও জনপথের অধিনে দেশে মোট রাস্তার পরিমান প্রায় ২২,০০০ কিলোমিটার। এলজিইডি এর অধিনে রাস্তার পরিমান ও অনেক। সঠিক ভাবে বলতে গেলে দেশে কার্পেটের গ্রামীন সড়ক আছে ১,০৫,০০০ কিলোমিটার এবং এমন মোট সড়কের পরিমান ৩,৫৪,০০০ কিলোমিটার। আর প্রতিনিয়ত নতুন সড়ক তৈরি হচ্ছে, বর্তমান সড়কের মেরামত বা চওড়া করা হচ্ছে। নতুন ইকোনমিক জোন গুলি করার কারনে চার লেনের সড়ক নির্মাণ চলছে। নতুন এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ চলছে। কিন্তু এত কিছুর জন্য যে পিচ বা বিটুমিন লাগে সেটি এতদিন আমদানি করেই মেটানো হত।
বাংলাদেশে প্রতি মাসে বিটুমিনের চাহিদা ৪২,০০০ মেট্রিকটন। বছরে ৫ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি। কিন্তু দেশের একমাত্র রিফাইনারি হল ইস্টার্ন রিফাইনারি। এখানে তেল পরিশোধন করে উপজাত হিসাবে যেই পরিমান বিটুমিন পাওয়া যায় তা আমাদের মোট চাহিদার মাত্র ১০%। কিন্তু মনে রাখবেন ইস্টার্ন রিফাইনারির থেকে পাওয়া এই বিটুমিন খুব উৎকৃষ্ট মানের।
কিন্তু রাস্তা নির্মাণের জন্য বিদেশ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে যেই পিচ আনা হয় এর অধিকাংশ এর গুনগতমান অতটা ভাল নয়। এর ফলে রাস্তা গুলিও টেকসই হচ্ছে না।
বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের সর্ববৃহৎ বিটুমিন প্লান্ট চালু করছে যেটার বছরে প্রায় ৮,৫০,০০০ টন বিটুমিন দেশেই তৈরি করবে। যদিও তাদের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৭,০০,০০০ মেট্রিকটন। এই কারখানা চালু হলে আমাদের আর বিটুমিন আমদানি করতে হবে না যা আমরা এতদিন ইরান, ভারত, পাকিস্তানের মত দেশ থেকে আমদানি করতাম।
এদিকে দেশের সর্ববৃহৎ তেল পরিশোধনাগার করতে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। যখন তাদের তেল শোধনাগার নির্মাণ শেষ হবে তখন বিটুমিনের কাচামাল ও আর আমদানি করতে হবে না। রিফাইনারির বাইপ্রোডাক্ট থেকেই তখন আমাদের দেশের পূর্ন চাহিদা তো মিটবেই সেই সাথে রপ্তানি করবার সুযোগ তৈরি হবে।
প্রতিবছর বিটুমিনের চাহিদা ১০-১৫% বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশাকরি এই কারখানা হলে আমরা চাহিদার বেশি উৎপাদিত পণ্য নেপাল, ভারত বা অন্য দেশে রপ্তানি করতে পারব।
সেই সাথে বসুন্ধরা তাদের এই প্লান্টে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেশিনারিজ বসিয়েছে। তাই এখান থেকে উৎকৃষ্ট মানের বিটুমিন পাওয়া যাবে। ফলে টেন্ডারের মাধ্যমে নিম্নমানের বিটুমিন আনা বন্ধ হবে। এতে রাস্তাগুলির স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি পাবে।