জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে ফেসবুক। কিন্তু এর নানা নেতিবাচক প্রভাবের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ফেসবুকের বিরুদ্ধে নানা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ফেসবুকের বিরুদ্ধে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের মামলাও হয়েছে। গ্রাহকের তথ্য চুরি থেকে শুরু করে গোপনীয়তার লঙ্ঘন, বিশেষ গোষ্ঠীর সপক্ষে কাজের অভিযোগ রয়েছে মার্কিন এ প্রযুক্তি সংস্থার বিরুদ্ধে।
ফেসবুককে বহু মানুষ সহিংসতা, গুজব ছড়ানো, ব্ল্যাকমেইলের মতো গর্হিত কাজে ব্যবহার করছেন। ফেসবুকের অপব্যবহারের কারণে লাখ লাখ মানুষ ভুক্তভোগী হয়েছে।
মহামারী করোনাভাইরাসের সময়েও ফেসবুকে নানা গুজব ছড়িয়েছে। ফেসবুক ভুয়া তথ্য ছড়ানোর কারণে ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে এর ব্যবহারকারীদের।
চাপে পড়ে নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে ফেসবুক। ভুয়া খবর ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
সব মিলিয়ে সামাজিক রক্ষাকারী এ মাধ্যমটি এখন সামাজিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরির (বিটিআরসি) গত জুনের হিসেবে, বর্তমানে দেশে ১০ কোটির বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে। এর বড় একটি অংশ ফেসবুক ব্যবহার করেন।
ফেসবুকের কারণে দেশে ইতিবাচক সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এটি এখন শক্তিশালী প্রচারমাধ্যমও হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর নেতিবাচক ব্যবহারই হচ্ছে বেশি। বর্তমানে যেসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে দেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন স্তরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি করা।
পরিচিত ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের অনেকের ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট না থাকলেও তাদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে হর-হামেশা অসাধু কিছু ব্যবহারকারী ও চক্র অসৎ উদ্দেশ্যে খুলছে ভুয়া ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট।
একই সঙ্গে এই ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে আপত্তিজনক ছবি ও ভাষা। থাকছে উসকানিমূলক, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য। ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায়ও ফেসবুক ব্যবহৃত হচ্ছে।
এখন অনেকের অশান্তি, দুর্ভোগ ও যন্ত্রণার অন্যমত কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেসবুক। সামাজিক এ যোগাযোগ মাধ্যমটির কারণে অনেক ঘরে অশান্তি দেখা দিয়েছে। পরকীয়া, দাম্পত্য কলহের কারণে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। ফেসবুকে বন্ধু হতে গিয়ে অনেকের মধ্যে গড়ে উঠছে পরকীয়ার সম্পর্ক। আর এতে ভাঙছে অনেকের সাজানো সংসার। অনেকে সংসারের চেয়ে ফেসবুকে বেশি সময় দিচ্ছে।
এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহের দানা বাঁধছে। তরুণ-তরুণীরা প্রতারণামূলক সম্পর্কে জড়িয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে প্রেমের ফাঁদে পড়ে মেয়েদের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে। সময় দিতে না পেরে অনেক অভিভাবক অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছেন। তাতে ইন্টারনেটের সংযোগও থাকছে। ফলে শিশু-কিশোররা ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাতে সময় দিচ্ছে।
এতে তাদের সৃজনশীলতা, সাংস্কৃতিক ও সুস্থ স্বাভাবিক জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। শিশু-কিশোরদের মাত্রাতিরিক্ত ফেসবুক আসক্তি থেকে পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে।
কয়েকটি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফেসবুকে ফাঁস করার ঘটনাও ঘটেছে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভুক্তভোগীদের আপত্তিকর ছবি মোবাইলে ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেকেই অপমান সইতে না পেরে আত্মাহুতিও দিয়েছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ করে ফেসবুকের মাধ্যমে যৌন নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ছেলেরা মেয়ে সেজে অন্যদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। কেউ কেউ আবার ফেসবুকে অন্যের বন্ধু তালিকায় থাকা মেয়ে বন্ধুদের আপত্তিকর খুদে বার্তা দিচ্ছেন কিংবা তাদের ছবির অপব্যবহার করছেন।
সমাজের উচ্চপদস্থ ও প্রতিষ্ঠিতদের নামে এ যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও কুৎসা রটিয়ে কখনো বা দেওয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। এমনকি তারকা ও শিল্পীদের ভুয়া অশ্লীল ভিডিও ও ছবি তৈরি করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের মানহানি করা হচ্ছে।
বিচারে সাইবার ক্রাইম প্রমাণিত হলে অপরাধীকে কারাদণ্ড এবং জরিমানা করার বিধান আছে। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সেল রয়েছে।
ফেসবুকে পরিচয় গোপন রাখা সহজ তাই নাইজেরিয়া, ঘানা, কেনিয়ার নাগরিকসহ অনেক বিদেশি ভুয়া আইডি খুলে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। উপহার পাঠানোর কথা বলে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেছে। অভিযোগ আসার পর তাদের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা হয়েছে এবং অভিযুুক্তদের অনেকে আটক হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।