বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য রাষ্ট্র, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেসব মুসলিম অভিবাসী শ্রমিক কাজ করছেন, তাদের চাকরি বহাল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বুধবার (২২ এপ্রিল) করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় এক বিশেষ বৈঠকে বসেন ওআইসির নির্বাহী কমিটির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ওই বৈঠকে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে বাংলাদেশ, তুরস্ক, সউদী আরব, গাম্বিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নাইজার- এই ছয়টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা উপযুক্ত প্রতিনিধি ও ওআইসি মহাসচিবের অংশগ্রহণে নির্বাহী কমিটির এই বিশেষ বৈঠকটি সউদী আরবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিবাসী শ্রমিকদের চাকরি বহাল থাকলে করোনায় সৃষ্ট বেকারত্বের কারণে হওয়া ক্ষতি কমানো ও সামাজিক সমতা বজায় রাখা সম্ভব হবে। এই মহামারির প্রকোপ না কমা পর্যন্ত মুসলিম অভিবাসীদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং তাদের চাকরি রক্ষার ব্যবস্থা করার জন্যে মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে নিয়ে কাজ করতে ওআইসি সচিবালয়কে পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ।
চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং সরঞ্জামাদি নিয়ে যেসব গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদের করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একত্রিত করে এই মুহূর্তে অতি প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামাদি তৈরির কাজে লাগাতে ওআইসি সচিবালয় এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে আহ্বান জানায় বাংলাদেশ। এছাড়া প্রয়োজনীয় সম্পদ বণ্টনের মাধ্যমে এই মহামারির সময়ে বিশ্বব্যাপী যেসব মুসলিম শরণার্থী রয়েছে, তাদের দেখভালের বিষয়টির নিশ্চয়তার জন্য বাংলাদেশ সদস্য দেশগুলোর সমন্বিত প্রয়াসের ওপর গুরুত্বারোপ করে।
সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন সদস্য রাষ্ট্রগুলোর স্বেচ্ছা অনুদানের মাধ্যমে একটি কোভিড-১৯ রেসপন্স ও রিকোভারি তহবিল গঠনের প্রস্তাব রাখেন।
ওআইসির ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক গ্রুপ কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্প্রতি ২৩০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেয়। এছাড়া ওআইসির আরেকটি সংস্থা ইসলামিক সলিডারিটি তহবিল সদস্য রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত সদস্য দেশগুলোকে তাদের স্বাস্থ্য খাতে সক্ষমতা বাড়াতে একটি আলাদা হিসাব খুলেছে। ওআইসি সচিবালয়ের আওতায় এসবের একটি সমন্বয় ব্যবস্থা তৈরির জন্য সভায় আলোচনা হয়।
বৈঠকে বিরোধপূর্ণ এলাকায় বিবদমান প্রতিপক্ষগুলোকে অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য ওআইসি নির্বাহী কমিটি আহ্বান জানায় এবং সংশ্লিষ্ট যুদ্ধাহত দেশগুলোতে খাদ্য সহায়তা প্রদানে মানবাধিকার কর্মীদের অনুরোধ জানানো হয়।
এছাড়া কোভিড-১৯ ও এর পরবর্তী অবস্থা মোকাবিলার জন্য ওআইসির নির্বাহী কমিটি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক সংস্থাকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ঋণ মওকুফসহ সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার বন্দোবস্ত করার জন্য ভেবে দেখতে আহ্বান জানায়।