জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ। বিরাট এই উপলক্ষ সামনে রেখে দেশজুড়ে আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। সরকারী ও বেসরকারীভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল অসংখ্য কর্মসূচী। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির কারণে থমকে গেছে সব। একই কারণে অনেকদিন মুজিববর্ষের বড় কোন আয়োজন চোখে পড়েনি। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে গত ১৭ মার্চ মুজিববর্ষের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সূচনা করা হয়। এর পর আর তেমন কোন কর্মসূচী এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে অনেকদিন পর আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশেষ ও বৃহৎ একটি কর্মসূচী। কর্মসূচীর আওতায় সারাদেশে এক কোটি গাছের চারা লাগানো হবে। গণভবন থেকে সরকারী এ উদ্যোগের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ সফল হলে সবুজের ছায়ায় মায়ায় ফুলে ফলে আরও সমৃদ্ধ হবে দেশ। তদুপরি মুজিবর্ষে লাগানো গাছ বঙ্গবন্ধু স্মারক বৃক্ষ হিসেবে আলাদা পরিচিতি পাবে।
জাতির জনকের বৃক্ষপ্রেম ও চিন্তাকে ধারণ করেই নেয়া হয়েছে বর্তমান কর্মসূচী। কর্মসূচী অনুযায়ী, আজ থেকে এক কোটি বৃক্ষরোপণ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী তিনটি চারা রোপণ করে অভিযানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এর পরপরই জেলায় জেলায় থানায় গাছ লাগানো শুরু হবে।
শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বৃক্ষপ্রেমী। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটাকে নতুন করে গড়তে চেয়েছিলেন জাতির জনক। মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন তিনি। আজ জেনে অবাক হতে হয় যে, এই মহাপরিকল্পনা থেকে বাদ যায়নি বৃক্ষরোপণও। অজ¯্র প্রায়োরিটির মধ্যেও দূরদর্শী নেতা গাছ লাগানোর কাজে সময় দিয়েছেন। নিজ হাতে চারা লাগিয়েছিলেন। পরিচর্যা করেছেন। এভাবে বৃক্ষরোপণে সবাইকে উৎসাহিত করেছেন তিনি। শুধু তাই নয় দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযানের সূচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এ উপলক্ষে ১৯৭৪ সালে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান জনগণকে এ কাজে অংশ নেয়ার আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছিলেন। বাণীতে তিনি বলেছিলেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য এই বৃক্ষরোপণ অভিযানের সময় এবং পরে অধিক বৃক্ষরোপণ করে সরকারের প্রচেষ্টাকে সাফল্যম-িত করে তোলা। পরের কথাটি আরও বেশি স্মরণে রাখার মতো। তিনি বলছেন, জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া মুষ্টিমেয় সরকারী কর্মচারীর পক্ষে এ বিরাট দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই আমি দেশের জনপ্রতিনিধি, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, সমাজসেবী ও আপামর জনসাধারণের কাছে আবেদন করছি, তারা যেন নিজেদের এলাকায়-স্কুল, কলেজ, কলকারখানা, রাস্তাঘাট এবং বাড়িঘরের আশপাশে যেখানেই সম্ভব মূল্যবান গাছ লাগান এবং তার পরিচর্যা করে সরকারের এ প্রচেষ্টাকে সফল করে।
উদ্বোধনী দিন প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে একটি করে ফলদ ও ঔষধি চারা রোপণ করা হবে। চলবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে এক কোটি চারা লাগানো সম্পন্ন করা হবে। চারা রোপণ করতে ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির মাধ্যমে বিনামূল্যে এসব চারা বিতরণ করা হবে। কারা বৃক্ষরোপণে সরাসরি অংশ নেবেন? কোন কোন স্থানে লাগানো হবে চারা? উত্তরে জানা যাচ্ছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনের বিপরীতে পাঁচ হাজার করে গাছের চারা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সংসদ সদস্যদের নির্দেশনা অনুসারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে রোপণের জন্য বিতরণ করা হবে।
বুধবার পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন জানান, এক কোটি গাছের চারার মধ্যে ৫০ শতাংশ ফলজ। বাকি ৫০ শতাংশ বনজ, ঔষধি ও শোভাবর্ধণকারী। এসবের বাইরে কোন বিদেশী প্রজাতির গাছের চারা লাগানো হবে না। দেশের প্রতি উপজেলায় ২০ হাজার ৩২৫টি করে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ বিতরণ করা হবে। সে লক্ষ্যে বন বিভাগের নার্সারিগুলোতে চারা উৎপন্ন করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, চারা লাগানোর পাশাপাশি এগুলোর যতœ করতে হবে। একটি চারাও নষ্ট করা যাবে না। সেদিকে নজর রাখা হবে। যে কর্তৃপক্ষ যত চারা লাগবে সেই কর্তৃপক্ষকে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
মুজিববর্ষে বহুবিধ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে। তবে স্থায়ী স্মারক হবে এইসব গাছ। বড় হলে এগুলো পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। তাই বিশেষ কর্মসূচী বাস্তবায়নে দেশের সাধারণ জনগণের সহায়তা চান তিনি।