সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতির দুই বৈশ্বিক অন্যতম প্রধান সুবিধাভোগী দেশ হিসেবে ভারত ও চীন আত্মপ্রকাশ করছে। আসলে ভারত ও চীন কার্যত তিন দশকব্যাপী নিরবিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশে পন্য এবং মুলধনী যন্ত্রপাতি রপ্তানি করে গেলেও এর বিপরীতে তারা কিন্তু বাংলাদেশকে খুব একটা ছাড় দিতে রাজি নয়। এক পরিসংখ্যানের হিসেব মতে, চীন ২০১৯ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১৩.০০ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করে চীন। ঠিক একই সময়ে ভারত পন্য রপ্তানি করে ৭.০০ বিলিয়ন ডলার। যদিও অবৈধ এবং চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত থেকে প্রতি বছর আরো আনুমানিক ২.০০ বিলিয়ন ডলার বা তার কাছাকাছি অবৈধ পন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আবার ভারতের বৈদেশিক রেমিটেন্স প্রাপ্তির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ। অর্থ্যাৎ ভারত প্রতি বছর আনুমানিক ৩.০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত অর্থ রেমিটেন্স হিসেবে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যায়। সে হিসেবে ভারতই আসলে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান বৈশ্বিক সুবিধাভোগী। পাশাপাশা ভারত এক রকম বিনা মূল্যেই বাংলাদেশের জল, স্থল এবং আকাশ পথে ট্রানজিট সুবিধা ভোগ করে।
অবশ্য ২০১৯ সালে এসে এই প্রথম বারের মতো ভারতে পন্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ ১.০০ বিলিয়ন ডলারের সীমাকে স্পর্শ করে। যা আমাদের জন্য একটি মাইলফলক অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হলেও ভারতের সাথে আমাদের বিদ্যমান বৈদেশিক বানিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় মোটেও যথেষ্ঠ নয়। এদিকে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সামরিক পরাশক্তি রাশিয়া বাংলাদেশের ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলারের রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পসহ বেশ কিছু উন্নয়নমুলক প্রকল্পে প্রধান বৈদেশিক অংশীদার এবং বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ করছে।
অথচ ভারত, চীন এবং রাশিয়া একদিকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অংশীদার হিসেবে নিজেদের জাহির করে গেলেও অন্যদিকে তারাই আবার কিনা অনেকটা প্রকাশ্যেই মিয়ানমারকে রেহিঙ্গাসহ একাধিক ক্ষুদ্র জাতি নৃ-গোষ্ঠি নিধন এবং গণহত্যায় উস্কানির পাশাপাশি নির্বিচারে যুদ্ধাস্ত্র কিম্বা সামরিক সাজ সরঞ্জাম সরবরাহ করে অত্র অঞ্চলে এক রকম ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে প্রকারন্তে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বসে আছে। আর আমাদের এসব বন্ধু ভাবাপন্ন দেশগুলো যে যার মতো করে প্রভাব বিস্তারের এক ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল ও বিপর্যস্ত যে করছে না তাও কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। যেখানে কিনা রাশিয়া, ভারত এবং চীন নিজেরাই কিনা মিয়ানমারের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী এবং মদদ দাতা। তাই তাদের কাছ থেকে রেহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নতুন কোন কার্যকর কৌশল এবং অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে ইতিবাচক সহযোগিতা আশা করার আদৌ কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। আর যতই দিন যাচ্ছে বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য জটিল একটি ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে এবং প্রায় বারো লক্ষাধিক বা তার বেশি সংখ্যক রেহিঙ্গা শরণার্থীর বোঝা এবং দায়ভার দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের উপর পাথরের মতো জেঁকে বসেছে।