আমিত্ব বিসর্জনের প্রকৃত নামই হলো কুরবানী-মোহাম্মদ হাসান

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

কুরবানীতে ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক কল্যাণ ও উপকার নিহীত রয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে যখন কোন সফলতা আসে তখন একজন মুসলমানের করনীয় হচ্ছে যার অসীম করুণায় সফলতা পেল তাঁকে থেকংস বা ধন্যবাদ দেয়া কৃতজ্ঞতা আদায় করা, শুকরিয়া জ্ঞাপন করা, মহান মালিকের কুদরতী পা’য়ে সিজদা দেওয়া এবং তাঁর নামে পরিবার পরিজনের জন্য কিছু ব্যয় করা, পাড়া প্রতিবেশীদের জন্য সমাজ ও দেশের জন্য কিছু উৎসর্গ করা কুরবানী এর উত্তম নমুনা। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বর্ণিত হচ্ছে-“হে নবী আমি অবশ্যই আপনাকে (নিয়ামতে পরিপূর্ণ) কাওসার দান করেছি। অতএব তোমার মালিককে স্মরণ করার লক্ষ্যে তুমি নামাজ পড়ো এবং তাঁরই উদ্দেশ্যে তুমি কুরবানী করো। সুরা কাওসার আয়াত (১-২)।

কুরবানীর সময়কাল আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম মূহুর্ত। কুরবানীর পশু জবাই করার সাথে বান্দার তাকওয়া অর্জনের সম্পর্ক রয়েছে। আল্লাহর নিকট কুরবানীর পশুর রক্ত মাংস কোনো কিছুই পৌছায় না। শুধুমাত্র বান্দার তাকওয়া পৌছায়।

আল্লাহর প্রীতি ও ভালোবাসা লাভের উদ্দেশ্যে কোনো কিছু উৎসর্গ করা বা বিসর্জন দেয়াকে কুরবানী বলা হয়। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর কুরবানী হুকুম পালন করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও যদি কেউ কুরবানী করা থেকে বিরত থাকে; তাহলে তাকে গোনাহগার হতে হবে। নেক আমল সমূহের মধ্যে কুরবানী একটি বিশেষ আমল। কুরআনুল কারীমে আল্লাহর প্রীতি ও ভালোবাসা লাভের জন্য নামাজ আদায়ের পাশাপাশি কুরবানী করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার রবের জন্য নামাজ পড়–ন এবং কুরবানী করুন।’ (সুরা কাউছার:২)। হযরত আবূ হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও কুরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (ইবনে মাজাহ:৩১২৩)।

কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘আল্লাহর কাছে এর গোশত কিংবা রক্ত পৌছায় না; বরং তাঁর দরবারে তোমাদের তাকওয়া পৌছায়।’ (সূরা হাজ্জ: ৩৭)। যারা তাকওয়ার সহিত কুরবানী করবে; তাদের কুরবানীর পশুর রক্ত জমিনে পড়ার পূর্বে আল্লাহতায়ালা কবুল করে নিবেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘আপনি এদের নিকট আদমের দুই পুত্রের গল্পটি যথাযথভাবে শুনিয়ে দিন! যখন তারা দুই জনই কুরবানী পেশ করল, তখন তাদের মধ্যে একজনের নিকট থেকে কুরবানী কবুল করা হলো, আরেকজনের কাছ থেকে তা কিছুতেই কবুল করা হলো না, সে বলল, আমি অবশ্যই তোমাকে মেরে ফেলবো (যার কুরবানী কবুল করা হলো), সে বলল, আল্লাহ পাক তো শুধু পরহেযগার লোকদের নিকট থেকেই কুরবানী কবুল করেন।’(সূরা মায়েদা:২৭)।
যে কোন কাজের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভর করে। সমাজের লোক লজ্জার ভয়ে কিংবা মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানী করলে, তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। একমাত্র আল্লাহতায়ালাকে রাজী-খুশি করার উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে হবে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কুরবানীসমূহ, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য, যিনি প্রতিপালক সমগ্র বিশ্বজাহানের।’ (সূরা আনআম:১৬৩)।
প্রত্যেক নবী-রাসূলদের সময়ে কুরবানীর বিধান প্রচলিত ছিলো। ইহা নতুন কিছু নয়। প্রত্যেকটি কুরবানীর পশু আল্লাহর নামে জবাই করতে হবে। ইহার ব্যাতিক্রম কোনো কিছু হলে কুরবানীর পশুর মাংস খাওয়া যাবে না। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর বিধান দিয়েছি। তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুস্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে, তোমাদের ইলাহতো এক ইলাহ।’ (সূরা হজ্জ:৩৪)।
কুরবানীর পশুর মাংসের মধ্যে অফুরন্ত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। কুরবানীর পশুর মাংস নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি গরীব অসহায় আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশির মধ্যে বিলি-বন্টন করে দিতে হবে। ধনীর সম্পদের উপর যেমন এতিম অসহায় দুঃস্থদের হক আছে। এমনিভাবে যিনি কুরবানী করেন, তার কুরবাীনর পশুর মাংসের মধ্যেও দু:স্থ আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশির হক রয়েছে। কুরবানীর পশুর মাংস দুঃস্থদের মধ্যে বিলি-বন্টনের মাধ্যমে ধনী-গরীবের ঈদ আনন্দের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস পায়। এছাড়া কুরবানীর পশুর চামড়ার টাকা এতিম অসহায় দু:স্থদের মধ্যে বাড়তি আনন্দ প্রদান করে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘আর কুরবানীর উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি; তোমাদের জন্য তাতে কল্যাণ রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো যখন সেগুলি কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে খাও। যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়-তাদেরকে খেতে দাও। এভাবেই আমি এগুলোকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সূরা হাজ্জ:৩৬)।
কুরবানীর পশু জবাইর মধ্যে ত্যাগের মহিমা শিক্ষার উৎকৃষ্ট উদাহরণ রয়েছে। সকল আবেগ অনুভ‚তিকে বিসর্জন দিয়ে কুরবানী করতে হয়। তেমনিভাবে দুনিয়ার সকল প্রকার লোভ মোহ মায়া ও আমিত্বকে বিসর্জন দিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার দিকে বান্দাকে ধাবিত হতে হয়। কুরবানীর হাকিকত শিক্ষা হলো নিজের ভিতরে যে পশু শক্তি লুকিয়ে আছে; তা বিসর্জন দেয়া বা ত্যাগ করা। আমিত্ব বিসর্জনের প্রকৃত নামই হলো কুরবানী। কুরবানীর পশু জবাই থেকে আমিত্ব বর্জনের শিক্ষা নিতে হবে। কুরবানীর পশু জবাইর ন্যায় নিজের নফসকে আল্লাহর প্রীতি ও ভালোবাসা লাভের উদ্দেশ্যে কুরবানী করে দিতে হবে। আমরা যদি আমাদের মনের পশুকে কুরবানী দিতে পারি। তাহলে সমাজ ও পরিবারে প্রশান্তির সুবাতাস বইতে থাকবে। সমাজ থেকে হিংসা, নিন্দা, হানাহানি ও মারামারি দূর হবে। পুরো সমাজের চিত্রটা বদলে যাবে।আমরা আল্লাহর প্রীতি ও ভালোবাসা লাভ করতে পারব। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন। আমীন।

লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

Sponsored
Leave a Comment
শেয়ার
সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর

সর্বশেষ

রাওয়ালপিন্ডিতে বৈঠক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা

ঢাকা, ২৪ আগস্ট ২০২৫: পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. ফাইজুর…

August 24, 2025

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের…

April 24, 2025

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড"…

February 26, 2025

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের…

December 29, 2024

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024
Sponsored