যেসব দেশ ভাষাণচর পছন্দ করে না, তাদের উচিত রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে নিয়ে যাওয়া অথবা তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেয়া। ভাষাণচর দ্বীপে পাঠানো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজার আশ্রয়শিবিরে পাঠানো প্রসঙ্গে বার্তাসংস্থা এএফপির কাছে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় এমনভাবেই সরকারের অবস্থান তোলের ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন।
সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে ভাষাণচর দ্বীপে পাঠানো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজার আশ্রয়শিবিরে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। এমন আহ্বান জানিয়ে তিনি একটি চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
ওদিকে সুবিশাল ও মানুষে গাদাগাদি করে থাকা শরণার্থী শিবিরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছেই। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থা থেকে মে মাসের শুরুর দিকে উদ্ধার করা হয় কয়েকশত রোহিঙ্গাকে। তাদের করোনা ভাইরাস থাকতে পারে এই আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বিদ্যমান শরণার্থী শিবিরে পাঠায়নি বলে জানিয়েছে ঢাকা।
তাদেরকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে ভাষাণচর দ্বীপে। এর প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ বলেছেন, ভাষাণচর দ্বীপে যে ৩০৮ জন শরণার্থীকে রাখা হয়েছে তাদেরকে কোয়ারেন্টিন সম্পন্ন হওয়ার পর মূল শিবিরে ফিরিয়ে নেয়া উচিত।
কারণ, বর্ষা মৌসুমে ওই দ্বীপটি ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে এবং ভয়াবহ ঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ওই দ্বীপে শরণার্থীদের কতদিন রাখা হবে এ বিষয়ে ঢাকা এখনও কিছু বলেনি।
চিঠিতে কী লেখা আছে
এর প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনকে শুক্রবারে লেখা চিঠিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, সমুদ্র থেকে যাদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে তাদেরকে হয়তো জনস্বাস্থ্য বিষয়ে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তারা শরণার্থী হিসেবে যে সুরক্ষার দাবিদার তা তাদের অবশ্যই দেয়া উচিত। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য যে মানবিক সেবা দেয়া হচ্ছে তার সুবিধা তাদেরও পাওয়া উচিত। কোয়ারেন্টিন সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর তাদেরকে কক্সবাজারে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগ দিতে দেয়া উচিত।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
বার্তা সংস্থা এএফপি’কে মোমেন বলেছেন, তার হাতে ওই চিঠি আসেনি। তবে তিনি বলেছেন, যারা ভাষাণচর নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের উচিত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের দেশে নিয়ে আশ্রয় দেয়া। উল্লেখ্য, গত বছর এক লাখ মানুষের বসবাসের উপযোগী করে ভাষাণচর গড়ে তোলা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এএফপি’কে বলেন, আমরা আর কোনো রোহিঙ্গাকে চাই না। তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার মতো আমাদের আর জায়গা নেই। যেসব দেশ ভাষাণচর পছন্দ করে না, তাদের উচিত এদেরকে তাদের দেশে নিয়ে যাওয়া অথবা তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ প্রয়োগ করা উচিত যাতে তারা রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজেদের রাজ্য রাখাইনে ফিরিয়ে নেয়। এর আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, শরণার্থীদের যতদিন রাখাইনে ফিরিয়ে নেয়া না হবে ততদিন তাদেরকে ভাষাণচরে আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করতে হবে।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন। এর বেশির ভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসে ঠাঁই নিয়েছেন। সেখানে গত সপ্তাহে তিন রোহিঙ্গার করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। এরপর থেকেই সেখানে যাতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য কাজ করছে ইমার্জেন্সি টিমগুলো।