যুক্তরাষ্ট্রে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিজ মডেলাররা মে মাসের ২০ তারিখ একটা প্রি-প্রিন্ট গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। যেখানে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র যদি এক সপ্তাহ আগে থেকে সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ আরোপ করত, তবে তারা ৩ মে পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৩০০ জনের মৃত্যু থেকে ৩৬ হাজার জনকে বাঁচাতে পারত।
অন্যদিকে ইম্পেরিয়েল কলেজ লন্ডনের এপিডেমিওলজিস্ট ও যুক্তরাজ্য সরকারের প্রধান উপদেষ্টাদের একজন নেল ফার্গুসন জুনে একই রকম মত প্রকাশ করেন দেশটি সম্পর্কে। সংসদীয় কমিটির সামনে উপস্থাপিত তদন্তে তিনি বলেন, যদি ব্রিটেন এক সপ্তাহ আগে চলাফেরা ও সামাজিক যোগাযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারত, তবে মৃতের সংখ্যা ৪০ হাজারের অর্ধেক হয়ে যেত।
এরপর একই সময়ে ফার্গুসন ও ইম্পেরিয়েল কলেজ লন্ডনের অন্য গবেষকরা নেচারে একটি মডেল প্রকাশ করেন। যেখানে হিসাব করে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার নীতিমালা কার্যকরের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ৩ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু এড়াতে পেরেছে।
এগুলোসহ আরো অন্যান্য গবেষণা তুলে ধরছে যে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ কীভাবে সংক্রমণের গতিকে কমিয়ে দিয়েছে। যা অনেকগুলো মানুষের জীবন বাঁচাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। অবশ্য এটা বুঝতে পারা বেশ চ্যালেঞ্জিং যে ফ্যাক্টরগুলো আসলে কীভাবে কাজ করছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গবেষণা ভবিষ্যতের নীতি তৈরির ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারে।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ডাটা সায়েন্টিস্ট ও যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা নিয়ে প্রকাশিত প্রি-প্রিন্টের সহ-লেখক জেফরি শামান বলেন, ‘এটা কেবল অতীতের ঘটনার দিকে তাকানোর বিষয় না। যারা মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে তারা এখনো প্রত্যাবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে। আর তারা যদি এটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া না দেখায় অর্থাৎ কড়াকড়ি আরোপ করতে রাজনৈতিক ও জনসাধারণের ইচ্ছা উদ্বুদ্ধ করতে না পারে, তাহলে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে।’
শামান ও তার দল একটি কম্পিউটার মডেল এবং ডাটা ব্যবহার করে দেখাতে চেয়েছেন, কীভাবে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ আরোপের পর মানুষের মাঝে যোগাযোগ বেশ কমে এসেছিল। এটি রোগের প্রবণতা বুঝতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
এরপর গবেষকরা দেখতে চেয়েছেন যদি এক সপ্তাহ আগে এসব বিধিনিষেধ আরোপ করা যেত তবে আসলে কী ঘটত। তথ্য কী বলছে, এ গবেষণায় তারা দেখেছেন ৩ মে পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা যেত, যদি এক সপ্তাহ আগে নীতিমালা কার্যকর করা যেত।
মডেল অনুযায়ী যদি মার্চের ১ তারিখ বিধিনিষেধ আরোপ করা যেত তাতে ৮৩ শতাংশ মৃত্যু রোধ করা যেত। শামান বলেছেন, তারা এখন গবেষণাপত্রটি পিআর-রিভিউর জার্নালে দেয়ার অপেক্ষায় আছেন। তবে তার আগে তিনি ও তার সহকর্মীরা আরো সাম্প্রতিক ডাটা তাতে সংযুক্ত করতে চান।
