সাম্প্রতিক আতঙ্কের আরেক নাম করোনা ভাইরাস। চিনের উহান শহর থেকে উৎপত্তি হওয়া মহামারী এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজারের অধিক মানুষের প্রানহানি ঘটে। শুধু লক্ষ্য করা যায় চারদিকে মৃত্যুর মিছিল। অদৃশ্য করোনাভাইরাসের ভয়ংকর ছোবলে ক্রমেই তছনছ হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের স্বাভাবিক পরিস্থিতি।সাধারন জীবন যাপন করা যেন এক যুদ্ধতে পরিনত হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বই এখন এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে অর্থনীতি। বাড়ছে বেকারত্ব ও ক্ষুধা। ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশেও সামাজিক পর্যায়ে ছড়াচ্ছে ভাইরাসটি। দিন দিন আক্রান্তের ও মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের নানাবিধ সিদ্ধান্তের ফলে দেশের সার্বিক অবস্থা এখনো নিয়ন্ত্রণেই বলা যায়। দেশের বিরাজমান সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মানবিক কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই দুই দফায় রফতানি খাত ও সব শ্রেণির ব্যবসায়ীদের জন্য প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত চিকিৎসক, পুলিশ, সেনা বাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে বিশেষ বিমা কর্মসূচি। দায়িত্ব পালনকালে তারা করোনা আক্রান্ত হলে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং কেউ মারা গেলে ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা সহায়তা পাবেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হারও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তাছাড়া দেশের দুস্থ, গরিব ও অসহায় মানুষের সহায়তার জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মতৎপরতা চালানোরও নির্দেশ দিয়েছেন মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের পাশাপাশি বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছে দুর্গত মানুষের সেবায়। তবে গার্মেন্ট খাতসহ কিছু কিছু সেক্টরের সিদ্ধান্তহীনতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে আমাদের দেশেও বিপদ ঘিরে ফেলছে। অনেকেই ঘরে থাকছেন না। মানছেন না সরকারের নির্দেশনা। চারিদিকে বিপদ দেখেও যেন ঘরমুখী হচ্ছেনা জন-সাধারন।
দেশের এই ক্রান্তিকালে অবাধ তথ্যপ্রবাহ সচল রাখতে সাংবাদিকরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের এক ক্যামেরা পার্সন আক্রান্ত-ও হয়েছেন মহামারি এ করোনা ভাইরাসে। চারিদিকে শুধু আতঙ্ক ও আক্রান্তের ভয়। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত সাংবাদিক সমাজ এই দূর্যোগ মোকাবেলায় তথ্য প্রচারের মাধ্যমে নিজেদের সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনা না করে দেশের জন্য অবিরতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।করোনার সর্বশেষ তথ্য পরিবেশন করে জনগণকেও সচেতন করছে গণমাধ্যমগুলো।
করোনা মোকাবেলায় সরকারের নির্দেশে পুরো দেশ কার্যত ‘লকডাউন’-এ রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ ঘর ছেড়ে বের হচ্ছে না। তাই সংবাদপত্র পাঠকের সংখ্যা অকল্পনীয় হারে হ্রাস পেয়েছে ও পাচ্ছে। দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে সংবাদপত্র ছাপা ও সরবরাহের কাজ।
কিন্ত এত প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেও নিয়মিত সংবাদ প্রচার ও নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে সংবাদকর্মীরা। আশ্চর্যের বিষয় হলো, অধিকাংশ পত্রিকা অফিসে নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি, নেই সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই ও স্যানিটাইজার। বহু পত্রিকা, অনলাইন ও ইলেট্রনিক মিডিয়ায় বেতনও হচ্ছে না নিয়মিত।
পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে ও নানা সমস্যার জন্য ইতোমধ্যেই মানবজমিন, আলোকিত বাংলাদেশ, দৈনিক জনতা, ডেইলি ইনডিপেনডেন্ট, বাংলাদেশের খবরসহ বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা ঘোষণা দিয়ে প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহর এবং গ্রাম এলাকাতেও নির্বিঘ্নে পত্রিকা বিলি করতে পারছে না হকার-এজেন্টরা। বহু বাসাবাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না তাদের। ‘সংবাদপত্রের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায় না’-একথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বার বার বলার পরও পাঠকের মনের সন্দেহ দূর হচ্ছে না।
ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন সংবাদপত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সারা দেশের হকার, এজেন্ট, বিট পিয়ন, প্রেস শ্রমিক-কর্মচারী, পরিবহন সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারীসহ হাজার হাজার মানুষ। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত এই বিপুলসংখ্যক হকার-এজেন্টের জীবন যেমন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, তেমনি সাংবাদিকদের বিরাট অংশও আজ চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে।দেশের এ ক্রান্তিকালে নিজেদের জীবনের তোয়াক্কা না করে পরিবার পরিজন ছেরে সাংবাদিকরা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ।
কিন্ত এ সকল সাংবাদিকরা প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন। তথ্যপ্রবাহ সচল রাখতে জন-সাধারন যেখানে ঘরমুখী সেখানে সাংবাদিককরা করোনা ভাইরাসের চেয়েও নিজের দেশকে এ দুর্যোগ থেকে রক্ষায় জীবন বাজি রেখে মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় ভুমিকা পালন ও সঠিক সংবাদ প্রকাশ করে চলেছে।
সাংবাদিককের প্রনোদনা সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যান পরিষদের( বাসকপ) এর পক্ষ থেকে সাংবাদিকবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা আপনার সুদৃষ্টি কামনা করছি। আশা করছি সাংবাদিকদের এ দু;খ লাঘবে আপনি সর্বোচ্চ সহায়তা করবেন।