সৌদি অ্যারাবিয়ান মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিজ (সামি) বাংলাদেশে বৃহত্তর সৌদি বিনিয়োগ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি এমআরও (মেইন্টেইনেন্স, রিপেয়ার অ্যান্ড অপারেটিং সাপ্লাই) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে।
এটি হবে বিমান চলাচল, জ্বালানি ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে ১৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনার অংশবিশেষ।
বিশ্বমানের সামরিক পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহ করার টেকসই প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের মে মাসে সামির যাত্রা শুরু হয়।
আরও পড়ুনঃ টাকা ছাপাতে হবে, দরিদ্র মানুষের হাতে দিতে হবে: অভিজিৎ ব্যানার্জি
এর লক্ষ্য ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক সামরিক শিল্প খাতে শীর্ষস্থানীয় অবস্থান অধিকার করা এবং বিশ্বের শীর্ষ ২৫টি প্রতিরক্ষা কোম্পানির একটিতে পরিণত হওয়া। তাছাড়া সৌদি আরবের ৫০ ভাগেরও বেশি সামরিক প্রয়োজন স্থানীয়ভাবে মেটানো। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বস্ত, দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বও সৃষ্টি করতে চায়।
ব্রিটিশ সরকার ১৯৩১ সালে বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলায় একটি বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। এটি আসামের প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল এবং বার্মায় মিত্র বাহিনীর অভিযানে সহায়তা করার সময় এই অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম এয়ারফিল্ডে পরিণত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার পর বিমান ঘাঁটিটি পরিত্যক্ত হয়।
১৯৫৮ সালে এতে সীমিত বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হলেও তা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় ১৯৬৫ সালে আবার বন্ধ করে দেয়া হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর লালমনিরহাটকে নতুন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদরদফতরে পরিণত করার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু ৪,০০০ মিটার রানওয়ে, বিশাল র্যাম্প, ট্যাক্সিওয়ে ও হ্যাঙ্গার বানানোর পর তা পরিত্যক্ত হয়।
এয়ারফিল্ডটি পরিত্যক্ত থাকলেও বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষ ১৯৮৩ সালে লালমনিরহাটে একটি কৃষি প্রকল্প হাতে নেয়। এছাড়া এটি পরিণত হয় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কেয়ার অ্যান্ড মেইনটেইনেন্স ইউনিটে।
আরো সাম্প্রতিক সময়ে লালমনিরহাটকে আবারো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এবার একে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে ভারত, ভুটান ও নেপালকে ঢাকার সাথে সংযোগস্থলে পরিণত করার পরিকল্পনা করা হয়। প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর নাগাদ দিনে তিনটি করে বিমান ফ্লাইট পরিচালনা করা।
প্রকল্পটির দায়িত্ব দেয়া হয় বিমানবাহিনীকে। মার্চে পরীক্ষামূলক ফ্লাইট চলাচল শুরু হয় বাশার এবি তেজগাঁও থেকে ১০৩ স্কয়াড্রোনের ব্যবহৃত দুটি লেট এল-৪১০ইউভিপি-ই২০ লাইট টারবোপ্রপসের মাধ্যমে।
বাংলাদেশের অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড অ্যারোস্পেস স্টাডিজের বিকাশ ও উন্নতির লক্ষ্য নতুন প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটির ভেন্যুতেও পরিণত হয় লালমনিরহাট। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি শাখা রয়েছে রাজধানী নগরী ঢাকার আশকোনায়। বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট সাতটি ফ্যাকাল্টি, চারটি ডিপার্টমেন্ট ও চারটি ইনস্টিটিউট থাকবে। এর ভিসি হবেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সিনিয়র কোনো কর্মকর্তা।
বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স একাডেমি, ফ্লাইট ইনস্ট্রাকটর স্কুল, ফ্লাইট সেফটি ইনস্টিটিউট কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, অ্যারোনটিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড অফিসার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আন্ডার গ্রাজুয়েট ও পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্সসহ একাডেমিক ক্লাস শুরু হওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।
সৌদি আরবের তহবিলে নতুন এয়ারক্রাফট মেইনটেইনেন্স অ্যান্ড রিপেয়ার হ্যাঙ্গার স্থাপন করা হবে ক্যাম্পাসে। খবর পাওয়া যাচ্ছে যে সরকার সেখানে একটি বিমান নির্মাণ কারখানা প্রতিষ্ঠার আশা করছে।
গত চার বছরে চারবার বাংলাদেশের দশম ও সবচেয়ে দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের মাধ্যমে ধীরে ধীরে দেশটির সাথে সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেড়েছে।
সৌদি আরব ও বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি সই করেছে। এতে ইয়েমেন সীমান্তে স্থলমাইন পরিষ্কার করার কাজে সৌদি বাহিনীকে সহযোগিতার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ।
সৌদি বিনিয়োগ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের মার্চে দুই সৌদি মন্ত্রীর নেতৃত্বে সৌদি এক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। আর ২০১৯ সালের আগস্টে বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মসিউজ্জামান সেরনিয়াবাত সৌদি আরব সফরে যান। তিনি কিং ফয়সাল এয়ার একাডেমি ও আলসালাম অ্যারোস্পেস ইন্ড্রাস্টিজ পরিদর্শন করেন। বাংলাদেশের নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও এমআরওর সম্ভাব্য মডেল পাওয়ার জন্যই ছিল এই পরিদর্শন।
সেরনিয়াবাত সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ফয়াদ বিন হামাদ বিন রাকেদ আল রুওয়ালি, সৌদি বিমানবাহিনীর কমান্ডার তুর্কি বিন বন্দর বিন আবদুল আজিজের সাথেও সাক্ষাত করেন। ধারণা করা হচ্ছে, সিনিয়র কর্মকর্তারা লালমনিরহাটে এমআরও পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।