বাংলাদেশে যেকারনে স্যামসাং বা এলজির মত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি গড়ে উঠেনা!

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

বাংলাদেশে প্রযুক্তি পণ্যে বিনিয়োগ করার সাহস দেখানো কোম্পানি খুজে পাওয়া কঠিন। ওয়ালটন সেই কাজটিই করেছে। উৎপাদন, সংযোজন মিলিয়ে তাদের পণ্যের বহর এতটা সমৃদ্ধ যে মনে হয় কি নেই তাদের? কিন্তু সমস্যা হল অভিজ্ঞতা এবং গ্রাহক সেবা। ওয়ালটনের মত দেশে অনেক কোম্পানি রয়েছে যাদের সুযোগ দিলে নিজ দেশ ছাপিয়ে বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ানোর ক্ষমতা রাখে।

যদি স্যামসাং, এলজি, হুয়াওয়ের মত বড় কোম্পানির দিকে তাকান তাহলে বুঝবেন কোন কোম্পানির সফলতার পথ মসৃণ নয়। তবে মোটামুটি একটি পর্যায়ে পৌছানোর পর দক্ষিণ কোরিয়া, চীনের মত দেশ সরাসরি তাদের দেশের ছোট কোম্পানিকে দৈত্যে রুপান্তরের জন্য সহায়তা করেছে। এখনো চীনের ইঞ্জিনিয়ারিং অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলার আন্তর্জাতিক টেন্ডারে অংশগ্রহণ, টেন্ডার পাবার জন্য সরকারি ভাবে সহযোগিতা, প্রয়োজনে সরকারি ভাবে বিনিয়োগ করে চীনের কোম্পানিকে কাজ দেয়ার জন্য সেদেশের সরকার প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে।

একটি ছোট কোম্পানিকে বিশ্বের বুকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে রুপান্তরের জন্য অবশ্যই সরকারের পলিসি সহযোগিতা এবং অন্যান্য সব ক্ষেত্রে স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত। বাংলাদেশ যদি এমন উদ্যোগ না নেয় তবে ভবিষ্যতে এদেশে স্যামসাং গড়ে উঠবেনা। এলজি, হুয়াওয়ে গড়ে উঠবেনা। যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালেও দেখবেন সেদেশের সরকার এপল, গুগলের মত কোম্পানির ব্যাবসায়ীক স্বার্থ রক্ষার জন্য জাতীয় পর্যায়ে কাজ করে। অন্যদেশে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলির স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করে। ব্যাবসা প্রসারে সহযোগিতা করে।

ভারতের আছে টাটা, মারুতি, মিত্তাল। তাইওয়ান এর আছে আসুস, এইচটিসি, এসারের মত কোম্পানি। অথচ আমাদের দেশে আমরা এরকম কোন কোম্পানি দাড় করাতে পারিনি যারা ভবিষ্যতে বিশ্ব খেলোয়াড় হবে। গার্মেন্টস শিল্পে বাংলাদেশ এখনো দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। আগামী বছর বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে চলে যেতে পারে ভিয়েতনামের কাছে পরাজিত হয়ে। কিন্তু কেন এই পরাজয়?

জাপানের উদাহরন দেয়া যাক। জাপান তৈরি পোশাকে বিশ্বের প্রথম সারির উৎপাদক দেশ নয়। কিন্তু জাপানিজ ব্রান্ড ইউনিকলো এই খাতে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি কোম্পানির একটি। সুইডেনের ক্ষেত্রেও এইচ এন্ড এম এর মত কোম্পানি রয়েছে যারা গ্লোবাল লিডার। অথচ এসব দেশ গার্মেন্টস পণ্য কেনে বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের মত দেশের ক্ষেত্রে। কেন এমনটা হয়েছে? কেন আমরা দ্বিতীয় বৃহৎ গার্মেন্টস উৎপাদক হয়েও এত বছরে একটা শক্ত ব্রান্ড দাড় করাতে পারিনি ? এর কারন হল সরকারি ভাবে ব্যাবসা করার সুযোগকে আমরা প্রসারিত করতে পারিনি। নীতিগত সমর্থন দিতে পারিনি। দেশের কোন কোম্পানির পক্ষে বিদেশে তদবির করতে পারিনি। আর যেটা পারিনি সেটা হল প্রকৃত ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিদেশে থাকা ব্যাবসায়ীক সুযোগ কাজে লাগাতে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত করতে।

