“বীরের এ রক্ত স্রোত মাতার এ অশ্রু ধারা, ধূলির ধরায় হলো সারা”

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

“আমার ছেলে একজন বীর, সে বীরের মত মৃত্যুবরণ করেছেন, সে কাপুরুষ নন, সে জাতীয় নায়ক- মেজর(অবঃ) সিনহার মা।

আমার পুত্র দুর্দান্ত অনুপ্রেরণাকারী ছিলেন, আমাদের সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হতেন। সে ছিল সুদর্শন এবং সদা হাস্যোচিত ছেলে যে মানুষকে হাসতে এবং মানুষকে আনন্দিত করতে ভালবাসতেন।

সে সর্বদা অন্যান্য লোকদের খুশী করার জন্য নিবেদিত ছিল। সে আমাকে জিজ্ঞাসা না করেই আমার সবকিছু নিশ্চিত করতো। সে নিশ্চিত করতো যে তার পোস্টিং যেখানেই হোক আমি আরামে থাকি।

সে আমাকে বাড়ির প্রতিটি কাজে সহায়তা করতো। সে সবকিছু প্রস্তুত করে দিত এবং আমাকে সর্বদা সারপ্রাইজ দিত। সে নিজের হাতে আমার ঘরের প্রতিটি কোনা সজ্জিত করেছিল। তাঁর বাবা মারা গেলে আমাদের বাড়িটি একটি দ্বিতল বিল্ডিং ছিল, তবে সে যখন এসএসএফ-এ ছিল (১০ বছরের কর্মজীবনের মধ্যে সে কেবল একবার ঢাকায় ছিল) হাউজ বিল্ডিং লোনের জন্য আবেদন করেছিল এবং আমাদের বাড়িটি অনেক কষ্ট করে একটি চারতলা ভবনে সম্পন্ন করেছিল।

রাতের বেলাও সে নির্মাণ কাজ তদারকি করতো। কারণ বেশিরভাগ সময় ব্যাস্ত থাকার কারণে সে বাড়িতে আসতে পারেনি, এসএসএফের কাজ খুব ব্যস্ততার আর কঠোর নিয়মকানুন।

আমি কখনই আমার পুত্রকে তার ইচ্ছা বা ইচ্ছা থেকে বিরত রাখি নাই। আমি তাকে যা করতে চাইছে তা করতে দিয়েছি। কারণ সে আমাকে যা করতে চাইতো তা বোঝাতে পারত।

সে আমাকে না বুঝিয়ে কখনও কিছু করেনি। সে আমাকে যা যা কিছু মনে আসতো, তা করার অনুমতি নিতে বলতো। সর্বদা তার জন্য ভাল এবং সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এমন যা কিছু সে করতে চাইতো, তা করতে দিয়েছিলাম। সে একজন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে। নিজের দেশকে সে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসতো।

আমার ছেলের ব্যক্তিত্ব ছিল খুব দৃঢ়। সে সমুদ্র পছন্দ করতো, সে সমুদ্র সৈকতের পাশে বই পড়তে সময় দিতে চেয়েছিল। শৈশব থেকেই সে অ্যাডভেঞ্চার পাগল ছিল। বিশ্ব ভ্রমণ করার ইচ্ছা তাঁর ছিল, এ কারণেই সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছিল।

আমি তাকে বাধা দিইনি। তাঁর হিমালয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল, সে হাইকিং পছন্দ করতো, সাইকেল চালিয়ে জাপানে যেতে চেয়েছিল।

অবসর গ্রহণের পরে সে তার ইচ্ছা পূরণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। এর মধ্যে কোভিড প্রাদুর্ভাব শুরু হল। কিছু দিন লকডাউন থাকার পরে, সে আমাকে বলল -আমার বয়স হওয়ায় এখন তার বাইরে আস যাওয়া খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তারপর সে আমাকে বলল যে সে রাজশাহীতে যাবে এবং সেখানে সে কয়েকদিন থাকবে কারণ তাঁর এক বন্ধুর মা (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) একটি বিশাল গ্রন্থাগার স্থাপন করেছে।

ছোটবেলা থেকেই সে প্রচুর বই পড়ত। তাই আমি তাকে অনুমতি দিয়েছিলাম এবং সে সেখানে গিয়ে অনেক বই পড়েছিল। সে প্রায় চার মাস সেখানে ছিল এবং পরবর্তী বিশ্ব ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ভ্রমণের খুব শখ ছিল তাঁর।

সে যখন ইউএন মিশনে গিয়েছিল, ছুটিতে দেশে আসেনি। সে ইউরোপে গিয়েছিল, গাড়ি কিনেছিল, দুইমাসের ছুটিতে কয়েক হাজার মাইল পথ পাড়িদিয়েছিল। আমার খুব ভাল লাগতো কারণ সে তার একটি ইচ্ছা পূরণ করতে পেরেছে।

অবসর নেওয়ার পরে সে প্রতি রাতে আমার মশারিটি ঝুলিয়ে দিত, সে আমার সমস্ত ওষুধগুলি সুন্দরভাবে পৃথক করে রাখতো যাতে আমি বিভ্রান্ত না হই। সে যখনই বাড়ির বাইরে যেত, তখন বাড়ির চাবি কাছে রাখতো, কখনও আমাকে বিরক্ত করতো না।

রাজশাহী থেকে ফিরে এসে সে কয়েকদিন আমার সাথে কাটিয়েছিল। তারপরে আবার আমাকে ডকুমেন্টারি ফিল্মের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলে তাকে প্রায় একমাস কক্সবাজারে থাকতে হবে। আমি তাকে অনুমতি দিয়েছি। সে বিয়ে করেনি, তাই আমি তার স্বাধীনতায় কোনও বিধিনিষেধও রাখিনি। তার জন্মদিন ছিল ২৬ জুলাই। আমি অনলাইনের মাধ্যমে তার হোটেলের ঠিকানায় একটি চকোলেট বক্স পাঠাই।

সে আমাকে ডকুমেন্টারিটি শেষ করতে আরও কিছু দিন প্রয়োজন হওয়ায় তাঁর সাথে ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে কক্সবাজারে যেতে বলে। কিন্তু অসুস্থতার কারণে আমি যেতে পারিনি। ৩১ জুলাই প্রায় রাত ১১ টার দিকে আমি তাকে ফোন করেছিলাম কিন্তু কেউ ফোন তুলছিল না।

অবশেষে পুলিশ আমাকে কল দিয়ে আদনানের (মেজর সিনহার ডাক নাম) মর্মস্পর্শী সংবাদটি দিয়েছিল। আমার ছেলে ‘শহীদ’। বীরের রক্ত এবং মায়ের অশ্রু বৃথা যেতে পারে না। আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুন। “

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার…

January 6, 2024

এমনটা কেনো করলেন এ. আর রহমান?

হিরো আলম রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়ার পর সারা দেশে হইচই শুরু হয়ে যায়। এমনকি ওই প্রতিবাদের…

November 12, 2023

ন্যানোমিটার সেমিকন্ডাক্টর বা চীপ তৈরিতে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে চীন

বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সেমিকন্ডাক্টর চিপ নিয়ে বড় ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রেড জায়ান্ট চীন।…

September 25, 2023
Sponsored