দেশজুড়ে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে চলছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) আতংক। প্রত্যেকের মনে এখন শুধু ভয় ‘কখন জানি কি হয়’।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে দেশের সরকার। গৃহীত সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী প্রতিটি বাহিনীর সদস্য। পাশাপাশি আত্ম মানবতার সেবায় মাঠে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী অসংখ্য সংগঠন।
সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে তারা যথাসম্ভব জনসচেতনতা তৈরী ও কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় করোনা প্রতিরোধে অবিরাম ছুটে চলছেন নেত্রকোনা জেলা পুলিশের আলোচিত দুই নারী পুলিশ কর্মকর্তা। তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও ছুটে বেড়াচ্ছেন অবিরত। সৃষ্টি করছেন জনসচেতনতা আর হতদরিদ্রদের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্যসামগ্রী। দেশ রক্ষা ও মানবসেবায় অবিরাম ছুটে চলা এই দুই নারী পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- মোরশেদা খাতুন ও মাহমুদা শারমীন নেলী। পৃথক চারটি থানার দিকনির্দেশনার দায়িত্বে থাকা দুজনই সার্কেল অফিসার।
তাদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোরশেদা খাতুন সামলাচ্ছেন জেলা পুলিশের সদর সার্কেল (নেত্রকোনা মডেল থানা ও পূর্বধলা থানা)।অপরদিকে সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমীন নেলী সামলাচ্ছেন ভারত সীমান্তবর্তী (দুর্গাপুর থানা ও কলমাকান্দা থানা) অর্থাৎ দুর্গাপুর সার্কেল।
করোনা প্রতিরোধে এই চার থানার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন হাটবাজার আর মানুষের বাড়িতে যাচ্ছেন তারা। মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন ও নিশ্চিত করছেন সামাজিক দূরত্ব। পুলিশ সদস্যদের সাথে নিয়ে হাটবাজারে নিজেরাই করছেন মাইকিং এঁকে দিচ্ছেন গোল বৃত্ত। কোথাও কোথাও মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারও বিতরণ করেন তারা ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোরশেদা খাতুন এনএনবি বাংলাকে জানান- করোনা প্রতিরোধে জেলা পুলিশ প্রধানের সার্বিক দিকনির্দেশনা মেনে কাজ করছেন তিনি। শহর-গ্রাম, পাকা আর কাদামাটির সড়ক বলে কোনো কথা নেই। শহর থেকে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি যাওয়া হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করতে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা হচ্ছে। খোঁজ রাখা হচ্ছে হোম কোয়ারান্টাইন কে বা কারা মানছেন আর মানছেন না কারা।
সেসব ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।যতদূর সম্ভব অত্যন্ত নম্র ও বিনয়ের সাথে মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। যেকোনো প্রয়োজনে জনসাধারণকে পুলিশের সহায়তা নিতে বলছেন তিনি। এদিকে সহকারী পুলিশ সুপার (দুর্গাপুর সার্কেল) মাহমুদা শারমীন নেলী এনএনবি বাংলাকে জানান- পুলিশে এসেছেন উপকারী বন্ধু হয়ে সবসময় মানুষের পাশে থাকার জন্য। তাছাড়া মুজিব বর্ষের অঙ্গিকারও ঠিক তাই ‘পুলিশ হবে জনতার’। করোনা থেকে জীবন বাঁচাতে মানুষকে বুঝিয়ে ঘরে পাঠানো হচ্ছে। বাট করোনা আক্রান্তের ভয়কে উপেক্ষা করে বাহিরে থাকছে পুলিশ। এই ত্যাগ হচ্ছে প্রকৃত পুলিশের ধর্ম। নারী এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা সামাজিক দূরত্ব বজায় আর জনসমাগম এড়িয়ে চলার নেই কোনো বিকল্প।
এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করেছে পুলিশ।করোনা প্রতিরোধে কাজ করার পাশাপাশি নাগরিক জরুরি সেবার দিকটিও নজরে রাখছেন বিচক্ষণ পুলিশ কর্মকর্তা নেলী।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আকবর আলী মুনসী এনএনবি বাংলাকে জানান, সারাক্ষণ মাঠে করোনা প্রতিরোধে কাজ করা পুলিশ সদস্যদের খোঁজখবর রাখেন তিনি। কাজ শুরুর আগেই প্রত্যেক পুলিশ সদস্যদের করোনা নিয়ে সচেতন করা হয়। এরই মধ্যে পুলিশ সদস্যদের দেয়া হয়েছে রেনকোট, মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও গামবুট। তারা কাজ করছেন করোনা প্রতিরোধে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে আগত যানবাহনে জীবাণুনাশক স্প্রে করছে পুলিশ সদস্যরা। নেত্রকোনা সদরসহ জেলার দশ থানা পুলিশ সদস্যরাই করোনা প্রতিরোধে সদা তৎপর ভূমিকা পালন করছেন। এভাবে কিছুদিন প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে সতর্ক, সামাজিক দূরত্ব আর পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পারলে এরইমধ্যে করোনা দূর হয়ে যাবে বলে আশা রাখেন জেলার এই পুলিশ প্রধান।