বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। শিশুটির বাবা বলছেন, সে আত্মহত্যা করেছে। তবে মায়ের অভিযোগ, সম্পত্তির লোভে সৎ মা ও বাবা তাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
গত বুধবার রাতে স্থানীয় দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমির তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান নোহার (৯) লাশ উদ্ধার করা হয়। সেই রাতে তার বাবা মো. সুমন মিয়া বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সফিকুল ইসলামকে আসামি করে আত্মহত্যা প্ররোচনায় অভিযোগে মামলা করেন। তাঁর অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ করোনার মধ্যেও স্কুল খুলেছে ও সাময়িক পরীক্ষা নিয়েছে। তাঁর মেয়ে পরীক্ষায় খারাপ করায় ওই শিক্ষক তাকে গালাগাল ও মারধর করেছে। এই অপমানে তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নুসরাতের বাবা সুমন মিয়া চার বিয়ে করেছেন। তাঁর স্ত্রী তানিয়া আক্তারের ঘরে জন্ম নেয় নুসরাত জাহান। নুসরাতের বয়স যখন ৫ বছর তখন সুমন আরেক বিয়ে করেন। একপর্যায়ে নুসরাতের মা তানিয়ার সঙ্গে সুমনের ছাড়াছাড়ি হয়। সেই থেকে নুসরাত সৎ মা ঝুমুর বেগমের কাছে থাকত।
নুসরাতের মা তানিয়া আক্তার (৩০) প্রথম আলোকে বলেন, বলা হচ্ছে তাঁর মেয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না-গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু এই ছোট্ট মেয়ের পক্ষে সেখানে ওড়না বা গামছা বাধা সম্ভব নয়। এতটুকু বাচ্চা ওপরে উঠে গলায় ফাঁস দিতে পারে না। তাঁর অভিযোগ, বাবা ও সৎ মা মিলে নুসরাতকে হত্যা করেছে।
একই অভিযোগ তানিয়ার মা ও নুসরাতের নানি তাসলিমা বেগমেরও। তিনি বলেন, গত রোববার নুসরাতের দাদা আবদুর রহিম তাঁর বাড়িতে এসে বলেছেন, তিনি তাঁর সব সম্পত্তি খুব শিগগিরই নুসরাতের নামে দলিল করে দেবেন। এ কথা তিনি ছেলে সুমন ও নুসরাতের সৎ মা ঝুমুর বেগমকে জানিয়ে দিয়েছেন বলেও তাঁকে জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, নুসরাত আত্মহত্যা করেনি। সম্পত্তির লোভে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালানো হচ্ছে।
তাসলিমার বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নুসরাতের দাদা আবদুর রহিম মিয়া বলেন, তিনি নুসরাতের নামে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। গত রোববার সকালে ওই বাড়িতে (নুসরাতের নানির বাড়ি) গিয়ে এ কথা বলেও এসেছেন। নুসরাতের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয় কোনো কথা বলব না, আল্লাহ সব দেখেন, তিনিই বিচার করবেন।’
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নুসরাতের সৎ মা ঝুমুর বেগম কথা বলতে রাজি হননি। আর বাবা মো. সুমন বলেন, শিক্ষক সফিকুলকে বাঁচাতে গ্রামের কিছু অসাধু ব্যক্তি ও তাঁর স্বজন মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।
এদিকে আজ শুক্রবার খাজুরিয়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় আসমা বেগম, বীনা আক্তার, হনুফা বেগম ও মোক্তার হোসেনসহ অন্তত ২০ জনের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, বিষয়টি রহস্যজনক। কারণ শিশুটি যেখানে ফাঁস দিয়েছে বলে বাবা দাবি করছেন, সেখানে কোনো শিশুর পক্ষে ওঠা সম্ভব নয়। সঠিক তদন্ত করলেই আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।
দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমি পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াৎ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক সফিকুল ইসলাম নুসরাতসহ একাধিক শিক্ষার্থীকে শাসন করেছেন। পরে ছাত্রীরা হাসিমুখে স্কুল ত্যাগ করেছে। নুসরাত আত্মহত্যা করতে পারে না।আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাজাহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে পরিষ্কার হয়ে যাবে—এটা হত্যা না আত্মহত্যা। তিনি বলেন, সম্পত্তি লিখে দেওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত চলছে।