চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। বাঙালিকে ঠেকায় কে? ঘরবন্দি বঙ্গজ আঁতেলদের পাচনপ্রক্রিয়া কাজ করছে না চায়ের দোকানে তর্কের তুফান না তুললে। সে কারণে যতই লকডাউনের মতো পরিস্থিতির দিকে এগচ্ছে, ততই মানুষও যেন সর্বনাশের প্রহর গুনতে লাগছে। সকাল থেকে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত পিলপিল করে মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে রাস্তায়, পাড়ার দোকানে দোকানে, বাজারে, কিছু না পেলে গলির মোড়ে চার-পাঁচজন মিলে জটলা না করলে যেন পেটের ভাত হজম হচ্ছে না। এ যেন সবেতন ছুটির এক অভিনব উৎসবে মাতোয়ারা গোটা বাংলা। আর যেখানে পুলিশ এসে জটলা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। বিনা পয়সার ত্রাণ যেন আজ, এখনই না নিলে এ জীবনে আর পাওয়া হয়ে উঠবে না—এই মানসিকতায় ভিড় বাড়ছে। ধস্তাধস্তি চলছে। কেউ বুঝতে পারছে না, প্লেগ, কলেরা, গুটিবসন্তের থেকেও কত বড় সর্বনাশ ওত পেতে রয়েছে, আমাদের চার ধারে। আকালের থেকেও ভয়ঙ্কর দশা আজ পুরো পৃথিবীর।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের সর্বচ্চো চেষ্টা ভেঙে দেওয়ার এক অলিখিত চক্রান্ত করে বাংলার ও মানবসমাজের সমূহ ক্ষতিসাধনের চেষ্টা চলছে চারপাশে। যেখানে এদেশের মানুষ স্বাভাবিক খাদ্য পাচ্ছেন। জীবনধারণের আর পাঁচটা সুবিধা পাচ্ছেন। কারও খাওয়া-পরার সমস্যা না হয়, এমন সমস্ত ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী দিনরাত পরিশ্রম করে চালিয়ে যাচ্ছেন, তাও আমাদের সম্বিৎ ফিরতে চেয়েও ফিরতে চাইছে না। কারণ, কয়েকটা দিন ধৈর্য ধরার মানসিকতা নেই। আর তার পরিণামের জন্য অন্যদের এখন প্রতীক্ষা করে থাকা ছাড়াও গত্যন্তর নেই। যদি না এরমধ্যে বাঙালির ব্যুৎপত্তি ফেরে।
আপাতত আর মাত্র দু’সপ্তাহ। কিন্তু তারপর! এই আগামীর চিন্তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এখন মাথা কুটে মরছেন। কারণ, এই মারণ এই ভাইরাসের শেষটুকুও ফের বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ নিয়েই আলোচনা করেছেন। অঘোষিত লকডাউনকে দেশবাসী যেভাবে অবজ্ঞা করেছে, সেখানে এটা উঠে গেলে কী ঘটতে পারে, তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। বিশেষজ্ঞগণ তো বারবার বলছেন, একমাস পরেও এই ভাইরাস আবার মাথাচাড়া দিতে পারে। তাহলে? আমাদের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে, সেকথা নিয়ে সত্যিকারের ভাবনা এই মুহূর্তে প্রয়োজন। এটাও ঠিক যে, অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন করে দেশকে বসিয়ে রাখা যায় না। উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ভারসাম্য সবই প্রভাবিত হচ্ছে এর প্রভাবে। কিন্তু, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে পা ফেলতে গেলে, এছাড়াও বিকল্প পথ নেই। শুধুমাত্র সরকারি নির্দেশটুকু মেনে চললেই হবে।
যদি অমান্য করি তাহলে কী হবে, সেকথা সবিশেষ অনেকেই জানেন। পৃথিবীর উন্নত দেশ বলে এত যুগ ধরে কলার উঁচু করে চলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘দাদাগিরি’ ঘুচিয়ে দিয়েছে আণুবীক্ষণিক ‘মৃত্যুদূত’ করোনা। ১৯৪৫ সালে যারা বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান হয়ে জাপানের দু’টো শহর ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল, আজ ২০২০ সালে তারাই দেশরক্ষার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ, বাংলাদেশের তুলনায় তাদের লোকসংখ্যা কত কম! ফলে, লকডাউনের শেষে কী করণীয়, তা এখন থেকেই ভেবে উপায় বের করতে হবে। ‘বেঁচে’ থাকলে সমালোচনা, রাজনীতি, বিরুদ্ধাচারণের সময় পাওয়া যাবে। সমালোচনা-নিন্দার কী এটাই সময়! কাজ করলেই ভুল হবে—আর ঠান্ডা ঘরে বসে সংবাদমাধ্যমের সামনে বাক্যবাণ বর্ষণ করায় কোনও ঝুঁকি নেই। কিন্তু, যাঁরা এটা করছেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন না, এর ফলে তাঁরাও মানুষের কাছ থেকে আরও বেশি করে সামাজিক দূরত্বে চলে যাচ্ছেন। করোনার প্রাদুর্ভাবের মতো এরাও একদিন মানুষের মন থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
লেখকঃমোহাম্মদ হাসান,সাংবাদিক ও কলামিস্ট।