যেসকল করোনা ভাইরাস মূলত মানুষকে সংক্রমিত করছে সেগুলোর শ্রেণিবিভাগ

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

করোনাভাইরাসগুলির মূলত চারটি উপ-শ্রেণী রয়েছে, যা আলফা, বিটা, গামা এবং ডেল্টা নামে পরিচিত।

১৯৬০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে মনুষ্য করোনাভাইরাসগুলি প্রথম সনাক্ত করা হয়েছিল। মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে এমন সাতটি করোনাভাইরাস হ’ল:

সাধারণ মনুষ্য করোনা ভাইরাস :

১. Human coronavirus OC43 (আলফা)
২. Human coronavirus HKU1 (বিটা)
৩. Human coronavirus NL63 (গামা)
৪. Human coronavirus 229E (ডেল্টা)

অন্যান্য মনুষ্য করোনা ভাইরাস যে গুলো পশু-পাখি থেকে মানুষকে সক্রামন করেছে।

৫. SARS-COV (২০০৩ সালে বাদুড় থেকে আসে, উৎপত্তি স্থল চায়না)

৬. MERS-COV (২০১২ সালে উট থেকে আসে, উৎপত্তি স্থল সৌদী আরব)

৭. SARS-CoV-2 (২০১৯ বাদুড় থেকে সাপ, তারপর সাপ থেকে মানুষে, উৎপত্তি স্থল চায়না)

বিশ্বজুড়ে মানুষ সাধারণত প্রথম চারটি দ্বারা সংক্রামিত হয়। আমাদের সাধারণ যে সর্দি কাশি গলাব্যথা হয় তা ওই প্ৰথম চারটির কারণে।

কখনও কখনও করোনাভাইরাস প্রাণীকে সংক্রামিত করে বিকশিত হতে পারে এবং মানুষকে সক্রামন করে অসুস্থ করে তুলতে পারে এবং এভাবে একটি নতুন মনুষ্য করোনা ভাইরাস হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এর সাম্প্রতিক তিনটি উদাহরণ হ’ল:

২০১৯-SARS2-COV,
২০০৩- SARS-COV,
২০১২-MERS-COV।

SARS-COV প্রথম ২০০২-২০০৩ সালে চীনের গুয়াংডংয়ে প্রদেশে আবিষ্কৃত হয় এবং এটি তখন অস্বাভাবিক নিউমোনিয়া হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল, যা কিছু ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী শ্বাস-প্রশ্বাসের বাঁধা সৃষ্টি করেছিল। মারা যাওয়ার হার ছিল ১০ শতাংশ।
এই ভাইরাসটি দ্রুত ২৯ টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে, ৮৫০০ এরও বেশি মানুষ সংক্রামিত হয় এবং প্রায় ৮০০ জন মারা যায়। এই ভাইরাস সক্রামন শুধু পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

MERS-COV মহামারীটি ২০১২ সালে সৌদি আরবে দেখা গিয়েছিল, লক্ষনসমূহ SARS-COV এর মতোই তবে মৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিল। এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার ছিল ৩৪ শতাংশ।
২৭ টি দেশে ২৫০০ মানুষ সক্রোমিত হয়ে ৮৫৪ জন মারা যায়। এই ভাইরাস সক্রামন শুধু সৌদি দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

SARS-CoV2 ঠিক এর বিপরীত, যা দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে আর মৃত্যুর হার এখন পর্যন্ত ১৩ শতাংশ।
১৯০ টা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, ৩ লাখ ৩৯ হাজার মানুষে সক্রোমিত হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা ১৪ হাজার ৭০০। এটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।

করোনাভাইরাসগুলি অসাধারণ আকারে বড় এর RNA জিনোম রয়েছে – প্রায় ২৬০০০ থেকে ৩২০০০ টি। করোনাভাইরাস কণাগুলি একটি খামের মতো একটি চর্বিযুক্ত বহিরাগত স্তর দ্বারা বেষ্টিত থাকে এবং সাধারণত এটি দেখতে সাপের মাথার মুকুট- এর মতো (CROWN) এবং ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের নীচে গোলাকার হিসাবে প্রদর্শিত হয়।

যেভাবে পশু থেকে মানুষ সক্রোমিত হয় :

ডিসেম্বর ২০১৯ এর শুরুর দিকে, SARS এবং MERS-এর মতো অসুস্থতার লক্ষনগুলো প্রথম এক চীনা নাগরিকের শরীরে ধরা পড়ে। চীনের উহান শহরে একটি বড় সামুদ্রিক খাবার এবং পশুর বাজারে।
ধারণাকরা হয় অর্ধ জীবিত এবং অর্ধ পোড়ানো সাপ বা বনরুই জাতীয় মাংস সরাসরি ভক্ষণের মাধমে এটি পশু থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এই ভাইরাসটি মূলত বন্য প্রাণী ( যেমনঃ বনরুই ) এর মধ্যে থাকে। তবে দেখা যাচ্ছে এর গঠনপ্রণালীর ৮০% আগে আবিস্কার হওয়া SARS-COV এর মতো তাই ধারণা করা হচ্ছে এটা প্রথমে বাদুড় থেকে সাপে তারপর কিছুটা বিকশিত হয়ে সাপ থেকে মানুষের মাঝে চলে এসে বর্তমান রূপ লাভ করেছে।
এই ভাইরাসটির ৮০% গঠনপ্রণালী ২০০৩ সালে অবিষ্কৃত হওয়া SARS-COV এর সাথে মিল থাকায় এর নামকরণ করা হয় SARS2-COV এবং এর ফলে যে অসুখ হয় তার নামকরণ করা হয় কোভিড -১৯ বা করোনভাইরাস রোগ ২০১৯।

কোভিড-১৯


চীনা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলি নতুন করোনভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স প্রকাশ করেছে এবং তথ্যগুলি সবার সাথে ভাগ করেছে যাতে অন্যান্য দেশও ভাইরাসটি নিয়ে গবেষণা করতে পারে।

করোনাভাইরাসগুলি তাদের RNA জিনোমের প্রতিলিপি তৈরি করে RNA নির্ভর RNA পলিমেরেস নামক এনজাইমগুলি ব্যবহার করে যা ত্রুটিযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তবে জিনোমিক বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে কোভিড -১৯ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং আরও মারাত্মক হওয়ার পরিবর্তনের সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে।

রোগের লক্ষণসমুহ :

১. হাঁচি
২. কাশি
৩.গলা ব্যথা
৪.শ্বাসকষ্ট

নির্দিষ্ট কোন ওষুধ নেই , শরীরে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এই অসুস্থতা সরিয়ে তুলতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দৈনিক শরীর চর্চা এবং দৈহিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকা আবশ্যক।
ভেষজ উপাদান বহু যুগ থেকে এই অসুস্থতার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে।


উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে গরম পানির সাথে, আদা, রসুন, কাল জীরা, মধু, ভিনেগার, লেবুর রস, গ্রীন টি খেতে হবে এবং দ্রুত স্থানীয় সরকারকে অবহিত করতে হবে। যাদের আলসার আছে তাদের ভিনেগার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

করোনাভাইরাসগুলির জন্য বর্তমানে কোনও ভ্যাকসিন বা নির্দিষ্ট ওষুধের চিকিৎসা নেই, তবে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চলছে এবং কোভিড -১৯ এর লোকদের মধ্যে এইচআইভি এবং ইবোলা ড্রাগগুলি পরীক্ষা করা হচ্ছে।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের…

April 24, 2025

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড"…

February 26, 2025

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের…

December 29, 2024

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024
Sponsored