বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব করোনা দুর্যোগের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। করোনা সঙ্কটকাল মুক্ত হওয়ার তেমন নিশ্চিত দিকনির্দেশনা এখন অবধি অনুপস্থিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কঠোর সতর্কবাণী এমন বিপন্ন পরিস্থিতি কবে শেষ হবে তা ধারণা করা মুশকিল। করোনা তার নিরন্তর পথযাত্রায় হরেক রকম উৎসব-আয়োজনকেও অচলায়তনে আবদ্ধ করেছে। সামাজিক দূরত্বের নিয়ম পালন করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুরক্ষাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হয়েছে। ইতোমধ্যে সেভাবেই আমরা পার করেছি পবিত্র রমজান মাস ও পরবর্তীতে ঈদ-উল-ফিতরের মতো ধর্মীয় উৎসব। ঘরে বসে তারাবির নামাজ পড়ার অভ্যাসও আমাদের স্বাভাবিকভাবেই পালন করতে হয়েছে। হাতমেলানো কিংবা কোলাকুলি ছাড়াই ঈদ-উল-ফিতরকে তার মর্যাদা দিতে সচেষ্ট হতে হয়েছে।
যা কোনভাবেই অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমে পালন করা সম্ভব নয়। কোরবানির সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুসলমানদের আর এক ধর্মীয় ব্রত হজ পালন, যা শুধু সৌদি আরবেই সীমাবদ্ধ থাকে না। সারা বিশ্বের লাখ লাখ মুসলমান এই বৃহত্তর গণজমায়েত হজব্রত পালনের মধ্য দিয়ে পবিত্র কাবা শরীফ এবং হযরত মুহম্মদ (সা)-এর রওজা শরীফ দর্শনের প্রতীক্ষায় বছরব্যাপী দিন গুনতে থাকেন। সেখানেও পড়েছে এক ধরনের কঠিন নিষেধাজ্ঞা। শুধু সৌদিতেই যেসব মুসলমান আছেন তারাই মূলত সামাজিক দূরত্ব পালন করে এবার হজ করতে পারবেন। বাংলাদেশেও কোরবানি মানেই এক বিরাট উৎসব। সেখানে পশুর হাট থেকে শুরু করে গরু-ছাগল জবাই দেয়া সবই যেন এক আড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন। তাছাড়া পশুর হাটের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত জাতীয় অর্থনীতির এক বিরাট অংশ। পশু ব্যবসায়ীরা সারা বছর গরু-ছাগল পালন করতে থাকে কোরবানির হাটে বিক্রির বাণিজ্যিক লক্ষ্য নিয়ে। এবারের করোনা সংক্রমণে পশুর হাটের ব্যবসায়ীদের লাভ-ক্ষতির হিসাবও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ফেলে দিয়েছে। সামাজিক দূরত্বকে আমলে নিতে গেলে পশুর হাটে জনসমাগম অনুমোদন করা যায় না। ফলে পশু ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারানোর ঝুঁকিতে আতঙ্কিত। তা ছাড়া এবার চাহিদার তুলনায় পশুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় লোকসানের পাল্লা ইতোমধ্যে ভারি হয়ে আছে। পশু বিক্রি নিয়েও তৈরি হয়েছে এক অজানা আশঙ্কা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে প্রান্তিক পশু খামারিরা। বাংলাদেশে গ্রাম-গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে পশু পালনের নিয়মিত অর্থনৈতিক কর্মযোগ সবসময় চলমান থাকে। সেখান থেকেই উঠে আসে কোরবানির পশুর হাটের পর্যাপ্ত সরবরাহ। সে সব প্রান্তিক খামারি উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। পশুর যথার্থ দাম না পাওয়ার আশঙ্কার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কম সংখ্যক পশু বিক্রির বাড়তি আতঙ্ক। যদি পশুর বিক্রি কমে যায় তাহলে দামের ওপরও পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। অর্থাৎ, পাল্লা দিয়ে মূল্য কমার আশঙ্কাও ঘনীভূত হবে। ফলে লোকসানে পড়বে অগণিত পশু খামারি। ভারত থেকে যদি চোরাই পথে গরু আসে তার লোকসানও গুনতে হবে দেশীয় ব্যবসায়ীদের। কারণ বৈধ পথে এবার ভারত থেকে গরু না আনার সিদ্ধান্ত এসেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। ইতোমধ্যে আবার দেশের অনেক জেলা বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় নতুন বিপত্তি যোগ হয়েছে, যা পশুর হাটকেও বিপন্ন করতে পারে। এসব কিছুর কারণে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি ব্যাহত হলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সামনে।