সিরাজুর রহমান: মহাশুন্যে বিয়ে! এ আবার কেমন কথা? বিষয়টি অনেকের কাছে একেবারেই কাল্পনিক বলে মনে হলেও বাস্তবে মহাকাশে বিয়ে করে বিরল এই রেকর্ডটি নিজ দখলে নিয়েছেন রাশিয়ান মহাকাশচারী ‘ইউরি মেলেনচেস্কো’। আর মানুষের কল্পনাকে হার মানিয়ে মহাকাশে ভাসমান থাকা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে বসে পৃথিবীর কোন প্রথম মানব হিসেবে নিজের বিয়ের কাজটা সেরে ফেলেন তিনি।
১০ই আগস্ট ২০০৩ সালে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) দ্রুত গতিতে ছুটে চলার সময়ে ৪১ বছর বয়স্ক রুশ মহাকাশচারী ‘ইউরি মেলেনচেস্কো’ মহাকাশে বিয়ের মন্ত্র উচ্চারণ করেন এবং ২৬ বছর বয়স্ক আরেক রুশ বংশোদ্ভূত মার্কিন নারী দিমিত্রীয়েভ পৃথিবীর বুকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টনে নিজ বাড়িতে বসে হ্যাঁ শব্দটি উচ্চারণ করে এই শুভ বিবাহের কাজটি সম্পন্ন করেন। আসলে চার বছর আগে ‘দিমিত্রীয়েভ’ ১৯৯৯ সালে তার পরিবারের সাথে মার্কিন নাগরিত্ব গ্রহণ করে স্থায়ীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্টের টেক্সাস রাজ্যে বসবাস শুরু করেন। তবে মহাকাশে বিবাহের বিষয়টি শুরুতে মোটেও সহজ কোন কাজ ছিল না। রুশ মহাকাশচারী ‘ইউরি মেলেনচেস্কো’ পেশায় ছিলেন একজন রাশিয়ান সেনাবাহিনীর কর্ণেল পদ মর্যাদার কর্মকর্তা।
তাছাড়া রাশিয়ান আইনে সেনা কর্মকর্তার অন্য কোন দেশের নাগরিকদের বিয়ে করার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিশেষ করে রুশ স্পেস এজেন্সি শুরু থেকেই মহাকাশচারী ইউরি মেলেনচেস্কোর মহাশুন্যে বিবাহের সিদ্ধান্তে রাজি ছিল না। তবে ‘ইউরি মেলেনচেস্কো’ কিন্তু একেবারে হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নন। অনেক চেষ্টার শেষে অবশেষে রুশ মহাকাশ স্পেস এজেন্সি প্রথমবার মহাশুন্যে থাকা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) এ ইউরি মেলেনচেস্ককে বিরল এই বিবাহের অনুমতি দেয়। আর এই রমাঞ্চকর বিয়ের সপ্তাহ খানে আগেই মহাকাশে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) তে পাঠানো জরুরী রসদের সাথে ইউরি মেলেনচেস্কোর বিয়ের জন্য পোশাক ও আংটি পাঠানো হয়। এদিকে মহাকাশে বিয়েতে উপস্থিত ইউরি মেলেনচেস্কোর পক্ষে সাক্ষী ছিলেন মার্কিন মহাকাশচারী ও তার সহযাত্রী ‘এড লিউ’ এবং দিমিত্রীয়েভের পক্ষে ছিলেন টেক্সাসে থাকা তার পরিবারের সদস্যরা।
নিয়ম মাফিক মহাকাশে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) এ অবস্থানরত মহাকাশচারীরা প্রতিদিন ১০ মিনিট সময় পান নিজ পরিবার বা প্রিয়জনের সাথে কথা বলার। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে মহাকাশে থেকে রাশিয়ান নভোচারী ‘ইউরি মেলেনচেস্কো’ মানব ইতিহাসে প্রথম মহাশুন্যে বিয়ে করে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেন।