সাম্প্রতিক শিরোনাম

গুজবে গা ভাসিয়ে দেবো না-মোহাম্মদ হাসান

নিকট অতীত ও হাল জামানার অবস্থা দেখে আমার বলতে হয়, ” কবি গুরু তুমি মিথ্যা বলোনি,সত্যি আমরা বাঙালি আজও মানুষ হতে পারিনি”।

বর্তনানে সারাবিশ্ব যখন করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন, উৎকন্ঠিত, কিভাবে মোকাবেলা করা যায় সে পথ খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত। ঠিক সেই সময়ে আমরা বাঙালিরা বাতাসে ভর করে আসা নানান গুজবে কান দিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য সামগ্রী কিনে ঘরের ষ্টোর রুম, ফ্রীজ ভরে তুলছি আর সে সুযোগ এক শ্রেণীর অতিমুনাফা লোভী অসাধু অসৎ ব্যাবসায়ীরা লুফে নিচ্ছে অবলিলায়। যা রোধে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্তা ব্যাক্তিদের। বসাতে হচ্ছে ভ্রাম্যমান আদালত! ইতিমধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেছেন যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী বা প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদ রয়েছে কেউ যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু না কেনেন বা সংগ্রহ করেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা যেমন, “চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনি ” এমন অবস্থা বর্তমানে বিরাজমান।
প্রায়ই নজর কাড়ছে যার পরিবারে আগামী ২ মাসে তেল লাগবে ৪ লিটার সে কিনে নিচ্ছে একসাথে ৮ লিটার, এভাবে চাল,ডাল,নুন,পিঁয়াজ,আলু থেকে শুরু করে সকল পণ্য সামগ্রী। আজ আমরা বাঙালিদের জীবন যাত্রার মান বেড়েছে, পকেটভর্তি টাকা রয়েছে তাই বলে হয়তো এমন হওয়া অস্বাভাবিক নয় এই কারনে যে, আমরা বাঙালিরা আজও মানুষ হতে পারিনি বলেই।

সুতরাং বলছিলাম কি ইতিপূর্বে তো কিছু গুজবের ফলাফল আমারা জেনেছি বা দেখেছি, এই যে ধরুন পদ্মাসেতুতে শিশুর মাথা লাগবে এমন গুজবে ভর করে আমরা সারাদেশে বেশ” কজন হাবাগোবা,বুদ্ধি প্রতিবন্দ্বিকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে দুনিয়া ছাড়া করে দিয়েছি।

লবনের দাম বেড়ে যাচ্ছে এমন গুজবে রাত বারোটায় যে পরিবারের বাংসরিক লবনের চাহিদা ১২ কেজি সে পরিবারও ২০ কেজি কিনে বাড়ি ফিরেছেন।
পিঁয়াজের বিষয়ে বৈশ্বিক সংকটে পড়ে তখনও পিঁয়াজ গুজবেও আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে ৩ মাসের ষ্টক গোডাউন ও একদিনেই ফিনিস করে দিয়েছি।
সুতরাং সাধু সাবধান। বর্তমানে দেশে এপর্যন্ত ৪২৪ জন ব্যাক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তা সকলেই জেনে গেছেন ইতিমধ্যেই তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে। তবে আপনার পাশেই ঘাপটি মেরে বসে আছে কিছু অতি মুনাফাখোর অসাধু ব্যাবসায়ী অতি লাভের আসায় নানাহ গুজন রটায়।

অপরদিকে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যেও একটা শ্রেণী এমন সুজোগ কাজে লাগিয়ে গুজব রটিয়ে হীনস্বার্থ চরিতার্থে সদা প্রস্তুত।

