দেশের বড় শহরগুলোর যেসব এলাকায় করোনায় আক্রান্ত রোগী সবচেয়ে বেশি সেসব এলাকাকে লকডাউন করার মাধ্যমে নতুন পদক্ষেপে যাচ্ছে সরকার।
আগামী সপ্তাহ থেকেই এটি কার্যকরে চিন্তাভাবনা চলছে। এরই মধ্যে পুরো দেশের ইউনিয়ন পর্যন্ত ম্যাপিং করে দিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রতিদিন শনাক্ত হওয়া রোগীদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে সারা দেশের চিত্র দেখতে পারছে। এখান থেকে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকাগুলোকে লকডাউন ঘোষণা করা হবে।
একটি এলাকার কত বর্গকিলোমিটার জায়গায় কতজন করোনায় আক্রান্ত হলে সেটি রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত হবে, সেই মানদণ্ড ঠিক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ এলাকাই ‘গ্রিন’ আছে। তাই প্রথমে বড় কয়েকটি শহরের সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত রোগীর এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা দিয়ে লকডাউন কার্যকর করা হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাবিবুর রহমান খান গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কতটুকু এলাকায় কতজন শনাক্ত হলে রেড জোন ঘোষণা করা হবে, সেটি নির্ধারণে কাজ করছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। তারা এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে।’
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি অধ্যাপক, মহামারি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সারা দেশকে জোন বা এলাকাভিত্তিক ভাগ করার মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার ছক চূড়ান্ত হচ্ছে।
দেশের বাইরের এমন ২৫ জন বিশেষজ্ঞ দেশের বিশেষজ্ঞ কমিটিকে সহযোগিতা করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
যা থাকছে জোনভিত্তিক পদক্ষেপে
কড়া লকডাউনের মাধ্যমে চেষ্টা থাকবে রেড জোনের রোগীর সংখ্যা যাতে কোনোভাবেই না বাড়ে এবং পর্যায়ক্রমে ইয়েলো জোনে পরিণত হয়ে শেষে গ্রিন জোন হয়। অন্যদিকে ইয়েলো জোনের চিত্র যাতে রেড জোনে পরিণত না হয় এবং গ্রিন জোনকে যেন গ্রিনই রাখা যায়, তা নিশ্চিত করা। এর মধ্যে রেড জোনের বাসিন্দাদের অত্যন্ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। শুধু জীবনধারণের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সহায়তা ছাড়া আর কিছু এই এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছবে না। এখানকার কাউকে বাইরে বের হতে দেওয়া হবে না। ইয়েলো জোনে থাকবে কড়া সতর্কতা। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে বের হতে দেওয়া হবে না। প্রতিদিনই দেশের সব এলাকার চিত্র পর্যালোচনা করে রোগী বাড়ছে না কমছে, তা বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর গ্রিন জোনের চলাচলে তেমন কড়াকড়ি না থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে সবাইকে বাধ্য করা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সরকার সহজে আবারও সাধারণ ছুটিতে ফিরতে চায় না। অর্থনৈতিক কার্যক্রম সীমিত আকারে চালাতেই হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছ থেকে জোনভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ পেলেই আমরা মাঠ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠিয়ে দেব।
গত ২৬ মার্চ থেকে টানা ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটির পর ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে দেশব্যাপী সব কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-আদালতসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালানোর চেষ্টা চলছে। সীমিত কার্যক্রম পরিচালনার এক সপ্তাহের কার্যদিবস শেষ হলো গতকাল।
এ সময়ে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কভিড-১৯ রোগী ও মৃতের সংখ্যা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ঢাকার এর পর গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের। এরই মধ্যে গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উল্লিখিত পাঁচ সিটি করপোরেশনের মেয়রদের নিয়ে তিন মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা বৈঠক করে সারা দেশকে জোনভিত্তিক ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।