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, মিয়ানমারের অং সাং সুচী সরকার এবং তার সেনাবাহিনী বর্তমান সময়ে এক রকম প্রকাশ্যেই বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন এবং বাংলাদেশ বিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আর মিয়ানমারের এহেন অপকর্মে নিশ্চুপ থেকে চূড়ান্তভাবে উস্কানী এবং সহায়তা করে যাচ্ছে আমাদের তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্রগুলো। এমনকী তারা মিয়ানমারকে নির্বিচারে প্রাণঘাতী যুদ্ধাস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম সরবরাহ করে সারা মিয়ানমার জুড়ে ক্ষুদ্র জাতি নৃ-গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ড, নিপীড়ন এবং উচ্ছেদে যুগের পর যুগ উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছে এবং পাশাপাশি যে যার মতো করে প্রভাব বিস্তারের খেলায় মেতে রয়েছে। অথচ সকলে মিলে আলোচনার মাধ্যমে এ দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যা সমাধানে যথেষ্ঠ সুযোগ থাকলেও তা কিন্তু কোন ভাবেই কাজে লাগানো হচ্ছে বলে মনে হয় না।
অন্যদিকে, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমার সরকারের এহেন জাতিগত গণহত্যায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের পাশাপাশি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একাধিকবার নিন্দা প্রস্তাব ও অর্থনৈতিক অবরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুললেও তাতে আমাদের অকৃত্রিম বন্ধুভাবাপন্ন দেশ রাশিয়া এবং চীনের বারবার ভেটো প্রদান এবং বিরধিতার মুখে তা কিন্তু বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি এবং মিয়ানমার সরকারের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কিংবা গণহত্যা বন্ধ করা কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে চীন এবং রাশিয়ার অনেকটা পরোক্ষ মদদেই মিয়ানমারের সরাসরি বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান এবং অপপ্রচার অতীতের যে কোন সময়ের চূড়ান্ত সীমাকে ছাড়িয়ে গেছে। আর এতদ অঞ্চলে এক ভয়ঙ্কর প্রভাব বিস্তারের খেলায় মেতে উঠে রাশিয়া, চীন এবং আমাদের পাশ্ববর্তী বন্ধুদেশ ভারতও কিন্তু মিয়ানমার ইস্যুতে পরোক্ষভাবে হলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এ দেশগুলো কার্যত আমাদের উপর এক ভয়াবহ যুদ্ধের বোঝা চাপিয়ে দিতে চেষ্টার কোন কমতি করছে বলে মনে হয় না।
এদের পাশাপাশি আবার আরেক বিশ্ব শয়তান ফকির পাকিস্তান যুক্ত হয়েছে মিয়ানমারের হাতে যুদ্ধাস্ত্র তুলে দেবার এক অশুভ প্রতিযোগিতায়। আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজারে নতুন ক্রেতা ধরতে চলমান রেহিঙ্গা নিধনের মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেই পাকিস্তান কিনা ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে তাদের তৈরি বেশ কিছু জেএফ-১৭ জেট ফাইটার মিয়ানমার বিমান বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে একেবারেই নামমাত্র মূল্যে এবং আরো বেশকিছু এই জাতীয় ফাইটার ২০২০-২২ এর মধ্যে মিয়ানমারের হাতে তুলে দিবে। আর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে অস্ত্র তুলে দেবার বিতর্কিত তালিকায় রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং সর্বোপরি ইসরাইল। তাছাড়া অদূর ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার আশাঙ্খায় মিয়ানমার খুব সম্ভবত উত্তর কোরিয়া থেকে অত্যন্ত গোপনে স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার অজানা সংখ্যক ব্যালেস্টিক মিসাইল সংগ্রহ করেছে এবং রাশিয়া থেকে এস-৩৫০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের প্রবল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, মিয়ানমার সরকার