গুজব দিন দিন ভংয়কর আকার ধারণ করেছে। তথ্য-প্রযুক্তি যত উন্নত হয়েছে গুজবের ব্যাপকতা তত বৃদ্ধি পেয়েছে। গুজবের ডালপালা ছড়াচ্ছে দেশের আনাচে কানাচে। আসলে গুজব কী? কেন মানুষ এর পিছনে দৌড়ায়? গুজব কে ছড়ায়? তার মাধ্যম কী? গুজবে কান কারা দেয়? এ প্রশ্নগুলো মাথায় ঘোরপাক খায়, যতই গভীরে প্রবেশ করি বেরিয়ে আসে অজানা সব রহস্য। গুজব এখন মহামারী ব্যাধির মত সমাজকে অসুস্থ করে দেয়। গুজব নামক গজবে কত প্রাণ যে অকালে ঝরে যাচ্ছে তার সঠিক হিসাব হয়ত আমার কাছে নেই। কিন্তু গুজবের ভয়াবহতা আমাদের কাঁদায়।
গবেষক অধ্যাপক আফসান চৌধুরী কোন এক লেখায় বলেছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভর করে কেউ তার মতামত প্রকাশ করলে গুজবতো হবেই। আমি সহমত পোষণ করি। আজকাল আমরা খুবই সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল। অথচ সামাজিক মাধ্যমগুলো সম্পর্কে কয়জনে সঠিক জ্ঞান রাখে? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ পরিপক্ক নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মত একটা গুরত্বপূর্ণ প্লাটফর্মে আমাদের ছেলেমেয়েরা দক্ষতা প্রদর্শনে ব্যর্থ। আর তাদের অদক্ষতার উপর ভর করে গুজব নিয়ে আসে গজব। গুজব সবসময়ই অনাকাক্সিক্ষত সংকটের দিকে ধাবিত করে। গুজবকারীকে কেউ পচ্ছন্দ করে না। এমনকি পবিত্র কোরআনে সূরা বনি ইসরাইলে আল্লাহ বলেন, যে বিষয়ে তোমার নিশ্চিত বিশ্বাস নেই আন্দাজে তা প্রচার করো না। কেননা চোখ, কান ও অন্তর এ সবকিছুরই জবাবদিহিতা করতে হবে (আয়াত ৩৬)।

কিছুদিন আগে ছেলে ধরা বা কল্লা কাটা গুজবে আতঙ্কে ছিল দেশবাসী।খুবই মর্মাহত হয়েছি যখন খোদ রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজের সন্তানকে ভর্তি করাতে যাওয়া এক নারীকে ‘ছেলে ধরা’ সন্দেহে গণপিটুনি দেয়া হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত মানুষের তত্ত্বাবধানে যদি এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে,তবে আমাদের সমাজ কত কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও গুজবে বিশ্বাসী,তা চিন্তা করে শিউরে উঠতে হয়।

আবার দেখা গেছে পুলিশ ইন্সপেক্টর বাবুল আকতারের স্ত্রীকে যখন সন্ত্রাসীরা নৃংশসভাবে হত্যা করে তখন সারা দেশের মানুষ বাবুল আকতারকে সমবেদনা জানাচ্ছে। তার প্রতি মানুষের আবেগ ভালবাসা তৈরি হয়ে যায় রাতারাতি। কিন্তু পরের দিন যখন জাতীয় দৈনিকগুলো ফলাও করে নিউজ ছাপে স্ত্রী হত্যা সন্দহে বাবুল আকতার জড়িত কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পরে আবার হৈচৈ পড়ে। বাবুলের বিরুদ্ধে বিষোদগার। তখন ঘটনার সত্য মিথ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে রটনাকারীরা গুজব ছড়ায়।

গতবছর জুলাই মাসে গুজব ছড়ায় যে যত মশা আছে সব মরে যাবে ৫০০ গ্রাম হারপিক ও ৫০০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার একসাথে মিশ্রণ করে ড্রেনে ঢাললে। নিউজটি সামাজিক মাধ্যমে রাতারাতি ভাইরাল, মানুষ দৌড়ায় হারপিকের পিছনে। যদিত্ত এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তারপরও সচেতন সমাজের একটা অংশকে এ ধরণের গুজবে বিশ্বাস করতে দেখে অবাক হই।
ভোলায় যে ঘটনা ঘটেছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের এক যুবকের ফেসবুক আইডি থেকে আমাদের নবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে ধর্মপ্রাণ এলাকাবাসী জড়ো হয়েছিল কিন্তু সেখানে এলাকাবাসীকে ফুঁসিয়ে দিয়ে বড় ধরনের নৈরাজ্য তৈরি করতে চেয়েছিল একটি মহল। ভুল তথ্যে দিয়ে প্রভাবিত করতে চেয়েছিল গুজবকারীরা। এখানে অবশ্যই প্রশাসনের ব্যার্থতা রয়েছে। পুলিশ কেন গুলি করতে গেল? তাদের এ অধিকার দিল কে? আর কোন অপরাধী যদি অপরাধ করেও থাকে তাহলে তাকে কেন আইনের আওতায় আনা হয় না? যদি কেউ ভুল তথ্যে দিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পদক্ষেপ নিবে।পাশাপশি মানুষের উচিত ঘটনাটি কতটুকু সত্য তা যাচাই করা। রামুর ঘটনা দেশবাসী এখনো ভুলেনি।

