পৃথিবীর ম্যাগনেটিভ ফিল্ড বা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উপর নির্ভর করেই আমাদের পৃথিবীর সবকিছু টিকে আছে এবং আমরা আমাদের নিজস্ব কাজকর্ম করে থাকি। আর এই ম্যাগনেটিভ শক্তির উপর ভর করেই কিন্তু আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, এক রকম হঠাৎ করেই পৃথিবীর ম্যাগনিটিভ ফিল্ডের একটি অংশ অনেকটাই দূর্বল হয়ে পড়েছে। তবে কেন হঠাৎ করেই ম্যাগনেটিভ ফিল্ড দূর্বল হয়ে পড়েছে তার সুনিদিষ্ট কোন কারণ খুঁজে বের করতে পারেন নি গবেষণারত বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীর ম্যাগনেটিভ ফিল্ড নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইট ডাটা বিশ্লেষণ করে জানতে পেরেছেন যে, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে থাকা পৃথিবীর চৌম্বক শক্তি আশাঙ্খাজনক হারে দুর্বল হয়ে পড়ছে। যেখানে কিনা আমাদের সম্পূর্ণ পৃথিবীটাকে একটি বিশাল আকারের চুম্বকের সাথে বিবেচনা করা যেতে পারে। আর এই ম্যাগনেটিভ শক্তির উপরেই নির্ভর করছে আমাদের প্রাণীকূলের ভবিষ্যত। আর যদি স্থায়ীভাবে আমাদের পৃথিবীর চারপশে থাকা শক্তিশালী ম্যাগনেটিভ ফিল্ডের কার্য ক্ষমতা দূর্বল হয়ে পড়লে অদুর ভবিষ্যতে তা পৃথিবীবাসীর এবং এমনকি সমস্ত প্রানীকূলের জন্য এক ভয়ানক বিপদের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে বলে আশাঙ্খা করছেন বিজ্ঞানীরা।
আসলে দীর্ঘ সময় থেকে পৃথিবীর ম্যাগনেটিভ ফিল্ড নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীরা স্যাটালাইট ডাটা বিশ্লেষণ এবং গবেষণা করে দেখেছেন যে, দক্ষিণ আটলান্টিক অ্যানোমালি নামে পরিচিত দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকার বিশাল অঞ্চলটি গত কয়েক বছর ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি জানিয়েছে যে, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যবর্তী অংশে পৃথিবীর ম্যাগনেটিভ শক্তি ধারাবাহিকভাবেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই ঘটনাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন ‘সাউথ আটলান্টিক অ্যানোমালি’। আর এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনায় রীতিমতো চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীর উপরে মহাশুন্যে থাকা নিজস্ব ম্যাগনেটিভ ফিল্ডের কার্য ক্ষমতা হ্রাস পেলে কিংবা দূর্বল হয়ে পড়লে এর ভয়ঙ্কর প্রভাব সরাসরি পড়তে পারে বিশ্বের স্যাটেলাইট পরিষেবার উপর। সারা বিশ্বে দেখা দিতে পারে যান্ত্রিক গোলযোগ এবং বিশৃঙ্খলা। এর বিরুপ প্রভাবে সরাসরি আমাদের মোবাইল, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট ভিত্তিক কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে এটা ঠিক যে, যে গতিতে পৃথিবীর নিজস্ব ম্যাগনেটিভ শক্তি কমছে, তাতে তা বিপদজনক পর্যায়ে আসতে দীর্ঘ সময় বা বহু বছর লেগে যেতে পারে।
পৃথিবীর ম্যাগনেটিভ ফিল্ড নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর নিজস্ব ম্যাগনেটিভ ফিল্ড যদি কোন দিন একেবারে শুন্য হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে এই পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকে থাকাটা বেশ জটিল হয়ে দেখা দিতে পারে। তাছাড়া পৃথিবীর যে অংশে আশাঙ্খাজনক হারে ম্যাগনেটিভ ফিল্ডের শক্তি কমে যাচ্ছে সেই অংশে বিগত ২০০ বছরে কমপক্ষে ৯% পর্যন্ত ম্যাগনেটিক ফিল্ড হারিয়েছে বলে আশাঙ্খা করছেন বিজ্ঞানীরা। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির মতে, প্রতি ২ লক্ষ ৫০ হাজার বছর পর পর পৃথিবীর ম্যাগনেটিভ ফিল্ড তার কার্যক্ষমতা কিছুটা হারিয়ে ফেলে এবং এমন অবস্থা পৃথিবীতে আগেও অনেক বার হয়েছিল বলে দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। তাছাড়া ম্যাগনেটিভ ফিল্ডের কম বেশি প্রভাবে মেরু অঞ্চলের ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, শক্তিশালী ম্যাগনেটিভ ফিল্ড পৃথিবীকে ধেয়ে আসা মহাজাগতিক রশ্মি থেকে প্রতিনিয়ত রক্ষা করে চলছে। অন্যদিকে মঙ্গল গ্রহের নিজস্ব শক্তিশালী ম্যাগনেটিভ ফিল্ড না থাকায় সেখানে ক্ষতিকর মহাজাগতির সরাসরি মঙ্গল গ্রহের ভূ-পৃষ্ঠে এসে পড়ে। এতে করে এই লাল গ্রহের প্রাণের অস্তিত্ব টিকে থাকার সম্ভবনা একেবারেই নেই বললেই চলে। তাছাড়া পৃথিবীর নিজস্ব ম্যাগনেটিভ ফিল্ডের কার্যকারিতা পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে শুরু করে উপরের মহাশূন্যের অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে এবং ভূপৃষ্ঠে যার আয়তন ২৫ থেকে ৬৫ মাইক্রোটেসলা৷ আর এই অত্যন্ত শক্তিশালী ম্যাগনেটিভ ফিল্ডের কারণেই মহাশুন্যে ছড়িয়ে থাকা মিলিয়ন মিলিয়ন ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মি থেকে কোটি কোটি বছর থেকে নিজেকে রক্ষা করে আসছে আমাদের এই সুন্দর নীল গ্রহ পৃথিবী। যার জন্য আজ কয়েক ট্রিলিয়ন প্রজাতির প্রানী এবং উদ্ভিদ নিজেদের বিকোশিত করতে সক্ষম হয়েছে।
সূত্রঃ ইন্টারনেট