চাকরি হারানোর প্রতিশোধ নিতে ব্যবসায়ী শাহ মো. তোবারক হোসেনের বাসা থেকে অর্থলুটের পরিকল্পনা করে শাহীন। ডাকাতির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তোবারককে খুন করেন শাহীন ও তার সঙ্গীরা।
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন শান্তিনিকেতন এলাকার ব্যবসায়ী শাহ মো. তোবারক হোসেন হত্যার ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি-পশ্চিম)।
গ্রেপ্তাররা হলেন: মো. গোলাম রাব্বী, বাবুল হোসেন ওরফে বাবু, সোহেল প্রধান, মো. ইমন হোসেন ওরফে হাসান, মো. আলামিন খন্দকার ওরফে রিহান। এসময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, দড়ি ও লুট করে নেওয়া ২ লাখ ৪২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন।
তিনি জানান: বাসার নগদ টাকা লুট করার উদ্দেশ্যেই ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে তোবারকের সাবেক কর্মচারি শাহীন। চাকরি হারানোর প্রতিশোধ নিতে অর্থ লুটের পরিকল্পনা করলেও হত্যার পরিকল্পনা ছিল না তাদের। কিন্তু ডাকাতির সময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাতে মারা যান ব্যবসায়ী তোবারক।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন: মহাখালীর মামা প্লাজার কয়েকটি দোকানের মালিক শাহ মো. তোবারক হোসেন। তার দোকান ও ব্যবসার কিছু অংশ দেখভাল করতো শাহীন ও শিহাব নামে দুই কর্মচারি। ঘুষসহ নানা অভিযোগে শাহীনকে বরখাস্ত করে নতুন কর্মচারি নিয়োগ করে।
‘এরপর থেকে শাহীন প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। তোবারকের প্রতিদ্বন্দ্বিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে। একপর্যায়ে সোহেল নামে এক ক্ষুদে ব্যবসায়ীর সঙ্গে শাহীন বিষয়টি আলোচনা করে। তোবারকের বাসা থেকে টাকা লুটের জন্য ডাকাতির পরিকল্পনা করে তারা। সে অনুযায়ী চাঁদপুরের ৪জন ও কুমিল্লার একজনকে ভাড়া করা হয়’, জানান ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা।
আব্দুল বাতেন বলেন: মোহাম্মদ আলী নামে এক কেয়ারটেকার গত ১০ বছর আগে তোবারকের বাসায় কাজ করতেন। তারই ছেলে সাজিয়ে ইমন হোসেন নামে একজনকে কৌশলে গত ১৭ ডিসেম্বর তোবারকের বাসায় পাঠানো হয়। তোবারকের কাছে নিজেকে হাসান নামে পরিচয় দেন ইমন। অনুরোধের কারণে ইমনকে নিজ বাসাতেই থাকার ব্যবস্থা করেন তোবারক। এই সুযোগে ইমন প্রতিদিনকার বিষয়গুলো মোবাইলে শাহীনকে জানাতেন।
তিনি বলেন: পরিকল্পনা অনুযায়ী রাব্বী বাবু, হৃদয় ও শিহাব ঘটনার আগের দিন বিকেলে চকবাজার থেকে ৬টি ছুরি, স্কচটেপ ও দড়ি কিনেন। সন্ধ্যায় সবাই তোবারকের বাসায় রেকি করে। এরপর তারা ইমন ও রিমনের বাড্ডা নর্দা এলাকার একটি মেসে অবস্থান করে।
‘‘২৫ ডিসেম্বর ভোরে ফজরের নামাজের সময় শান্তিনিকেতনের বাসার নিচে পৌঁছায় তারা। বাসার দারোয়ান গেট খুলে মসজিদে গেলে ইমন নিচে নামে এবং ওই ফ্লাটের ঢোকার গলির মুখ থেকে রাব্বী, বাবু, রিমন, শিহাব ও হৃদয়দের নিয়ে ৪তলার ফ্লাটে নিয়ে রুমে অবস্থান নেয়। শাহিন ও সোহেল বাইরে অবস্থান করে।
ঘুমের মধ্যে ভুক্তভোগী তোবারককে ছুরিকাঘাতে নিস্তেজ হয়ে গেলে এবং সহকারী সাইফুলকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে আলমারিতে থাকা নগদ টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। এরপর নর্দায় মেসে গিয়ে টাকা ভাগবাটোয়ারা করে সবাই চলে যায়।’’
আব্দুল বাতেন জানান: এ ঘটনায় জড়িত শাহিন, শিহাব ও হৃদয় পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে পারলে মোট কতো টাকা লুট করা হয়েছিল তা স্পষ্ট হওয়া যাবে। তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বুধবার ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার শান্তি নিকেতনের একটি ফ্ল্যাটে কলিং বেল বাজিয়ে তোবারক হোসেন (৭০) এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
নিহত তোবারকের মহাখালীতে একটি মার্কেট আছে। তোবারকের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের চর পাড়ে। তিনি শান্তিনিকেতনের একটি ভবনের চারতলায় নিজ ফ্ল্যাটে একা থাকতেন।