সাম্প্রতিক শিরোনাম

প্রশাসনিকভাবে করোনা মোকাবিলা সম্ভব নয়- মোহাম্মদ হাসান

নতুন বছর,নতুন প্রত্যাশা আর নতুন ভাবনায় জেগে ওঠার এই শুভ মুহূর্ত। কিন্তু কোথাও যেন সেই আবেগ আর আনন্দের ক্ষীণতম রেশটুকুও নেই। করোনার চোরা আতঙ্কে আমাদের প্রাত্যহিকতা ও পারিপার্শ্বিক সব কিছু যেন বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে। বাংলার সবুজ প্রাণবন্ত জীবন যেন কুঁকড়ে গিয়েছে। যেন খরাদীর্ণ মাঠের ধূসর ফসল। নতুন বছর চুপি চুপি এল। সেও যেন দ্বিধান্বিত, সঙ্কুচিত। আমদের ভীরু মনের মতোই। আজ বাঙালি জীবনের ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’ তত্ত্বটা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে মনে হয়। তাহলে কি আমাদের জীবন থেকে আগামীদিনের সব উৎসব হারিয়ে যাবে? না, তা হয় না, হতে পারে না! জীবনের এই সাময়িক ঝটকা একদিন কেটে যাবেই। সেদিন আবার আমাদের জীবন পুরনো খাতেই বয়ে যাবে। আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের আবেগ, আমাদের মনন, আমাদের আত্মিকবোধ সব নতুন করে প্রসারিত হবে। আমরা জানি, রাতের সব তারাই জেগে থাকে দিনের আলোর গভীরে।

পহেলা বৈশাখ মানেই বাঙালির ব্যবসার হালখাতা। বাণিজ্য বসতে লক্ষ্মী, এই ভাবনায় সে বিশ্বাসী। কিন্তু এবছর সব যেন কোথায় হারিয়ে গেল! লক্ষ্মী, গণেশের আরাধনা আর হল না। আজ আমরা কেউ জানি না, ব্যবসার অবস্থা শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে। শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, অর্থনীতি সব থমকে গিয়েছে কোন এক মহাশক্তিশালী দানবের হুঙ্কারে। তা সত্ত্বেও আমরা জানি, একদিন আবার আমরা ফিরে পাব সেই হালখাতার দিনগুলি। দোকানে দোকানে ভিড়, ডাব, ঠাণ্ডা পানীয়, একটি মিষ্টির বাক্স আর ক্যালেন্ডার দিয়ে আপ্যায়নের সেই হারানো দিন আমরা ফিরে পাবই।

করোনার ভয়াবহ বিপর্যয় কতদিন ধরে চলবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। আজ সারা পৃথিবীটাই করোনায় আক্রান্ত। শুধু ইউরোপেই মৃতের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলছে মৃত্যুর মিছিল। দিশেহারা মার্কিন প্রশাসন চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা বিষয়ে সরাসরি সাহায্য চাইছে। স্বয়ং ট্রাম্প ওষুধ সরবরাহের ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। করোনায় আক্রান্ত ইউরোপের রাষ্ট্রপ্রধানরা চীনের কাছে চিকিৎসা সহায়তা চেয়েছেন। বিশ্বজুড়ে যে পরিস্থিতি তাতে আদতেও রাষ্ট্রগুলি একে অপরকে সাহায্য করবার মতো জায়গায় আছে কি?
বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভাববার সময় এখন নয়। মানব সভ্যতাকে রক্ষা করার এই লড়াইয়ে অর্থনীতির ভাবনা এই মুহূর্তে তুচ্ছ। যদিও আগামী সময়ের নিরিখে অর্থনীতির প্রভাবকেও উপেক্ষা করা যায় না। করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যে সঙ্কটে পড়বে সেটা মানবসভ্যতা রক্ষার লড়াইয়ের আরেকটি পর্ব হিসাবে চিহ্নিত থাকবে।

বিপুল জনসংখ্যার প্রেক্ষিতে করোনার সংকট আলাদা মাত্রা পেয়েছে বাংলাদেশ। চেষ্টা করেও এর প্রভাব নির্দিষ্ট কয়েকটি জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব হয়নি। প্রায় সারাদেশেই মানুষ আক্রান্ত, তেমনি লকডাউনের ফলে গোটা দেশই আর্থ-সামাজিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। পরিস্থিতি ইউরোপ আমেরিকার মতো নয় ঠিকই, কিন্তু সংক্রমণ এবং মৃত্যু দুটোই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তা এ এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। লকডাউন কতদিন চলবে কারও জানা নেই।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠে আসছে:
ক) রাষ্ট্রের এসব উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক হিসাবে আমরা নিজেদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করছি তো?
খ) যদি দীর্ঘদিন লকডাউন থাকে তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশল সরকার নিচ্ছে তো?
গ) কেবল প্রশাসনিক উদ্যোগের উপর নির্ভর করে দীর্ঘ লড়াই জারি রাখা বাস্তবে সম্ভব হবে কি?
ইতালি, স্পেন বা আমেরিকার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলা করা কেবল প্রশাসনের পক্ষে মোটেই সম্ভব হবে না। দীর্ঘমেয়াদে নাগরিক জীবনের উদ্যমী মানুষ ও সামাজিক সংগঠনগুলিকে প্রস্তুত করা ও রাখার বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে আলোচনায় আসা যাবে। এখন দেখা যাক,অঘোষিত লকডাউন ঘোষণার পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রশ্নে মূল সমস্যা কোথা থেকে উঠে আসছে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য কী করা যেতে পারে।
অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাজারগুলিতে মানুষের ভিড় এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না বিভিন্ন কারণে। বিকেল পর্যন্ত হাটবাজার খোলা থাকায় বিপুল সংখ্যক ক্রেতা একইসময়ে বাজারে জড়ো হওয়ায় এবং বিপদ এড়ানো কঠিনই হচ্ছে। বহুক্ষেত্রে ১ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে হাটবাজার করার মতো অবস্থা নেই। এক্ষেত্রে প্রশাসন পুরনো বাজারগুলি সরিয়ে নিয়ে গ্রামস্তরে বড় খেলার মাঠে চালু করার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।

বাংলাদেশে মূলত সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনকে এই কাজে যুক্ত করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য নাগরিকদের সচেতন করার উদ্যোগ যেমন পুলিশ নিয়েছে তেমনি প্রস্তুত খাবার বিতরণের ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকাই মুখ্য। একইসঙ্গে হাসপাতলে রোগীকে পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বও তাদের। পুলিশ প্রশাসনের উপর এই অতি নির্ভরতা স্বল্পমেয়াদে সুফল দিলেও দীর্ঘমেয়াদে ব্যাপারটি কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

বিপদ পরে ভয়ঙ্কর আকার নিলে সমাজের নানা স্তরের মতন পুলিশ প্রশাসনও সেই প্রভাবের বাইরে থাকবে না। আশঙ্কাটি একইভাবে চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ডাক্তার থেকে নার্স, প্যারামেডিকেল স্টাফ থেকে হাসপাতালের একজন ওয়ার্ডবয় সবার জন্যই প্রযোজ্য। অর্থাৎ বৃহত্তর বিপর্যয়ের কথা মাথায় রাখলে কেবল প্রশাসনিকভাবে করোনা বিপর্যয়ের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এখানেই প্রশ্ন আসবে বিকল্প কর্মিবাহিনী কোথা থেকে আসবে এবং কীভাবে তৈরি করা সম্ভব? সময় নষ্ট না-করে এখনই সংগঠিতভাবে বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের আহ্বান করা হোক। যোগদানে ইচ্ছুক স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক এবং বড় বিপর্যয় এলে নির্দিষ্টভাবে কোন কাজ কাকে দেখতে হবে তা আগাম নির্ধারণ করে দেওয়া হোক। এই সমগ্র প্রক্রিয়াটিতে অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে মান্য স্বাস্থ্যবিধি। এমন হতেই পারে বড় বিপর্যয়ে একটি নির্দিষ্ট থানার বহু সংখ্যক পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে কাজের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এই অবস্থায় স্বল্প মেয়াদি প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের কিছু সময়ের জন্য থানার কাজে সহায়তা করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এভাবে সমাজের বিভিন্ন সেক্টরের কাজে প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবকদের যাতে পাওয়া যায় তার প্রস্তুতি এবং প্রশিক্ষণের জন্য এটাই শেষ উপযুক্ত সময়।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আল খারজ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও আল কাসিম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন...

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের ও সুইস পর্যবেক্ষক দল।দুপুর একটার দিকে উপজেলার কয়েকটি ভোট...

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার উদ্দেশ্যই ট্রেনে আগুন দেয়া হয় বলে জানায় ডিবি। বিএনপি...