মেহেরপুরের মুজিবনগরে লেখাপড়ার খরচ মেটাতে না পারায় মেয়েদের বাল্যবিয়ের অনুমতি চেয়ে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেছেন নাজমা বেগম নামের এক হতভাগ্য মা। কিন্তু মেয়েরা লেখপাড়া করে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে চান।
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. উসমান গনি তার ফেসবুকে সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যা হুবুহু তুলে ধরা হলো।
মেয়েদের ইচ্ছা পূরণ করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. উসমান গনি তাদের ৮ মাসের লেখাপড়ার খরচ, ইউনিফর্ম কেনার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নাজমা বেগম উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের ভ্যানচালক জমির উদ্দিন।
স্বামী ভ্যান চালক। কিছুটা বাউন্ডালে স্বভাবের হওয়ায় ঠিকমত রোজগার করতে পারেন না। স্বামীর অতি সামান্য আয়ে সংসার যেন চলছেই না। তার উপর তিন মেয়ের লেখাপাড়ার খরচ ও ভরণপোষণ জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই মেয়েদের বিয়ে ছাড়া আর বিকল্প কিছুই চিন্তা করতে পারছে না তিনি। তিনি শুনেছেন বাল্য বিয়ে দিলে জেল হবে। তাই বিয়ের অনুমতি নিতে চার মেয়েসহ আজ আমার অফিসে হাজির হয়েছেন মা। মেয়েরা উপজেলার একটি বালিকা বিদ্যালয়ে বড় মেয়ে ৮ম শ্রেণিতে, মেজ মেয়ে ৭ম শ্রেণিতে, সেজ মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করে এবং ছোট মেয়ে মায়ের কোলে।
মেয়েদের কাছে তাদের ইচ্ছা জানতে চাইলে সকলেই একবাক্যে বলে, তারা লেখাপড়া শিখে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চায়। তাদের মা বলেন, একটু সহযোগিতা পেলে তিনি কখনও মেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ের কথা চিন্তা করতেন না। লেখাপড়া খরচ, পোশাক, স্কুলের ইউনিফর্ম, প্রাইভেট শিক্ষকের বেতন ইত্যাদি খরচ যোগাড় করা এখন অসম্ভব। তিনি আফসোস করে বলেন এসব বিষয়ে একটু সহযোগিতা পেলে তিনি তার মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে অনেক বড় করতেন! তার আফসোস মিটানো হলো।
ফলে শর্ত সাপেক্ষে মেয়েদের ৮ মাসের লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ, পোশাকের খরচ, ইউনিফর্মের খরচ নগদ প্রদান করা হলো। শর্তের অংশ হিসেবে তারা তিন বোন আমাকে কথা দিয়েছে- এখন থেকে আরও ভাল করে পড়ালেখা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে। তাদের মা কথা দিয়েছেন- মেয়েরা লেখাপড়া শিখে বড় না হওয়া পর্যন্ত বিয়ের কথা আর চিন্তাই করবেন না। শর্ত দুটি পূরণ সন্তোষজনক বিবেচিত হলে পরবর্তীতে আরও সহযোগিতা করা হবে। দোয়া করি সকলের ইচ্ছাই পূরণ হোক। মেয়েগুলো অনেক বড় হয়ে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটাক।”