সাম্প্রতিক শিরোনাম

নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ- মোহাম্মদ হাসান

মূল্যবোধ হলো রীতিনীতি ও আদর্শের মাপকাঠি; যা সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। নীতি ভালো-মন্দের মধ্যে একটা স্পষ্ট পার্থক্য গড়ে দেয়। সুতরাং ভিত্তি যদি নড়বড়ে হয়ে যায়, তাহলে সে সমাজ বা রাষ্ট্রের অনেক কিছুতেই ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের সংজ্ঞা ও বিস্তৃতি-পরিধি শাশ্বত, চিরন্তন- আগে যা ছিল, এখনও তা-ই আছে। কিন্তু সময় সময় আমাদের বুঝতে বেশ খটকা লাগে, এই যা।
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, আব্দুর রাজ্জাক, সর্দার ফজলুল করিম, সালাউদ্দিন আহমদ প্রমুখ গুণীজনের অনুপস্থিতিতে বর্তমানে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতো প্রজ্ঞাবান ও নির্মোহ বুদ্ধিজীবীদের জাতির বাতিঘর হিসেবে জ্ঞান করা হয়। তাদের মতো গুণীজনরা সমস্যা-সম্ভাবনা-সংকটে অভিভাবক হিসেবে নানাভাবে এখন পর্যন্ত আমাদের প্রেরণা ও উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর।
অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ২ বছর আগে একবার এক অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘… অর্থনীতিসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেলেও মূল্যবোধের দিক দিয়ে পিছিয়ে গেছে।’ উল্লিখিত মন্তব্যটির ওপর জনমত জরিপ করার উদ্যোগ নেয় একটি জাতীয় দৈনিক।
কিন্তু খুব সূক্ষ্মভাবে ওই জরিপের ফলাফলটি লক্ষ করে দেখা গেছে, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ওই মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন মাত্র ১২.২৫ শতাংশ পাঠক। সমর্থন করেননি ৮৩.৩৩ শতাংশ এবং কোনোরকম মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন ৪.৪১ শতাংশ পাঠক।
মূল্যবোধের মতো একটি বিষয়ে করা অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মন্তব্যের ওপর পরিচালিত জরিপের ফলাফলটি নিয়ে (ইনকিলাব পত্রিকাসহ) গতকাল আমার একজন প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক আবদুর রশীদের শরণাপন্ন হই।
অনেক আলোচনা ও কথার পর স্যার বললেন, ‘অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সাহেবের মতো ব্যক্তি মূল্যবোধ সম্পর্কে কী বলেছেন বা কী বলতে চেয়েছেন তা বেশিরভাগ পাঠক বোধকরি বোঝেনইনি। তা না হলে কোনোক্রমেই এমনটি হওয়ার তো কথা নয়।’
নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ নিয়ে প্রাতঃস্মরণীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের একটি সহজবোধ্য গল্প আছে। বোধকরি অনেকেরই তা জানা।
গরিব একটি ছেলে কোনো অবস্থাপন্ন লোকের বাড়িতে কাজ করত। ঘরদোর মোছা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। একদিন কাজ করার সময় নির্জন ঘরে অনেক সুন্দর ও মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রীর মধ্যে একটি সোনার ঘড়ির প্রতি তার নজর পড়ে।
সে ঘড়িটি হাতে নেয়। আহা, হীরাখচিত কী সুন্দর ঘড়ি! মূল্যবান ঘড়িটি ছিল গৃহকর্তার খুবই শখের বস্তু। ঘড়িটির প্রতি তার লোভ হল, একবার হাতে নেয়; পরক্ষণেই আবার জায়গা মতো রেখে দেয়। লোভ ক্রমে বাড়তে থাকলে মনস্থির করে সে ঘড়িটি চুরি করবে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তার বোধোদয় হল যে লোভ সংবরণ করতে না পেরে ঘড়িটি নেওয়া মানে চোর হওয়া। চুরি করে ধরা পড়া মানে শাস্তি পাওয়া, শাস্তি ভোগ করা। আর আমি চুরি করে মানুষের হাত এড়িয়ে যেতে পারলেও ঈশ্বর তো একজন রয়েছেন।