মনে রাখতে হবে ব্যাবসার ক্ষেত্রে একটি কোম্পানি তখনি বড় হতে পারবে যখন সেই কোম্পানি প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। স্যামসাং কেন ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করেছে? কেন দক্ষিণ কোরিয়া এখানে বাধা দেয়নি? বরং আরো সুবিধা দিয়েছে? কারন ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করা আর্থিক ভাবে ফিজিবল ছিল। আর দক্ষিণ কোরিয়া চেয়েছে তাদের দেশের কোম্পানি সেই সুযোগ নিক। কিন্তু আমাদের দেশে এরকম সুযোগ কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রন করা হয়। চাইলেই বিদেশে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়না। অথচ এত নিয়মের ফাঁকে টাকা পাঁচার হচ্ছে বিলিয়ন ডলারের অঙ্কে। কঠোরতা দিয়ে ব্যাবসা হয়না। নিজের দেশে ব্যাবসার সুযোগ এমনভাবে বাড়াতে হবে যে দেশ থেকে টাকা যত বিদেশে যাবে তার কয়েক গুন বেশি টাকা দেশে আসবে। পেরেছি আমরা এমন করতে? মালয়েশিয়া কিন্তু সেকেন্ড হোম স্কিমের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশ হতে পাঁচার হওয়া টাকা সেদেশে টেনে নিচ্ছে।

এর বিপরীত চিত্র আমাদের দেশে। আমাদের দেশের অবকাঠামো প্রকল্পে আমরা বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেই। সেই বিদেশি কোম্পানি আমাদের দেশের কোম্পানিকে সাব কন্ট্রাকে কাজ দিয়ে কাজ করায়। অথচ আমাদের দেশে আবদুল মোনেম, ম্যাক্সের মত অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের সক্ষমতাকে তাচ্ছিল্য করা যায়না। এসব কোম্পানির পাশে দাড়াতে হবে আমাদের সরকারকেই।

সিঙ্গাপুরের কিছুই নেই। অথচ বিশ্বের নামকরা কোম্পানিগুলির প্রধান শাখা সেই দেশে। ছোট দেশ সিঙ্গাপুর পূনরপ্তানি করে বিশ্বের সেরা উন্নত দেশে পরিনত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের থেকে কিছু আমদানি করতে গেলেও অঅধিকাংশ সময় আমাদের এলসি বেনিফিসিয়ারি থাকে সিঙ্গাপুরের কোম্পানি। এর কারন হল আমরা আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেইনা। পরিচর্যা না করলে বৃক্ষ বড় হবে কি করে?

জাহাজ তৈরির জন্য টেন্ডার পেতে নেদারল্যান্ডস ড্যামেন কোম্পানির পক্ষে কম কাজ করেনি? কিন্তু আমাদের খুলনা শিপইয়ার্ড এর পক্ষে আমরা এমন ভূমিকা রাখতে পারছিনা। দরকার আমাদের মানসিকতা বদলানো। আর দরকার আমাদের বিদেশি মিশনগুলিকে ঢেলে সাজানো। আমাদের দেশে অন্যদেশের মিশনের কাজ আমাদের চোখে পড়ে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রকল্পে জাপানিজ, চাইনিজ, ভারতীয়, নেদারল্যান্ডস, জার্মানির কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে সেদেশের দূতাবাস বলিষ্ট ভূমিকা রাখছে আমাদের দেশে। আমরা জানিনা আমাদের দেশের ফরেন মিশন এক্ষেত্রে কতটুকু সফল।

ব্যাবসা সহজ করা দরকার। সরকারকে দেশের ব্যাবসায়ীদের পক্ষে অন্য দেশের মত প্রভাব রাখা দরকার। এদেশে প্রযুক্তি খাত, গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যাল খাত সহ অনেক খাতে অনেক কোম্পানি আছে যাদের যোগ্যতা আছে গ্লোবাল প্লেয়ার হবার। সময় এখন রক্ষণশীল চিন্তা থেকে বের হয়ে এসে বিশ্বায়নের সুযোগ কাজে লাগানো। কারন আমরা সুযোগ কাজে লাগাতে দেরি করতে পারি, কিন্তু আমাদের প্রতিযোগীরা কিন্তু বসে নেই। এই প্রতিযোগীতার যুদ্ধে বাংলাদেশ ভিত্তিক কোম্পানিগুলি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে রুপ নিক সেই আশা করি।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার…

January 6, 2024

এমনটা কেনো করলেন এ. আর রহমান?

হিরো আলম রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়ার পর সারা দেশে হইচই শুরু হয়ে যায়। এমনকি ওই প্রতিবাদের…

November 12, 2023

ন্যানোমিটার সেমিকন্ডাক্টর বা চীপ তৈরিতে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে চীন

বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সেমিকন্ডাক্টর চিপ নিয়ে বড় ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রেড জায়ান্ট চীন।…

September 25, 2023
Sponsored