শুধুমাত্র পুষ্টিগুণে নয়, মসলা হিসেবে কালো জিরার চাহিদাও অনেক। কালো জিরার বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি। কালোজিরাতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফসফেট, লৌহ এবং ফসফরাস। এছাড়া কালজিরাতে আরও রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধক কেরটিন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান এবং অম্ল রোগের প্রতিষেধক।
কালোজিরাকে আমরা কে না জানি ছোট বা বড় সকলেই চিনি? নামে এটা জিরা হলেও আসলে কিন্তু স্বাদে গন্ধে জিরার সাথে এর কোনও মিল নেই। আর ব্যবহার এর দিক থেকেও জিরার মতন নয়। কালোজিরার বিভিন্ন নাম হলেও ইংরেজিতে কালো জিরা “Nijella seed” নামে পরিচিত। বাঙালির খাদ্য তালিকায় পাঁচফোড়ন থেকে শুরু করে সিঙ্গারা আর নানান রকম ভর্তায় কালোজিরা না হলে কি চলে? কালজিরা সাধারণত আয়ুর্বেদিক, ইউনানি এবং কবিজারি চিকিত্সাতেও ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে।
আসুন জেনে নেয়া যাক আশ্চর্য বীজ কালোজিরার উপকারিতা গুলোঃ
১. স্মরণশক্তি বৃদ্ধিঃ আপনি নিয়মিত কালিজিরা খান। এটি আপনার মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। যার দরুন আপনার স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে। এর সঙ্গে এটি প্রাণশক্তি বাড়ায় এবং আপনার ক্লান্তি দূর করবে।
২. শরীরের ব্যথা কমাতে: আপনার শরীরে যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে কালো জিরার জুড়ি নেই। প্রথমে কালিজিরার তেল হালকা গরম করে নিন তারপর আপনার ব্যথার জায়গায় মালিশ করুন, ব্যথা অনেকটা সেরে যাবে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যাক্তিদের বাতের ব্যথায় বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।
৩. কালোজিরা আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করবেঃ আপনি যদি চান তাহলে কালোজিরার তেল শুধুমাত্র ব্যবহার করুন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য। শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি ও দূর করতে এটি অনেক বড় একটা ভূমিকা পালন করে থাকে। হৃদরোগ নিয়ন্ত্রন করে থাকে কালোজিরা।
৪. মাথাব্যাথাঃ কালো জিরার তেল মাথা ব্যাথা সারাতে দারুন উপকারী বটে। কালো জিরার তেল কপালে মালিশ করলে এবং তিন দিন খালি পেটে ১ চা চামচ তেল খেলে আরোগ্য লাভ করা যায় ।
৫. লিভার ক্যান্সারঃ আফলাটক্সিন সাধারণত লিভার কান্সার এর জন্য দায়ী। কালোজিরা এই আফলাটক্সিন নামক বিষ ধ্বংস করে।যারা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত তারা আজ থেকে খাওয়া শুরু করে দিন।
৬. যৌনশক্তি বৃদ্ধিতেঃ মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত আছে যে, কালো জিরা যৌন ক্ষমতা বাড়ায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। তবে একটা কথা, পুরানো কালো জিরা তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
৭. সর্দি-কাশিতে কালোজিরাঃ জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশিতে এক চা-চামচ কালোজিরার সঙ্গে তিন চা-চামচ মধু ও দুই চা-চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে প্রতিদিন একবার সেবন করুন। কালোজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিন যদি সর্দি বসে যায়। একই সঙ্গে পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে কালোজিরা বেঁধে শুকতে থাকুন, শ্লেষ্মা তরল হয়ে ঝরে যাবে। তাড়াতাড়ি ভালো ফল পেতে বুকে ও পিঠে কালিজিরার তেল মালিশ করুন।
৮. চুলপড়ারোধে কালোজিরাঃ নিয়মিতভাবে কালোজিরা খেয়ে যান এতে আপনার চুল পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে। ফলে চুল পড়া অনেকটা বন্ধ হবে। আর যদি ভালো ফল পেতে চান তাহলে চুলের গোড়ায় এর তেল মালিশ করতে থাকুন।
৯. দাঁতের ব্যথায় সারাতে: অনেক দিন ধরে দাঁত ব্যথা, মাঢ়ি ফুলে গেছে বা রক্ত পড়ছে তাহলে কালো জিরা খাওয়া শুরু করুন, কালোজিরা আপনার ব্যাথা উপশম করতে পারে। প্রথমে জলে কালিজিরা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। এই জলের তাপমাত্রা একটু কমে গেলে অর্থাত্ উষ্ণ অবস্থায় এলে তা দিয়ে কুলি করুন। এতে করে আপনার দাঁত ব্যথা কমে যাবে, মাঢ়ির ফোলা বা রক্ত পড়া বন্ধ হবে। এছাড়া আপনার জিহ্বা, তালু ও মুখের জীবাণু ধ্বংস হবে।
১০. হোমিওপ্যাথি ঔষধ তৈরিতেঃ আমাদের দেশে এখনও হোমিওপ্যাথি ঔষধ তৈরি করতে কালোজিরার জুড়ি নেই। সেই প্রাচীনকাল থেকে হোমিওপ্যাথি ঔষধ তৈরিতে কালোজিরা ব্যবহার হয়ে আসছে।
১১. বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধিঃ মায়েদের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন রাত্রে শোবার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেতে থাকুন। ইনশাআল্লাহ্ মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া এ সমস্যা সমাধানে কালোজিরা-র ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন।
১২. সকাল রোগের প্রতিষেধক: আপনি হয়ত বিশ্বাস করতে পারবেন না কিন্তু সত্য হল আপনি মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবন করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল মহামারী হতে রক্ষা পেতে পারেন।
সতর্কতা :
কালোজিরার একটা সতর্কতা আছে।তা হল গর্ভাবস্থায় ও দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করা উচিত নয়। তবে আপনি চাইলে বাহ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে পারেন।