গুজব নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ১৯৪৭ সালে, আমেরিকান মনোবিজ্ঞানি গর্ডন অলপোর্ট এবং লিও পোস্টম্যান তাঁর লেখা বইতে গুজব রটানোর ছয়টি উল্লেখযোগ্য কারণ তুলে ধরেন। ১. অনিশ্চয়তা থাকলে লোকেরা গুজব ছড়িয়ে দেয়, ২. মানুষ যখন উদ্বেগ অনুভব করে তখন গুজব ছড়ায়, ৩. ইনফরমেশন অতি গুরুত্বপূর্ণ হলে লোকেরা গুজব ছড়ায়, ৪. লোকেরা যখন তথ্যে বিশ্বাস করে তখন গুজব ছড়ায়, ৫. লোকেরা যখন তাদের আত্ম-চিত্রকে সহায়তা করে তখন গুজব ছড়ায়, ৬. মানুষ যখন তাদের সামাজিক অবস্থানকে সহায়তা করে তখন গুজব ছড়ায়। আবার আমি মনে করি, তথ্যে যাচাই বাছাই এর একটি অন্যতম কারণ হতে পারে যা লোকজন না করে সহমত পোষণ করে।

প্রযুক্তির এ যুগে এসে আমরা নিজেদের খুবই স্মার্ট মনে করি। কিন্তু আসলে কী তাই? স্মার্ট হওয়া কি এত সহজ যেভাবে চাইলাম সেভাবে নিজেকে তুলে ধরলাম। প্রকৃত অর্থে প্রযুক্তির যে ঢেউ বইছে তা সইতে পারছে না আমাদের সমাজের একটি অংশ। বিশেষ করে তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এর জন্য অবশ্য আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা দায় এড়াতে পারে না। অভিবাবকদের কথা ত এখন বলিই না। অথচ ছেলমেয়েরা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় পরিবারের কাছ থেকে। অভিবাকদের পর্যবেক্ষণ এবং তদারকী সন্তান কখনো বিপথগ্রস্থ হতে পারে না। সামাজিক মূল্যবোধের অভাবে তরুণরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
তাছাড়া, অনেকে গুজব ছড়ানোর পিছনে সামাজিক মাধ্যম সমূহকে দায়ি করেন। তাদের যুক্তি এরকম আমরা যদি একটু পিছনের দিকে তাকাই অর্থাৎ বিশ বাইশ বছর আগে কিন্তু এরকম ছিল না, তখন কিন্তু ছড়ানোর মাধ্যম কম ছিল। সোজা কথা তারা ইন্টারনেটকে দোষারোপ করছেন। হা, তাদের বিশ্লেষণে যুক্তি আছে, তবে আমি একজন অনলাইন এক্টিভিষ্ট হিসাবে মানতে নারাজ। গুজব আগেও ছিল এখন আছে তবে বর্তমানে মাধ্যমের পরিবর্তন হয়েছে। আগে প্রতিটি সম্প্রদায়ের মধ্য গুজব ছড়াত তবে ধীর গতিতে, কিন্তু এখন ছড়ায় তড়িৎ গতিতে।

১৯৯১ সালে, একটি বিস্তৃত গুজব আফ্রিকান আমেরিকান সম্প্রদায়কে ঘিরে ঘটেছিল।গুজবটি ছিল যে সোডা ব্র্যান্ড, ট্রপিকাল ফ্যান্টাসি সোডা পপ, কু-ক্লাক্স-ক্লান তৈরি করেছিলেন। শুধু তাই নয়, সোডা একটি বিশেষ সূত্র দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল যা কালো পুরুষদের জীবাণুমুক্ত করে তোলে। অবশ্যই, এটি কেবল একটি গুজব ছিল এবং এটি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছিল। তবুও, গুজবের পরে সোডা বিক্রয় ৭০% হ্রাস পেয়েছিল এবং এমনকি লোকেরা কোম্পানির সরবরাহকারী ট্রাকে আক্রমণ করে যা তাদে ক্ষতির সম্মুখীন করে। কাজেই গুজব অনেক আগ থেকেই।

ইন্টারনেটের ভাল দিক যদি ব্যাবহার করা হয় তাহলে অবশ্যই মানুষ উপকৃত হবে। অবাক হওয়ার বিষয় হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির এ যুগে এসেও মানুষ ভুল তথ্যে উপর বিশ্বাস করে অভিমত প্রকাশ করে। এটাকে কি বলব মূর্খতা না অজ্ঞতা? যেমন অধিকাংশ মানুষ ফেসবুকের সঠিক ব্যাবহার জানে না। সচরাচর যা লক্ষণীয় ছেলেমেয়েরা না বুঝে, না পড়ে ফেইসবুকে লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করে যা পরবর্তীতে সমাজে একটা বিরুপ প্রভাব পড়ে। আর এই শেণ্রীটাকে পুজিঁ করে উগ্রবাদী অপরাধীরা গুজব ছড়ায়। যার পরিপেক্ষিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাছাড়া অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করা শ্রদ্ধাবোধ না থাকা গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে না উঠা অনেকাংশে দায়ি। অদক্ষতা আর একটি বড় কারণ।

মার্ক জুকারবার্গ যখন হার্ভার্ডের কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন তখন তিনি সহপাঠী এডুয়ার্ডো সাভারিন, ডাস্টিন মোসকোভিটিজ এবং ক্রিস হিউজের সাথে ফেসবুক আবিষ্কার করেছিলেন। তাদের মূল উদ্দেশ্যে ছিল সহপাঠী বন্ধু বান্ধবদের কীভাবে এক নেটওয়ার্কের মধ্য আনা যায়। আশ্চর্যজনকভাবে, ওয়েবসাইটটি শুধু যে বাংলাদেশে তা নয় সারা বিশ্বে অপব্যবহার করা হচ্ছে, তবে উন্নত দেশসমূহে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়, তারা ফিল্টার করে। জুকারবার্গ এখন হয়ত আফসোস করছে, তবে তার উদ্ভাবন ভুল ছিল না। আমাদের ব্যবহার পদ্ধতি ভুল।

বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো গুজব। পদ্মা সেতুতে লাগবে শিশুর মাথা, নিখোঁজ হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বেসিনে হারপিক ঢাললে মরবে এডিস মশা- এমন সব গুজব ছড়িয়েছে বাংলাদেশে৷পুরো সমাজই যেন ছুটছে গুজবের পেছনে।
পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথাঃ পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা লাগবে বলে যে খবর রটে যায়৷ এরপর সেতু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে জানান এটি গুজব।

ছেলেধরা গুজবঃপদ্মাসেতুতে মানুষের মাথা লাগবে এমন গুজব ছড়িয়ে শিশুদের ধরে নেওয়া হচ্ছে বলে ‘ছেলেধরা’ গুজব ছড়িয়ে পড়ে৷ ছেলেধরা সন্দেহে কয়েকজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ পরে এনিয়ে সতর্কবার্তা জারি করে সরকার৷ এই গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নত করে তাদের গ্রেপ্তার করে৷
নিখোঁজ স্যাটেলাইটঃ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিখোঁজ’ শিরোনামে একটি খবর বেনামী কিছু ওয়েবপোর্টাল ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে৷ পরে সরবারি ভাষ্যে এই খবরকে গুজব বলে নিশ্চিত করা হয়৷
ডেঙ্গু প্রতিরোধে হারপিকঃকমোডে বা বেসিনে হারপিক ও ব্লিচিং পাউডার ঢেলে এডিস মশা মারার একটি বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷ পরে বিশেষজ্ঞরা এটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন৷ হারপিকের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানও জানায়, এই তথ্যের কোনো সত্যতা নেই৷

হেফাজতঃঢাকার শাপলা চত্বরে যৌথ বাহিনীর অপারেশনে হেফাজতে ইসলামীর কর্মীদের মৃতের সংখ্যা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে৷ পরে পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, গণমাধ্যমের সামনে ওই অপারেশন পরিচালিত হয়েছে, নিহতের ব্যাপারে যে খবর ছড়ানো হচ্ছে তা গুজব৷ এখন কত তা সঠিক জানা জায়নি।

বিদ্যুৎ বন্ধঃছেলেধরা গুজবের রেশ না কাটতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনদিন বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে ম্যাসেঞ্জারেরর মাধ্যমে গুজব ছাড়িয়ে পড়ে৷ পরে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, এই খবরটি সঠিক নয়৷

মোটরযান আইনঃসংশোধনী মোটরযান আইন অনুযায়ী জরিমানার পরিমাণ সর্বোচ্চ এক হাজার গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে৷ সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা ঠিক নয় বলে জানানো হয়৷

ভুয়া নোটঃএক পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্য পাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ছবি সম্বলিত নতুন ১০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে জানিয়ে সেই নোটের একটি ছবিও ছড়িয়ে যায় ফেসবুকে৷ পরে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় এই তথ্য ভুয়া৷

