ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বিপদে আছে বাংলাদেশ। দিল্লীর দাঙ্গার ঘটনা সেই বিপদকে আরও বড় করেছে। মুজিব জন্মশত বর্ষের প্রধান বক্তা মোদি। এটি নরেন্দ্র মোদি হিসাবে নয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাকে নির্বাচন করা হয়েছিলো। বাংলাদেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী বন্ধু দেশ ভারত। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সহযোগী এই দেশ শুধু যুদ্ধে সহায়তা নয়, এক কোটি শরণার্থী মানুষকে আশ্রয় দিয়ে তাদের জীবন বাঁচিয়েছে। মুজিব জন্মশত বার্ষিকীতে নিশ্চয়ই বাংলাদেশের জন্মশত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে মূল বক্তা করার কথা ছিলো না।
এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচন করার পিছনে যেমন রাজনীতি আছে, দিল্লীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোদির বাংলাদেশে আসার বিরোধিতার পিছনেও আছে আরেক রাজনীতি। বাংলাদেশের বিপদ হলো এই স্বল্প সময়ের মধ্যে মোদির বিকল্প বক্তাও ঠিক করা সম্ভব নয়। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে বাদ দেয়াও সহজ নয় বাংলাদেশের পক্ষে। যারা এ নিয়ে হুমকি দিচ্ছেন তাদের মাথায় এই রাজনীতিটাও মূল। মোদীর বিরোধিতার চাইতে সরকারকে যদি বিপদে ফেলা যায় আর কী!
অথচ এই নরেন্দ্র মোদী যখন প্রথম ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন তখন আজ যারা তার বাংলাদেশে আসার বিরোধিতা করছেন তারাই বেশি খুশি হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সংগে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। কাজে বিজেপির মোদি বিজয়ী হওয়ায় শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সরকার বিপদে পড়বে বলে এই লোকজন তখন আনন্দে লাফাচ্ছিলেন! শেখ হাসিনাকে এরা তখন পদত্যাগের সময়ও বেঁধে দিয়েছিলেন! পরে এরা হতাশ হয়ে দেখেন ইনি তো বিজেপির মোদি নন! ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী মোদী তখন এমন একজন পরিবর্তিত মানুষ হিসাবেই বাংলাদেশের আস্থা অর্জন করেন। সেই মোদি বদলাতে থাকেন ভারতের নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে। মুসলিম বিদ্বেষী এই আইন চিহ্নিত করে মোদি একটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলেরই নেতা। ভারতের চলতি বিতর্কিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যাকে এক সময় বাংলাদেশের বিএনপি তাদের ঘনিষ্ঠ বলে প্রচার করেছিলো, সেই অমিত শাহ নাগরিকত্ব আইন, দিল্লীর দাঙ্গা নিয়ে আরও বেশি বিতর্কিত। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এসবের সব দায় তো নরেন্দ্র মোদির। দাঙ্গা দমনে তিনি শক্ত ভূমিকা নিয়েছেন এর প্রমাণ নেই। সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের লাভের গুঁড় পিঁপড়ায় খেয়েছে দেশটার চলতি পরিস্থিতি। এদেশটাকে আমরা যারা ধর্ম নিরপেক্ষ বৃহত্তর গণতন্ত্রের জন্য প্রশংসা করি তাদের জন্য এ এক বিব্রতকর অবস্থা। ভারতের মিডিয়াগুলো দেখুন। কিছু মিডিয়া এই দাঙ্গা স্বত্তেও দেশটির ভালো মানুষগুলোর লড়াইকে উজ্জ্বল তুলে ধরছে, কিছু মিডিয়া চাইছে উস্কানি সৃষ্টির! হেফাজতের বাবু নগরী আর ডাকসু ভিপি নুরের গলা এক হয়ে গেছে! দাঙ্গার নিন্দা করি, ভারতের মহান মানুষেরা এই পরিস্হিতি সামাল দিন, মানুষের জয় হোক। এটি হোক সবার কামনা।
কিন্তু এখন মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান পণ্ড করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখানে এলে রক্তগঙ্গা বইবে এমন উস্কানীর মানে কী? বাংলাদেশে দাঙ্গা হলে তার শিকার হিন্দুরা ভারতে যায়, ভারতে দাঙ্গা হলে সেখানকার শিকার কোনো মুসলমান কী বাংলাদেশে আসে? না সেখানেই সবকিছু সামাল দেয়? কাজেই ভারতের সমস্যা বাংলাদেশে আনবেন না। বাংলাদেশের শান্তির জনপদে সমস্যার সৃষ্টি করবেন না। এটি নেতৃত্বের কোনো গুন না। উত্তেজনা সৃষ্টি নেতৃত্বের আবর্জনা সৃষ্টি করে। হিংসার বিরুদ্ধে যারা শান্তির পক্ষে কাজ করে তাঁরাই আসল মানুষ। আসল মানুষেরাই নেতা হয়। বাকিরা হয় আবর্জনা।