মায়ের কাছে অনেকবার শুনেছি যে আমরা তাকে দেখতে পাই না বটে; কিন্তু তিনি সবখানে বিরাজমান এবং সবকিছুই প্রত্যক্ষ করছেন। তার অগোচর বা অজানা কিছুই নেই।
এসব বলতে বলতে তার মুখ মলিন হল এবং সারা শরীর কেঁপে উঠল। তখন সে ঘড়িটি যথাস্থানে রেখে দিয়ে বলতে লাগল- লোভ করা খুবই মন্দ কাজ, লোকে লোভ সংবরণ করতে না পারলেই চোর হয়। আমি চোর হব না। চোর হয়ে ধনী হওয়ার চেয়ে সৎপথে থেকে গরিব থাকা অনেক ভালো।
তাতে চিরকাল নির্ভয়ে ও সুখে থাকা যায়। চুরি করতে চাওয়াতেই আমার এত মনোযন্ত্রণা হল, চুরি করলে না জানি আরও কী হয়। এই বলে সেই সুবোধ, শান্ত, সচ্চরিত্র ও গরিব ছেলেটি আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে ঘরদোর পরিষ্কারে মনোনিবেশ করল।
গৃহকর্তা এ সময়ে পাশের ঘরে থেকে ছেলেটির সব কথা শুনতে পেয়েছিলেন। তিনি পরিচারিকার মাধ্যমে ছেলেটিকে তার সামনে ডেকে পাঠান। সস্নেহে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কী কারণে আমার ঘড়িটি নিলে না?’
ছেলেটি হতবুদ্ধি হয়ে গেল, কোনো জবাব দিতে পারল না; কেবল মাথানত করে করুণ দৃষ্টিতে গৃহকর্তার মুখের দিকে চেয়ে রইল। ভয়ে তার সর্বাঙ্গ আড়ষ্ট হল, চোখে পানি ছল ছল করছে।
তাকে এরূপ দেখে গৃহকর্তা সস্নেহে বললেন, ‘তোমার কোনো ভয় নেই, তুমি এমন করছ কেন? আমি তোমার সব কথা শুনেছি এবং শুনে তোমার প্রতি কী পরিমাণে সন্তুষ্ট হয়েছি তা মুখে প্রকাশ করতে পারব না। তুমি গরিবের সন্তান বটে; কিন্তু আমি কখনও তোমার মতো সুবোধ ও ধর্মভীরু ছেলে দেখিনি।
ঈশ্বর অল্প বয়সেই লোভ সংবরণ করার যে শক্তি তোমাকে দিয়েছেন সেজন্য তাকে প্রণাম কর ও কৃতজ্ঞতা জানাও।’ অতঃপর তিনি ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে তার হাতে কিছু টাকা দেন এবং বলেন, ‘এখন থেকে তোমার আর ঘর পরিষ্কার ইত্যাদি নীচ কাজ করতে হবে না।
তুমি বিদ্যাভ্যাস করলে আরও সুবোধ ও সচ্চরিত্রবান হতে পারবে। আমি তোমার লেখাপড়া ও যাবতীয় খরচ বহন করব।’ নিজ হাতে তিনি ছেলেটির চোখের পানি মুছে দিলেন।
গৃহকর্তার মুখে এমন সব কথা শুনে ছেলেটির চোখ দিয়ে আনন্দাশ্রু বইতে থাকে। পরদিন সে বিদ্যালয়ে ভর্তি হল এবং নিজ চেষ্টায় অল্পদিনে লোকসমাজে বিদ্বান, চরিত্রবান ও ধর্মপরায়ণ বলে গণ্য হয়ে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে সংসারযাত্রা নির্বাহ করতে লাগল।
পরিশেষে শ্রদ্ধেয় আনিসুজ্জামানের কথাতেই ফিরে যাই। আমাদের চারদিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি ও উন্নতির কোনো সীমা-পরিসীমা না থাকলেও মূল্যবোধের দিক দিয়ে আমরা বেশ পিছিয়েই রয়েছি।
পরিতাপের বিষয় হল- কোনদিক থেকে এবং কী মাত্রায়, কেন পিছিয়ে আছি তা সঠিকভাবে বুঝতেও আমরা বোধকরি ততখানি সক্ষমতা অর্জন করতে পারিনি (জরিপের আলোকে)। শিশু-কিশোররা জাতির ভবিষ্যৎ।
ওদের মূল্যবোধসম্পন্ন ও সময়োপযোগী করে গড়ে তোলা আমাদের কর্তব্য এবং দায়িত্ব। তবে নিজেরা সঠিকভাবে যা বুঝি না, বুঝতে পারি না তা পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা কীভাবে শেখাব?

সর্বশেষ

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের প্রায় ১২০ কোটি টাকার ফান্ড আওয়ামী ঘরানার দুই ইয়েলো...

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড" বা অগ্রগামী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি...

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের সত্য কেউ জানতে পারেনি। কীভাবে কার স্বার্থে এবং...

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে ছাত্রদলের যে পাঁচজনকে দেখা গেছে তারা হলেন- সাঈদ হোসেন...