ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া কিংবা অন্যান্য কাজে যাওয়া বেশিরভাগ বাংলাদেশিই আটকা পড়ে গেছে করোনা ভাইরাস সংক্রমনে। তার মাঝেই একজন হলেন মোহাম্মদ শাহাজাহান। যিদি ঢাকা রূপনগর থানার একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। চিকিৎসার জন্য তিনি মার্চের ৮ তারিখে ভারতে পাড়ি জমান। গত ২০ তারিখে তার চিকিৎসা শেষ হলেও আটকা পড়ে যান তিনি। ২৫ তারিখের টিকিট ও কেটে রেখেছিলেন তিনি।
উনি আরও জানান ওনার মত আশেপাশে হাজারের উপর বাংলাদেশি চিকিৎসা শেষে দেশে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। বেশিরভাগ লোকের কাছেই অর্থ নেই এবং দেশের থেকে টাকা আনানোর ও উপায় নেই। তাই অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে দিন কাটছে তাদের। সরকারের কাছে তিনি অনুরোধ করে বলেন অতিব্দ্রুত যেনো সরকার তাদের ফিরিয়ে নেয় দেশে।
ব্যাঙ্গালুরুর নারায়ানা কার্ডিয়াক সেন্টারে ওপেন হার্ট সার্জারি করিয়েছেন ফেনীর ৫৭ বছর বয়সী মোস্তফা মজুমদার । ছেলে শাহরিয়ার মজুমদারকে নিয়ে সেখানে তিনি আটকা পড়েন। গত ১৮ মার্চ রিলিজ দেয়ার পর ২২ মার্চ টিকিট ছিল ব্যাঙ্গালুরু-ঢাকার। সেটা বাতিল হওয়ায় আবার ২৮ মার্চের টিকিট করেন, কিন্তু ভারতে লকডাউনের পর সেটাও বাতিল হয়েছে। সেখানে একই হোটেলে আরও অনেকে আটকা পড়েছেন। সেখানে আটকে পড়া বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস ও তার ফুফা । তিনি জানান, ভারতের ব্যাঙ্গালুরু শুধু ড. দেবী শেঠীর নারায়ানা হৃদয়ালয় হাসপাতালের আশপাশেই কমপক্ষে দুই থেকে তিনশ বাংলাদেশি ১৪ দিন ধরে এক প্রকার হোম কোয়ারেন্টাইনে। কমপক্ষে আরও ১৯ দিন পুরোপুরি গৃহবন্দি থাকতে হবে। তারপর কী হবে সেটাও জানি না।
তিনি আরও জানান, আটকা পড়া অনেকেরই টাকা-পয়সা শেষ বা শেষের পথে, কেউ কেউ টাকা থাকলেও ঠিকমতো বাজার করতে পারছে না আতঙ্কে। আগামী দিনগুলো কীভাবে থাকবে কী খাবে, কীভাবে দেশে ফিরবে এই চিন্তায় ব্যাকুল। অনেকেই শেষ সম্বল দিয়ে বিমানের টিকিট কেটেছেন, ফ্লাইট বাতিল হলেও টাকা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। বলছে, ফ্লাইট চালু হলে এডজাস্ট করা হবে। টিকিটের টাকাটা ফেরত পেলেও সেটি দিয়ে এই লোকগুলো অন্তত কয়েক দিন বেঁচে থাকতে পারতো। হোটেল মালিকরা যেকোনো মুহূর্তে হোটেল বন্ধ করে দিতে পারে। হোটেল বন্ধ হয়ে গেলে আমাদেরকে এই থাকার জায়গাটুকুও হারাতে হবে। সবসময় ভয়াবহ এক আতঙ্কের মধ্যে আছি আমরা। এর মধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিজয় কৃষ্ণ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এই বিপদগ্রস্ত মানুষদের উদ্ধার করে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন।
সেখানকার মেহবার হোসেন বলেন, ব্যাঙ্গালুরুর নারায়ানা হৃদয়ালয় হাসপাতালে দেখিয়েছিলাম। ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। চিকিৎসার কাজ শেষ হয়েছে গত ২৪ মার্চ। আর খাওয়া-দাওয়ার অবস্থা খুবই করুণ। সব দোকান বন্ধ। ভাত-ডাল খেয়ে দিন কাটাচ্ছে প্রায় সব বাঙালি।
ফাহমিদা তৃপ্তি জানান, তার স্বামী নারায়ানা হৃদয়ালয় হাসপাতালে আছেন। সেখানে ওপেন হার্ট সার্জারি হওয়ার পর মার্চের ১২ তারিখে তাদের চিকিৎসা শেষ হয়েছে। কিন্তু ফিরতে পারছেন না।
বেক্সিমকো ফার্মেসির ফার্মাসিস্ট কামনাশীষ দাশ কিরন বলেন, ‘আমি নারায়ানা হৃদয়ালয় হাসপাতালে আমার বাচ্চার চিকিৎসার জন্য এসেছি। বাচ্চার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। এখন চিকিৎসা শেষ। এখানে আগামী এপ্রিল ১৪ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন করা হয়েছে। সবাই কার্যত এখন ঘরে বন্দি। দোকান, বাজার সব বন্ধ। হাজারের মতো বাংলাদেশি এখানে আটকে আছি। প্রায় সবার চিকিৎসা শেষ। যা টাকা নিয়ে এসেছিলাম তাও শেষ। এতো হোটেল ভাড়া দিয়ে এতদিন থাকা সম্ভব হবে না। তার ওপর খাবার কষ্ট তো আছেই। অজানা-অচেনা জায়গা। তাই আমাদের সবার নিবেদন, যাতে আমাদের দেশে ফেরার সু্যোগ করে দেয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, ভারতে এখন লকডাউন চলছে। দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক বিমান চলাচলও বন্ধ। স্থলবন্দরও বন্ধ। তাই আমরা ইচ্ছা করলেই এখন তাদের ফিরিয়ে আনতে পারছি না। তবে এ ব্যাপারে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছি। অবস্থা দেখে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।