শুধু মুসলিম রেহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী নিধন এবং বিতারণ করছে বিষয়টা কিন্তু তা মোটেও নয়। বরং এ মুহুর্তে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রেহিঙ্গা ছাড়াও সান, কাচিন এবং আরো বেশকিছু ক্ষুদ্র জাতি নৃ-গোষ্ঠী নিধণ এবং উচ্ছেদে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে রেহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীরাই শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের অনুসারী। তাছাড়া যুদ্ধরত সান, কাচিন এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতি নৃ-জোষ্ঠীরা কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী কিংবা অন্য কোনো ধর্মের। তাই অং সাং সূচী সরকার তাদের দেশে ধর্ম ভিত্তিক অশুভ বিভাজন সৃষ্টিকে এক ধরণের হাতিয়ার এবং অপকৌশল হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছে বলেই প্রতিয়মান হয়।
অন্যদিকে চীন কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে মিয়ানমারককে যুদ্ধে জড়িয়ে এক ভয়ঙ্কর মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে। আর পরিকল্পনা মাফিক মিয়ানমারে অর্থনৈতিক জোন তৈরির আড়ালে সুকৌশলে আগামী দুই দশকে বঙ্গপোসাগর সংল্গন মিয়ানমারের বিশাল এলাকা নিজ দখলে নিয়ে সরাসরি বঙ্গপোসাগর এবং ভারত মহাসাগরে প্রবেশের সুযোগ নিশ্চিত করার স্বার্থে গোপনে কাজ করে যাচ্ছে। আর এখন বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলে ধীরে ধীরে চীন মিয়ানমারকে গ্রাস করতে শুরু করে দিয়েছে। রাখাইন রাজ্যে শিল্পায়ন এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের আড়ালে মিয়ানমারে চীনের সামরিক উপস্থিতি বেশ জোড়ালো হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বঙ্গোপোসাগরে চীনের নেভাল ফ্লীটের সরাসরি প্রবেশ করা এখন অনেকটাই সময়ের ব্যাপার মাত্র। যা ভবিষ্যতে ভারতের জন্য কিন্তু মোটেও ভালো কিছু হবে বলে মনে হয় না।
এখানে খেয়াল করার মতো একটি বিষয় হলো যে, চীনের সাথে আমাদের অত্যন্ত বন্ধুসুলভ এবং ভালো বানিজ্যিক সম্পর্ক বজায় থাকলেও মিয়ানমারের সাথে চীনের রয়েছে গভীর কৌশলগত ও সামরিক সম্পর্ক। তাছাড়া রেহিঙ্গা নিধন ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থকে বিপদের মুখে ফেলে মিয়ানমারকে বৈশ্বিক পর্যায়ে নজিরবিহীন ভাবে রক্ষা করে যাচ্ছে আমাদের সম্মানিত তিন বন্ধু দেশ ভারত, রাশিয়া এবং চীন। আর এসব বৈশ্বিক সুপার পাওয়ারের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তায় কিম্বা মদদে মিয়ানমার কিন্তু এক রকম নির্বিচারেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শত্রুতামুলক অপপ্রচার ও প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁদের ছত্রছায়ায় বাংলাদেশেকে রেহিঙ্গা নিধন ইস্যুতে দোষারোপ এবং সামরিক উস্কানীর মতো পরোক্ষ হুমকী দেখানো সাহস পায় দেশটি। তাই অদূর ভবিষ্যতে যে কোন কারণে মিয়ানমারের সাথে সামরিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠলে চীন এবং রাশিয়া কোন রকম বাছ বিচার ছাড়াই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিয়ানমারকে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম গোপনে কিম্বা প্রকাশ্যে সরবরাহে কোন রকম ত্রুটি রাখবে বলে মনে হয় না। তাই এসব বিপদজনক সুপার পাওয়ার দেশগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশের অতি মাত্রায় প্রযুক্তি নির্ভর সামরিক সাজ সরঞ্জাম বিশেষ করে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয় বা সংগ্রহ করাটি খুবই ঝুঁকীপূর্ণ এবং বিপদজনক একটি ইস্যু হয়ে দেখা দিতে পারে।