ট্রয় ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ ড্যানিয়েল শাটার বলেন, লকডাউন সংক্রমণ কমাতে পারে, এ বিতর্কের আলোকে তারা যে ডাটা উপস্থাপন করেছেন তা অনেকটা বিশ্বাসযোগ্য।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ইকোনমিস্ট সেবাস্টিয়ান আনান-ফান একই ধরনের একটি বিশ্লেষণ করেছেন চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, ইরান, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের আগে এবং পরে সংক্রমণের সংখ্যার বাড়া-কমার ভিত্তিতে। কারণ এ দেশগুলো বিভিন্ন ধরনের সামাজিক দূরত্বের বিধি আরোপ করেছিল। দলটি হিসাব করতে সক্ষম হয় যে কীভাবে প্রতিটি কার্যক্রম রোগের গতিকে শ্লথ করতে সাহায্য করেছিল।
তবে সবচেয়ে কার্যকর যে উপায়টি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, তা হলো কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য বের না হওয়া। যদিও স্কুল বন্ধ রাখার প্রভাব কম বলেই মনে হয়েছিল। আনান-ফান বলেন, প্রত্যেক দেশ আলাদা এবং তাদের নীতির প্রয়োগও আলাদা। কিন্তু আমরা এখনো কিছু বিষয় খুঁজে বের করতে পারি।
সব মিলিয়ে আনানের দল হিসাব করে দেখিয়েছে যে সম্মিলিত হস্তক্ষেপ ছয়টি দেশে রোধ কিংবা বিলম্বিত করেছে ৬২ মিলিয়ন নিশ্চিত সংক্রমণ। এই ফল প্রকাশিত হয়েছে জুন নেচারে। পাশাপাশি ইম্পেরিয়েল কলেজ লন্ডনের একটি গবেষণাও প্রকাশিত হয়েছে। যা লকডাউনের সময়ে বিভিন্ন ইউরোপিয়ান দেশের কোভিড-১৯ কেসের সঙ্গে তুলনা করেছে সবচেয়ে বাজে সময়ে সেসব দেশের যখন কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি তার। সে বিশ্লেষণ যা ধরে নিয়েছে সামাজিক দূরত্বের বিধি সব দেশে একই প্রভাব রেখেছে, সেখানে প্রায় ৩.১ মিলিয়ন মৃত্যু এড়ানো গেছে।
পাশাপাশি মানুষের আচরণের পরিবর্তন যে লাভজনক ছিল তা নিয়ে বিতর্ক করাও কঠিন, বলেছেন অ্যান্ড্রু গেলম্যান। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিসংখ্যানবিদ বলে, যদি মানুষ আচরণ পরিবর্তন না করত তবে পরিস্থিতি আরো বিধ্বংসী হতে পারত।
অন্যান্য আনুমানিক চিত্রের মতোই ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিলে কী হতো, সেটা জানা অসম্ভব। মহামারিকালে অফিশিয়াল লকডাউন নীতি চলাকালে মানুষের আচরণ পরিবর্তনকে দায়ী করাও কঠিন। গেলম্যান বলেন, শেষ পর্যন্ত আমরা বলতে পারি না যে এটা না থাকলে কী ঘটত। কারণ লকডাউন আরোপের সময়সীমার সঙ্গে, মানুষের যেকোনো উপায়ে সেলফ আইসোলেশনে যাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত।
তবে সুইডেনে, যারা ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো একই সময়ে একইভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করেনি, ডাটা তুলনা করে দেখা যাচ্ছে অন্যান্য দেশের তুলনায় তাদের অবস্থা বেশি খারাপ ছিল না। অর্থাৎ লকডাউন কোভিড-১৯-এর আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সীমাবদ্ধ করতে পারেনি।
কিন্তু গারনট মুলার নামে এক ইকোনমিস্ট যিনি নিজেও সুইডেনের এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন, পরে তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্তে ভুল ছিল। তিনি বলেন, সুইডিশরা প্রথম কয়েক সপ্তাহেই স্বেচ্ছায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। যা তাদের সুবিধা দিয়েছে।
তবে এর পরও অবশ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। ডাটা সায়েন্টিস্ট শামান অবশ্য লকডাউনকে কার্যকর ভ্যাকসিন কিংবা চিকিৎসা আসার আগ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment