সাম্প্রতিক শিরোনাম

সরকারকে আরো কঠোর হওয়াসহ খাদ্যপন্যের মজুত বাড়াতে হবে -মোহাম্মদ হাসান

বৈশ্বিক ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি মহামারি করোনা ভাইরাস নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের চতুর্থ ধাপের পথে এক পা পড়েছে বাংলাদেশের। যে কোনো সময় এ ধাপে পুরোপুরি প্রবেশ করবে দেশ। আর তখনই নেমে আসবে ভয়াবহ বিপর্যয়। কেননা, এ ভয়ংকর গণসংক্রমণ ঠেকানোর মতো চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা আমাদের নেই’। এ দিকে করোনা মহামারির জেরে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আস্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, এই মহামারির কারণে সামাজিক অস্থিরতা ও সহিংসতা বৃদ্ধি পাবে, যা কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করবে।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এখন দিন দিন অবনতির দিকে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যু। সরকার এ জন্য জরুরি সেবা, খাদ্য, ওষুধ ও রপ্তানিমুখী উৎপাদন খাতগুলো ব্যতীত সব-সরকারি-বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে। পাশাপাশি ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়া এলাকাগুলোকে একের পর এক লকডাউন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কঠোর করা হয়েছে মানুষের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা। সন্ধ্যা ৬ টার পর অতি জরুরি কাজ ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মোট কথা, মানুষকে ঘরে রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পড়েছেন উভয় সংকটে। অযথা ঘোরাঘুরি করা মানুষকে ঘরে ফেরাতে তাদের প্রচেষ্টার অন্ত নেই। মাইকিং করে, জনে জনে গিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করছেন সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাচল করা এবং প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া প্রসঙ্গে। তাঁরা কঠোর হতে পারছেন না, পারছেন না লাঠিপেটা করতে। আবার কঠোর না হলে মানুষ সরকারি নির্দেশনা মান্য করছেন না। মানুষই যদি তাঁর নিজের জন্য, পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য সচেতন না হন, তাহলে বিপদ আরো বড় হয়ে দেখা দেবে-তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এপ্রিল মাসটা বাংলাদেশের জন্য খুবই ক্রুশিয়াল ও ক্রিটিক্যাল। সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে মহাবিপদ সামনে। তাই এপ্রিলের প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ।

সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন যে উদ্দেশ্যে, তাকে কাজে লাগাতে হবে। ঘরে অবস্থান করে করোনার বিস্তার রোধে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অত্যন্ত দু:খের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে, নগরীর বড় বড় রাস্তাগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কম হলেও অলিতে গলিতে এখনো রয়েছে অকল্পনীয় সমাগম। শুধু কাগজে-কলমে ছুটি কিংবা লকডাউন হলে চলবে না, কার্যক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

আমাদের সাধারণ মানুষদের বুঝতে হবে, করোনার মতো ভয়াবহ মহামারি সামলানোর জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা-ব্যবস্থাপনা এ দেশে নেই। নেই পরিকাঠামোগত ও লোকবলের প্রস্তুতি। এখনো পর্যন্ত বেশিরভাগ মানুষ বুঝতে পারেনি-এ ভাইরাসের ভয়াবহতা বিষয়ে। হাসপাতালে আইসিইউ সংকটের খবর কারো অজানা না হলেও এখনো পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষ করোনাকে পাত্তা দিচ্ছেন বলে মনে হয় না। এরকম কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন ও সামাজিক দূরত্ব না মানা মানুষের সংখ্যা যদি না কমে; মানুষের ভেতরে যদি ডর-ভয় না ঢুকে; সচেতনতা বৃদ্ধি না হয়; তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কেমন হবে-তা বলা মুশকিল। এজন্য লকডাউন এবং সাধারণ ছুটি শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। সবাইকে ঘরে রাখার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে।

এদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রধান কিউ ডংইউ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রে্‌য়াসুস ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) পরিচালক রবার্টোএজভেডো সম্প্রতি এক যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে ব্যর্থ হলে বিশ্বে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে উক্ত তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানেরা সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন।

তবে এ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কতদিন চলবে? করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টায় বিশ্বজুড়েই সরকারগুলো তাদের জনগণকে লকডাউন, কোয়ারেন্টিন করাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও খাদ্যসরবরাহ ব্যবস্থা ভীষণভাবে মন্থর হয়ে পড়েছে। আতঙ্কগ্রস্ত বহু মানুষ খাবার মজুত করায় এরই মধ্যে অনেক পণ্য বাজারে হাওয়া হয়ে গেছে। সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম। এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক তিনটি সংস্থার প্রধানগণ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, খাদ্যপণ্যের সহজলভ্যতার অনিশ্চয়তা রপ্তানি বিধিনিষেধগুলো বাড়িয়ে তুলতে ও বৈশ্বিক বাজারে ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে গৃহীত লকডাউনের মধ্যে প্রতিটি প্রচেষ্টা অবশ্যই এমনভাবে নিতে হবে যাতে অবাধ বাণিজ্যপ্রবাহ যতটা সম্ভব নিশ্চিত করা যায়, বিশেষত খাদ্য ঘাটতি এড়ানো যায়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দেশগুলো যখন তাদের নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের সুরক্ষায় কাজ করছে, তখন বাণিজ্য সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলো খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করবে না, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত। দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ অবস্থা এবং চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চললে কৃষিশ্রমের সহজলভ্যতার অভাব ও বাজারে খাদ্যপণ্য না পৌঁছানোর কারণে কৃষির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হুমকিতে পড়বে।

শীর্ষস্থানীয় এই কর্মকর্তারা খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের সুরক্ষা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিতরণের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘সংকট এড়াতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য। আমাদের অবশ্যই এটি নিশ্চিত করতে হবে, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আমাদের পদক্ষেপগুলো অনিচ্ছাকৃতভাবেও অপরিহার্য সামগ্রীর আকস্মিক ঘাটতি সৃষ্টি এবং ক্ষুধা ও অপুষ্টি বাড়াবে না। একটা বিষয় আমাদের আশা জাগায় যে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য চালের উৎপাদন সন্তোষজনক। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে যেই তথ্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তাতে জানা যায় গত অর্থ বছরে সরকারি-বেসরকারি খাতে পণ্যটির আমদানি মাত্র দুই লাখ ৫ হাজার টনে সীমাবদ্ধ থাকে। চলতি অর্থবছরেও চাল উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আমাদের উৎপাদন ভালো হয়েছে। খাদ্যশস্যের চাহিদায় দ্বিতীয় স্থানে আছে গম। রপ্তানিকারক দেশগুলো থেকে পণ্যটির রপ্তানি সীমিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা এবং বড় বড় আমদানিকারক দেশগুলোর বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় গম আমদানি করা জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সামগ্রিকভাবে বিশ্বজুড়ে যে খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে বলে যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, তা থেকে বাংলাদেশ মুক্ত নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্যে হতে পারে বড় হুমকিস্বরূপ। তাই সরকারকে এ বিষয়ে এখনই ভাবতে হবে। খাদ্য পণ্যের সন্তোষজনক মজুত গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর ও উৎপাদনমুখী জীবনযাপনের জন্য সবসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ ও পুষ্টি মানসম্পন্ন খাদ্যের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। যেসব পণ্য অনেকাংশে আমদানি নির্ভর, সেগুলোর মজুত গড়ে তুলতে হবে।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আল খারজ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও আল কাসিম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন...

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের ও সুইস পর্যবেক্ষক দল।দুপুর একটার দিকে উপজেলার কয়েকটি ভোট...

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার উদ্দেশ্যই ট্রেনে আগুন দেয়া হয় বলে জানায় ডিবি। বিএনপি...