মিয়ানমার ইস্যুতে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা বিতর্কিত হলেও এখানে ভারত মুলত মিয়ানমারের সাথে গভীর সম্পর্ক ও সখ্যতা বজায় রেখে যতটা সম্ভব নিজস্ব প্রভাব বিস্তার করা এবং যে কোন মূল্যে মিয়ানমার উপকূল সংলগ্ন বঙ্গপোসাগরে চীনের সরাসরি প্রবেশ এবং সামরিক উপস্থিতি প্রতিহত করার কৌশল নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আর এহেন প্রভাব বিস্তারের খেলায় মেতে উঠে বন্ধুত্ব রক্ষার তাগিদে এবং নিজ স্বার্থ হাসিলে ভারত কিন্তু মিয়ানমারের হাতে অর্থ, প্রাণঘাতী যুদ্ধাস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম তুলে দিতে কোন রকম কার্পণ্য করছে বলে মনে হয় না। আর এখন মিয়ানমারের হাতে থাকা এসব চীনা, ভারতীয় কিংবা রাশিয়ান যুদ্ধাস্ত্রের মূল টার্গেট কিন্তু অনেকটাই বাংলাদেশ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
খেয়াল করার মতো একটি বিষয় হলো যে, রাশিয়া এক দিকে মিয়ানমারের হাতে এসইউ-৩০ জেট ফাইটার, এস-৩৫০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও মিসাইলসহ অন্যান্য প্রাণঘাতী অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম তুলে দিচ্ছে অন্যদিকে বাংলাদেশের কাছে তাদের সদ্য উৎপাদিত এবং নন-ব্যাটল প্রুভ মিগ-৩৫ জেট ফাইটার এবং অন্যান্য সামরিক সাজ সরঞ্জাম চড়া দামে বিক্রি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আসলে মিয়ানমার ইস্যুতে এখানো পর্যন্ত রাশিয়া কিন্তু আমাদের সাথে এক অশুভ ডবল গেম প্লে রোল করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সাথে রাশিয়ার গভীর বন্ধুভাবাপন্ন এবং বানিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যামান রয়েছে বলে মনে করা হলেও মার্কিন বিরোধী শিবির হওয়ায় মিয়ানমারের সাথে রাশিয়ার রয়েছে পুরো মাত্রায় কৌশলগত সম্পর্ক। আবার আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজারে চীনের অস্ত্র রপ্তানির মূল টার্গেট কিন্তু বাংলাদেশ। যা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার মানে চীন ও রাশিয়া এক দিকে বাংলাদেশের কাছে চড়া দামে অস্ত্র বিক্রি করবে। অন্যদিকে তাদেরই যুদ্ধাস্ত্র আবার মিয়ানমারে থাকা জাতিগোষ্ঠী নিধনে এবং বিশেষ করে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নির্বিচারে মিয়ানমারের হাতে তুলে দিবে। আবার তারাই হবে কিনা আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু, যা এক বিংশ শতাব্দির এক ভয়ঙ্কর অপকৌশল কিংবা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়।
মনে রাখতে হবে পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আমাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা বলয় গড়ে তুলতে ডিফেন্স সিস্টেম হাডওয়ার এণ্ড টেকনোলজি প্রাপ্তির প্রধান উৎস হওয়া উচিত জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, তুরস্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয়ান ভুক্ত যে কোন প্রযুক্তি সমৃদ্ধ দেশ। বিশেষ করে আমাদের নিজস্ব কূটনৈতিক কৌশলকে দক্ষতার সাথে কাজে লাগিয়ে আমরা জাপান এবং দক্ষিন কোরিয়া থেকে আমরা বেশ ভালো মানের সাবমেরিন এণ্ড আদারস নেভাল কিম্বা এয়ার সিস্টেম ক্রয় করতে পারি খুব সহজেই। যা সচারচর কিনা চীন থেকে খুবই উন্নত এবং আধুনিক মানের হয়ে থাকে। তাছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রধান অংশীদার কিন্তু জাপান এবং অন্যরা কিন্তু আমাদের অর্থনীতির বৈশ্বিক সুবিধাভোগী ছাড়া আর কিছুই নয়। এদিকে রাশিয়া এবং সভিয়েত ইউনিয়নকে আমরা একই দেশ মনে করলেও এটা জানা উচিত যে, ১৯৭১ সালের সভিয়েত ইউনিয়ন এবং বর্তমানের রাশিয়া দুটি দুই ভিন্ন চিন্তা ধারার দেশ। রাশিয়া সর্বদা এন্টি ন্যাটো এণ্ড আমেরিকা নীতিতে কাজ করে গেলেও তার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু অস্ত্র ব্যবসা করা বা তা নিরবিচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাওয়া।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com