মিরপুর শেরে বাংলায় আবারও বাঘের গর্জন। টিম টাইগারের দুর্দান্ত জয়। বারবার ম্যাচের রং বদল হয়েছে। বারবার জেগেছে পরাজয়ের শংকা। শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে ক্রিকেটের। মাঠে আসার সুযোগ না থাকায় টিভির সামনে বসে মনোমুগ্ধকর এক ম্যাচ দেখেছেন দর্শকরা।
দুই তরুণ আফিফ আর সোহানের দারুণ ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে টিম টাইগারদের জয় এসেছে ৫ উইকেটে। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে আগামী শুক্রবার সিরিজ নিশ্চিত করার হাতছানি মাহমুদউল্লাহদের সামনে।
নাগালের মাঝে থাকা রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা ছিল নড়বড়ে। তৃতীয় ওভারে সৌম্যকে (০) বোল্ড করে দেন মিচেল স্টার্ক। প্রথম ম্যাচে ২ রান করার পর আজ ‘ডাক’ মারলেন এই ওপেনার। সাকিব উইকেটে এসেই দুই বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ জমিয়ে তোলার ইঙ্গিত দেন। কিন্তু পরের ওভারে হ্যাজেলউডের বলে বোল্ড হন ১৩ বলে ৯ রান করা নাঈম।
২১ রানে দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সাকিবের সঙ্গী হন মেহেদী হাসান। এই দুইজনের জুটিতে বাংলাদেশ আবারও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। কিন্তু দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডারকে ২৬ রানে বোল্ড করে বাংলাদেশকে আবারও ব্যাকফুটে ঠেলে দেন অ্যান্ড্রু টাই। সাকিবের ১৭ বলের ইনিংসে ছিল ৪টি বাউন্ডারি।
৯ম ওভারে ৫৮ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। উইকেটে আসেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। দলকে ভরসা দেওয়ার বদলে তিনি আলগা শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ৪ বলে কোনো রান না করে। শিকারীর নাম অ্যাস্টন আগার।
১ রানের ব্যবধানে দুই বড় তারকাকে হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। বিপদ আরও বাড়ত যদি ইনফর্ম আফিফ হোসেনর বিপক্ষে মার্শের লেগ বিফোর উইকেটের আবেদন সফল হতো। আম্পায়ার আঙুল তুলেছিলেন। রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ। টাইগারদের দূর্গে পঞ্চম আঘাত হানেন অ্যাডাম জাম্পা। শুরু থেকেই আবোল তাবোল শট খেলতে থাকা মেহেদি হাসান ২৪ বলে ২৩ রান করে স্টাম্পড হয়ে যান।
দলের জয়ের জন্য তখনো দরকার ৫২ বলে ৫৫ রান। মহাবিপদে পড়া দলকে আবারও ম্যাচে ফেরান দুই তরুণ আফিফ হোসেন আর নুরুল হাসান সোহান। দুজনেই দ্রুত উইকেটে সেট হয়ে হাত খুলে মারতে থাকেন। ধীরে ধীরে জয়ের সুবাস পেতে থাকে বাংলাদেশ। জুটি ছাড়িয়ে যায় পঞ্চাশ। ম্যাচে আর কোনো বিপর্যয় হতে দেননি এই দুই তরুণ। ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মেরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন আফিফ।
এর আগে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ বুধবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বোলাররা। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২১ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। মেহেদী হাসানকে দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে তিনি দেন মাত্র ১ রান। পরের ওভারে আসেন প্রথম ম্যাচের নায়ক নাসুম আহমেদ। ওভারে দুটি বাউন্ডারি হজম করাসহ তিনি দিয়েছেন ১২ রান। পরের ওভারে এসেই তৃতীয় বলে অ্যালেক্স ক্যারিকে (১১) তুলে নাসুম আহমেদের তালুবন্দি করেন মেহেদী। ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। নাসুমের করা পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে ফিলিপের বিপক্ষে লেগ বিফোরের আবেদন নাকচ করেন আম্পায়ার। বাংলাদেশ রিভিউ নিয়েও ব্যর্থ হয়। কারণ বল ফিলিপের পায়ে লাগার আগে ব্যাট ছুঁয়েছিল।
৬ষ্ঠ ওভারে বোলিংয়ে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান। চতুর্থ বলে সরাসরি বোল্ড করে দেন ১৪ বলে ১ চারে ১০ রান করা জস ফিলিপেকে। মুস্তাফিজুর রহমানের কাটারটি ছিল লেগস্টাম্পের বাইরে। বলটার লাইন না বুঝেই ব্যাট চালিয়েছিলেন ফিলিপে। যা ঘটার তাই ঘটে। স্টাম্প উপড়ে যায়। ৩১ রানে অজিদের দ্বিতীয় উইকেট পতন। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে ফেলার পর হেনরিক্স আর মার্শের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। ৫২ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন এই দুজন। অবশেষে ২৫ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ৩০ রান করা হেনরিক্সকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান সাকিব। বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডারকে সুইপ করতে গিয়ে লাইন মিস করায় বোল্ড হন হেনরিক্স।
অন্যপ্রান্তে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলছিলেন মিচেল মার্শ। ৪২ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৪৫ করে ফেলা মার্শকে থামানো জরুরি ছিল। সেই দায়িত্বটি পালন করে দিলেন শরীফুল ইসলাম। তার বলটি মার্শের ব্যাট ছুঁয়ে কিপার সোহানের গ্লাভসে জমা হয়। এরপর শুরু আসা-যাওয়ার খেলা। ১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে অজি অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে (৪) বোল্ড করে নিজের দ্বিতীয় শিকার ধরেন মুস্তাফিজ। ১০৩ রানে পাঁচ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।
পরের বলেই কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন অ্যাস্টন আগার (০)। মুস্তাফিজের হ্যাটট্রিক করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। তবে বলটি ওয়াইড হয়ে যায়। পঞ্চম বলে কোনো রান আসেনি। টার্নারকে (৩) ফেরান শরীফুল। নির্ধারিত ২০ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১২১ রান। ৪ ওভারে ২৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফল বোলার মুস্তাফিজ। শরীফুল নিয়েছেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব আর মেহেদি।