ধর্ম অবমানার গুজবঃফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা হয়৷ বাংলাদেশের আরো বেশ কয়েকটি জায়গায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

কেন এই বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও তথ্য প্রবাহের সহজলভ্যতার যুগেও মানুষ গুজবে বিশ্বাস করছে। কেন নিজে যাচাই করার সুযোগ থাকতেও কিছুই যাচাই না করে ঝাপিয়ে পড়ছে গুজবের মিছিলে।মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, পৃথিবীতে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে মানুষ যতগুলো নির্বুদ্ধিতার কাজ করে তার মধ্যে একটি হলো গুজবে বিশ্বাস করা। বিশেষ করে গুজবের ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক শিক্ষিত ব্যাক্তিও যুক্তি তর্কের উর্ধে গিয়ে গুজবকে বিশ্বাস করছেন। যে আচরনটি আসলেই রহস্যময়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরণের বিভ্রান্তিকর পোস্টের জেরে সাম্প্রতিক সময়ে সহিংস ঘটনায় ৮ জন নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা জন সচেতনতামূলক, প্রতিরোধমূলক ও আইনগত-এই তিন ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।””এরইমধ্যে আমরা সন্দেহজনক ৬০টি ফেসবুক আইডি, ২৫টি ইউটিউব লিংক এবং ১০টি নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুজব রটনাকারী অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।” এর আগে বাংলাদেশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট সরাসরি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে গুজব ঠেকানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল।

পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা লাগবে বলে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়েছে
তবে ফেক নিউজ ঠেকাতে এই পদ্ধতি বেশ সময়সাপেক্ষ বলে মনে করছেন আইটি বিশেষজ্ঞ মিনহার মোহসিন। চাইলে তিনটি উপায়ে সহজেই এ ধরণের গুজবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে বলে তিনি পরামর্শ দেন।

“সাধারণত গুজব গুলো ফেসবুক নিউজ ফিডে আর ইনবক্সের মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এখন যারা এসব জায়গায় পোস্ট শেয়ার করে, তারা হয়তো ম্যানুয়ালি ঘণ্টায় ১০ হাজার মানুষের কাছে একটা মেসেজ পাঠাতে পারছে।”
“এখন সেম পোস্টের কাউন্টার পোস্ট আমরা ভাইরাল করতে পারি ডিজিটাল মার্কেটিং মেথড ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে ঘণ্টায় ১ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছানো অসম্ভব কিছু না। এর মাধ্যমে একটা ইনস্ট্যান্ট রেজাল্ট পাওয়া যায়।”
“দুই নম্বর উপায় হচ্ছে এ ধরণের গুজবের পোস্ট দেখলেই সেটা নিয়ে স্ট্যাটাস না লিখে সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করে দেয়া। যখন অনেক মানুষ একসঙ্গে রিপোর্ট করবে তখন অটোমেটিকেলি ফেসবুক একটা ব্যবস্থা নেবে।”
আর “তৃতীয় উপায় হল প্রি ভাইরাল অ্যাওয়ারনেস। অর্থাৎ কোনটি গুজব আর কোন ধরণের পোস্ট শেয়ার করা যাবেনা। এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা খুব জরুরি।”
এমন গুজবে কান না দিতে সেতু নির্মাণ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি একটি বিবৃতি প্রকাশ সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
ব্রিজ নির্মাণে মানুষের মাথা প্রয়োজন হওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি গুজব বলে সেখানে নিশ্চিত করা হয়।

গুজবে বিশ্বাস করার বিষয়টি শুধু বাংলাদেশেই নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুগে যুগে গুজবের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ফলে অনেক বড় সময় নিয়েই মনোবিজ্ঞানীরা এর ব্যখ্যা বিশ্লেষনের সুযোগ পেয়েছেন। যুগে যুগে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা।
তাই আসুন আমরা সকলে শুনবো – জানবো – অমনি বিশ্বাস না করে বাস্তবতা জানার চেষ্টা করবে, কে বলেছে,কেন বলেছে, কার থেকে জেনে বলেছে, কোথাও এমনটি ঘটছে কি না এসব বিষয় সঠিক ভাবে জেনে নেবো। গুজবে গা ভাসিয়ে দেবো না।

লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আল খারজ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও আল কাসিম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন...

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের ও সুইস পর্যবেক্ষক দল।দুপুর একটার দিকে উপজেলার কয়েকটি ভোট...

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার উদ্দেশ্যই ট্রেনে আগুন দেয়া হয় বলে জানায় ডিবি। বিএনপি...