প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত বা মৃত সরকারি চাকরিজীবীদের সনদ তিন ধাপে যাচাই করা হবে। প্রথম ধাপে যাচাই-বাছাই করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর, দ্বিতীয় ধাপে মন্ত্রণালয় বা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যে মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন বা করতেন সেই মন্ত্রণালয় বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। তৃতীয় ধাপে অর্থ মন্ত্রণালয় আবারও সেটি যাচাই-বাছাই করবে। রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি গ্রুপের করোনায় আক্রান্তের ভুয়া সনদ দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসার পর এই কৌশল নেয়া হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেই ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রণোদনা পাবেন কি না, তা নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে । রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি গ্রুপের করোনায় আক্রান্তের ভুয়া সনদ বিষয়টিতে নতুন অনিশ্চয়তা যোগ করেছে। সরকারপ্রধানের ঘোষণা অনুযায়ী সরকারি চাকুরেরা সবাই ক্ষতিপূরণ পাবেন ভেবেছিলেন। তবে এসংক্রান্ত পরিপত্রে এর স্পষ্ট উত্তর মিলছে না। সব মিলে ক্ষতিপূরণ কারা পাবেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তবে করোনা সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়াদের পরিবার দ্রুতই ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে।
তবে ভুয়া সনদ ধরা পড়লে কোনো শাস্তি দেওয়া হবে কি না, তা জানা যায়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ এপ্রিল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য করোনাকালীন প্রণোদনা ঘোষণা করেন। এতে গ্রেড ভেদে আক্রান্ত ও মারা গেলে পাঁচ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবার। করোনায় ক্ষতিপূরণ দিতে সব মিলিয়ে ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের জন্য রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি করোনা মোকাবেলায় যুক্ত ডাক্তার-নার্সদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাকি ৩৫০ কোটি টাকা এ খাতে ব্যয় করা হবে। গত ৯ জুলাই সেই প্রণোদনা দেওয়ার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ বিভাগ।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত করোনাকালীন ক্ষতিপূরণ দিতে গত ২৩ এপ্রিল অর্থ বিভাগ থেকে পরিপত্র জারি করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যসেবাকর্মী, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে লকডাউন ও সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিয়োজিত মাঠ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।’
পরিপত্রে কয়েকটি খাতের সম্মুখযোদ্ধাদের বিষয়ে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী’ও এ সুবিধা পাবেন। তবে এই ‘প্রত্যক্ষভাবে জড়িত’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। ফলে কাদের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ধরা হবে, তা নিয়ে ধন্দে পড়েছে অনেক মন্ত্রণালয়। তারা অর্থ বিভাগে সুপারিশ পাঠানোর আগে বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারছে না।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত রবিবার কয়েকজন সচিবের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে কারা ক্ষতিপূরণ পাবেন, তা নিয়ে আলোচনা হয়। তখন রিজেন্ট ও জেকেজির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ভুয়া সনদ দেওয়ার বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে। সেখানে সাময়িক সিদ্ধান্ত হয়েছে, আপাতত করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আক্রান্তদের বিষয়টি পরে বিবেচনা করা হবে।
শুধু আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দরকার আছে কি না, তা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলে সাধারণ ছুটির সময়টাই (২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে) বিবেচনা করা হবে কি না, তাও আলোচনায় আসে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
একাধিক মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে কেউই নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাঁরা বলেছেন, অর্থ বিভাগের পরিপত্রে অনেক অস্পষ্টতা আছে। ঘোষণায় স্পষ্টতা থাকা উচিত। না হয় পছন্দ অনুযায়ীরা ক্ষতিপূরণ পাবেন, অন্যরা পাবেন না। তখন দুর্নীতির শঙ্কাও থাকবে।
আপাতত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরে জানানো হবে।’
বিষয়ে খুব স্পষ্টভাবে উপকারভোগীদের চিহ্নিত করতে হবে। যাঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন তাঁদের মধ্যে যেন কোনো বৈষম্য না হয়, তা নিশ্চিত করাটাও জরুরি।’